ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

গোপালগঞ্জে এবার শারদীয়া দুর্গোৎসব হচ্ছে ১২৯২টি পূজামণ্ডপে  

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৪, ১০ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১০:৫১, ১০ অক্টোবর ২০২৩
গোপালগঞ্জে এবার শারদীয়া দুর্গোৎসব হচ্ছে ১২৯২টি পূজামণ্ডপে  

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে গোপালগঞ্জের মন্দিরগুলোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পী ও আযোজকেরা। ইতোমধ্যে খড় ও মাটি দিয়ে শেষ হয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এখন রং তুলির শেষ আঁচড়ে প্রতিমা ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত রয়েছেন শিল্পীরা। 

এ বছর জেলার ৫ উপজেলায় ১২৯২টি পূজামণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। পূজা উদযাপন পরিষদের নেতাদের নিয়ে জেলা পুলিশ প্রস্তুতি সভা করেছে। এতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন পূজামণ্ডপ কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ধর্মীয় পঞ্জিকা মতে, এ বছর দশভুজার আগমন ও গমন দুই-ই হবে ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে। ১৪ অক্টোবর হবে মহালয়া। আগামি ২০ অক্টোবর মহাষষ্ঠী, ২১ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ২২ অক্টোবর মহাষ্টমী, ২৩ অক্টোবর মহানবমী ও ২৪ অক্টোবর বিজয়া দশমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

জেলা শহরের বিভিন্ন মন্দির ঘুরে দেখা গেছে, মন্দিরগুলোতে খঁড় ও মাটি দিয়ে পরম যত্নে গড়ে উঠছে প্রতিমা। এরপর দোঁ-আঁশ মাটির কাজ শেষে এখন রং তুলির টানে প্রতিমাগুলো ফুটিয়ে তুলছেন প্রতিমা শিল্পীরা। নাওয়া-খাওয়া আর ঘুম বাদ দিয়ে কাজ শেষ করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ বছর একেকজন প্রতিমা শিল্পী ৪ থেকে ১২টি করে প্রতিমা তৈরি করেছেন। আর মজুরি নিচ্ছে সর্বনিন্ম ৩০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত। তবে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে চাহিদার তুলায় মজুরি কম পেলেও বাপ দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রাখছেন তারা।

এদিকে, এ বছর জাঁকজমকভাবে পূজা আয়োজন করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আয়োজকেরা। দেবী দুর্গার সাথে লক্ষী, গনেশ, কার্তিক ও সরস্বতির পাশাপাশি ধর্মীয় দৃশ্যপট ফুটিতে তুলতে তৈরি করা হচ্ছে অন্যান্য প্রতিমা। আলোকসজ্জ্বার পাশাপাশি প্রসাদ বিতরণেরও আয়োজন করা হচ্ছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার জন্য স্বেচ্ছাসেবক ও সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে মন্দিরগুলো।

গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসন ও পূজা উদযাপন পরিষদ থেকে জানা গেছে, এ বছর গোপালগঞ্জ জেলায় রেকর্ড ১২৯২টি মন্দিরে দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হবে। যা গত বছরের তুলনায় ১৫টি বেশি। এরমধ্যে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় ৩৪০টি, কোটালীপাড়া উপজেলায় ৩২৫টি, মুকসুদপুর উপজেলায় ২৯৯টি, কাশিয়ানী উপজেলায় ২৩৪টি ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় ৯৪টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রতিমা শিল্পী সন্তোষ ঢালী বলেন, এ বছর আমরা ১২টি প্রতিমা তৈরির কাজ হতে নিয়েছি। ইতোমধ্যে মাটি ও দোঁ-আঁশ মাটির কাজ শেষ হয়েছে। প্রতি প্রতিমা তৈরিতে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা র্রিন্ত মজুরী নিচ্ছি। তবে এখন দ্রব্যমূল্য ও প্রতিমা তৈরির উপকরনের দাম উর্ধ্বগতির কারণে আমাদের কিছুই থাকে না। তারপরেও বাপ-দাদার আদি পেশা টিকিয়ে রাখতে এ কাজ করছি।

প্রতিমা শিল্পী হিমাংশু মন্ডল বলেন, ১২ কাজের মধ্যে ৫টি কাজ শেষ করেছি। এখন একটি প্রতিমার রং-এর কাজ করছি। আরো ৬টি কাজ বাকি রয়েছে। নাওয়া-খাওয়া আর ঘুম বাদ দিয়ে আমাদের দিন রাত কাজ করতে হচ্ছে। পূজার আগেই আমাদের সব কাজ শেষ করতে হবে।

গোপালগঞ্জ শহরের বাজার যুব সংঘের আয়োজক কমিটির সদস্য দিলীপ কুমার সাহা দীপু বলেন, এ বছর উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে। 

দশআনা কালীবাড়ীর পূঁজা আয়োজক কমিটির সদস্য প্রতাপ কুমার হীরা বলেন, এ বছর মহা ধুমধাপমে দুর্গাপূজার আয়োজন হচ্ছে।  

গোপালগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুল হক বলেন, এ বছর জেলায় ২১টি পূজামণ্ডপ বৃদ্ধি পেয়েছে। মণ্ডপে ভক্তদের প্রসাদ বিতরণের নিমিত্তে চাল বরাদ্দের জন্য দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা অধিদপ্তরের কাছে মণ্ডপের তালিকা পাঠানো হয়েছে। চাল বরাদ্দ পাওয়া মাত্র আমরা মন্দির কমিটির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকের মারফত বিতরণ শুরু করবো। 

গোপালগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডা. অসিত কুমার মল্লিক বলেন, এ জেলা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মধন্য গর্বিত জেলা। এ জেলায় মুসলিম, খ্রিস্টান ও সনাতন সম্প্রদায়ের মানুষ শান্তিপূর্ণসহ অবস্থান করছেন। ধার্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সনাতন, মুসলিম ও খ্রিস্ট্রান সম্প্রদায়ের মানুষ কাঁধে কাঁধ মিলেয়ে উৎসব উদযাপন করেন। এখানে উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা অনুষ্ঠিত হয়। তাই প্রতিবছর এ জেলায় পূজার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশা করছি কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই জাঁকজমকভাবে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।

/টিপু/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়