ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

চাঁদপুরে মালেক ও খোরশেদের হোটেল : অনিয়মে সমানে সমান

অমরেশ দত্ত জয়, চাঁদপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫০, ১০ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১২:৫৪, ১০ অক্টোবর ২০২৩
চাঁদপুরে মালেক ও খোরশেদের হোটেল : অনিয়মে সমানে সমান

‘ইলিশের বাড়ি’খ্যাত জেলা চাঁদপুর। লঞ্চ এ জেলার অন্যতম যাতায়াত-মাধ্যম। কিন্তু জেলাসদর লঞ্চঘাটে অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতার উদাহরণ তৈরি করেছেন মালেক এবং খোরশেদ নামে দুই হোটেল মালিক। 

মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) সকালে লঞ্চঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দুটি হোটেলের প্রবেশমুখে হোটেলবয়রা দাঁড়িয়ে আছেন। যাত্রী দেখলেই প্রলোভন দেখিয়ে ভেতরে নেয়ার চেষ্টা করছেন তারা। এ নিয়ে যেন চলছে অলিখিত প্রতিযোগিতা। মজার ব্যাপার দুটি হোটেলের সাইনবোর্ডে লেখা বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের ক্যান্টিন। এতে লঞ্চ টার্মিনাল কর্তৃপক্ষও বিব্রত। কারণ টার্মিনালে একটি হোটেলের অনুমোদন তারা দিতে পারেন। 

তথ্যউপাত্তে দেখা যায়, চাঁদপুরস্থ সিবিএ লাইসেন্সে ২০২২ সালেল ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ ১ বছরের জন্য বিআইডব্লিউটিএ ক্যান্টিন পরিচালনায় ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে দায়িত্ব পান খোরশেদ বেপারী। মেয়াদ অতিবাহিত হওয়ার পরও তিনি হোটেল পরিচালনা করছেন। 

অন্যদিকে উপর মহলে যোগাযোগ করে প্রভাব খাটিয়ে কেন্দ্রীয় সিবিএ’র সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলামের একক স্বাক্ষরে ২০২২ সালের ১ মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি অর্থাৎ ২ বছরের জন্য ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আসেন মালেক বেপারী। কিন্তু মালেক বেপারী কত টাকার বিনিময়ে দায়িত্ব পেয়েছেন তা জানা যায়নি।

তথ্যউপাত্তে আরও দেখা যায়, চাঁদপুরে আধুনিক নৌ-টার্মিনালের কাজ শুরুর আগে ২০১৯ সালে লঞ্চঘাটে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রমে অবকাঠামোগত ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের তালিকা করা হয়। সে সময় লঞ্চঘাটে মালেক বেপারীর ক্যান্টিন থাকায় তালিকায় তার নাম আসে। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ হিসেবে ১৮ লাখ টাকা পান। ফলে হিসাব অনুযায়ী লঞ্চঘাটে দুজনেরই হোটেল পরিচালনা করার কথা নয়। অথচ দুজনেই অদৃশ্য শক্তির বলয়ে প্রকাশ্যে প্রভাব বিস্তার করে ক্যান্টিন পরিচালনা করছেন।

স্থানীয়রা জানান, মালেক বেপারীর হোটেল উচ্ছেদ করার পরেও তিনি আরও বড় পরিসরে নতুন করে হোটেল দিয়ে ব্যবসা করছেন যা অবৈধ। তাদের অভিযোগ সিবিএ চাঁদপুরের আহ্বায়ক সাত্তারকে ম্যানেজ করে তিনি এ কাজ করছেন। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, মালেক বেপারী যে টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিশ্বব্যাংক থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন তারও তদন্ত হওয়া উচিত। কারণ তখন তার হোটেল ছিল বাঁশ ও কাঠ দিয়ে নির্মিত। 

এ বিষয়ে মালেক বেপারী বলেন, ‘আমার ক্যান্টিনের কাগজপত্র ঠিক করাসহ এটি পাইয়ে দেবার কথা বলে বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়েছেন সিবিএ চাঁদপুরের নেতা ছাত্তার। আমি যদি অবৈধভাবে ক্যান্টিন পরিচালনা করি তাহলে পাশের খোরশেদের ক্যান্টিনও অবৈধ। প্রশাসন যদি আমাকে উঠাতে আসে তাহলে পাশেরটাও উঠাতে হবে।’ 

এ দিকে খোরশেদ বেপারী বলেন, ‘আমি যে এক বছরের জন্য ক্যান্টিন পেয়েছিলাম সেই নির্দিষ্ট সময়ে আমাকে এখানে মালেক বেপারী বসতে দেয়নি। আমি মনে করি এই দায় সিবিএ নেতাদের। এখন আমি ক্যান্টিন চালাচ্ছি মাত্র ৩ মাস হলো। আমাকে এখান থেকে উঠালে অন্য কোথায় বাকি ৭ মাস ক্যান্টিন চালাবো সেই জায়গা বুঝিয়ে দিতে হবে।’

সিবিএ চাঁদপুরের আহ্বায়ক মো. ছাত্তার বলেন, ‘আমি মালেক বেপারীর কাছ থেকে টাকা নিয়েছি তাকে প্রমাণ দিতে বলেন। আমি কেন তার টাকা নিতে যাব? সব জেলাতেই লঞ্চঘাটে ১টি ক্যান্টিন পায় সিবিএ স্থানীয় নেতারা। অথচ চাঁদপুরের সিবিএ নেতাদের সাথে আলোচনা না করে কেন্দ্রীয় নেতারা কীভাবে আরেকটি ক্যান্টিন বসানোর অনুমতি দিলো বুঝে আসে না।’

‘মালেক অনেক ধুর্ত’ উল্লেখ করে ছাত্তার বলেন, ‘তিনি ক্যান্টিনের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা পর্যন্ত করেছেন। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাংক থেকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার খবর শুনে মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়ে মোটা দাগে ক্ষতিপূরণ বাগিয়ে নিয়েছেন। অথচ ক্ষতিপূরণ পেয়ও তিনি  ক্যান্টিন না সরিয়ে উল্টো ক্যান্টিন আগের চেয়ে আরও বড় পরিসরে সাজিয়ে ব্যবসা করছেন।’

ক্যান্টিন উচ্ছেদ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএ চাঁদপুরের উপ-পরিচালক শাহাদাত হোসেন বলেন, আমরা দ্রুত লঞ্চঘাটের ক্যান্টিন উচ্ছেদ করবো। কেউ যদি কারো সঙ্গে লেনদেন করার চেষ্টা করে উচ্ছেদ ঠেকাতে চায় তা কোনো কাজে আসবে না। 

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়