ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

নিষেধাজ্ঞায় ত্রাণ সহায়তা পাবে কক্সবাজারের ২৪ হাজার জেলে 

তারেকুর রহমান, কক্সবাজার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৮, ১১ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১৪:২৮, ১১ অক্টোবর ২০২৩
নিষেধাজ্ঞায় ত্রাণ সহায়তা পাবে কক্সবাজারের ২৪ হাজার জেলে 

প্রজনন মৌসুম এবং ইলিশ সুরক্ষায় ১১ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে ২২ দিনের জন্য সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এ দিকে গেল ভরা মৌসুমে আশানুরূপ ইলিশ না-পেয়ে হতাশ জেলে, বোট মালিক ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা তাদের দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।  

জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, মৎস্য সম্পদের উন্নয়নে প্রধান প্রজনন মৌসুম ও ইলিশ সুরক্ষায় ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত টানা ২২ দিন সাগরে মাছ আহরণ বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। নির্দেশ বাস্তাবায়নে কঠোর আইন প্রয়োগের কথাও বলা হয়েছে। তবে এ সময় ক্ষতিগ্রস্ত জেলে পরিবারকে দেওয়া হবে ত্রাণ সহায়তা। 

এই আইন বাস্তবায়ন এবং সঠিকভাবে ত্রাণ সহায়তা প্রদানের লক্ষে ‘মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০২৩’ শিরোনামে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে ৯ অক্টোবর জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

ওই সভায় সিদ্ধান্ত হয় ১১ অক্টোবর রাত ১২টার পর থেকে সাগরে মাছ ধরার সব ট্রলার বন্ধ থাকবে। এ ছাড়া ইলিশ আহরণ, পরিবহণ, মজুদ, বাজারজাত করণ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময় সম্পূর্ণ নিষেধ। নিষেধাজ্ঞার সময় সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ মৎস্য অধিদপ্তর, নৌ-বাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌ-পুলিশসহ অন্যন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঠে থাকবে। এ ছাড়া জেলেদের জন্য বরাদ্দকৃত চাল বিতরণে অনিয়মের খবর পেলে নেওয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা।

কক্সবাজার মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ফিসারিঘাটে গিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এরই মধ্যে প্রায় ৯০ ভাগ মাছ ধরার ট্রলার উপকূলে ফিরে এসেছে। তবে সংসার চালানো নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে দুশ্চিন্তা। মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের জেলে লিয়াকত মিয়া বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ঠিকমতো মাছ আহরণ হয়নি। তার মধ্যে আবার ২২ দিন মাছ ধরা যাবে না।  জানি না সামনের দিনগুলো কি হয়?

আরেক জেলে বেলায়েত হোসেন বলেন, বন্ধের সময় সরকারের পক্ষ থেকে যে চাল দেওয়া হয় তা পর্যাপ্ত নয়। তার মধ্যে এই চাল বিতরণ নিয়ে হয় দুর্নীতি। এ সময় সংসার চালাতে খুব কষ্ট হয়। দিনমজুরী করে কোনোভাবে জীবনযাপন করতে হয়।

জেলেদের প্রতি আরো আন্তরিক হওয়া উচিত বলে দাবি করেন বেলায়েত হোসেন। 

ফিসারি ঘাটের মাছ ব্যবসায়ী সৈয়দ আলম বলেন, ধারদেনা করে ব্যবসা করছি। সাগরে ইলিশ মাছ পড়লেও বৈরী আবহাওয়ার কারণে সুবিধা করতে পারিনি। এ অবস্থায় ব্যবসায় লাভ তো দূরের কথা দেনা শোধরাতে পারব কিনা সন্দেহ আছে। 

কক্সবাজার জেলা ফিসিং বোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, গেল ৬৫ দিন অবরোধের পর জেলেরা প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ পায়নি। এর বড় কারণ ছিল বৈরী আবহাওয়া। এ কারণে জেলেদের যথাযথ সহায়তা প্রদান করা উচিত। বিদেশি মাছ ধরার জাহাজ দেশের সমুদ্রসীমায় আসতে না দেওয়াসহ জলদস্যু মুক্ত নিরাপদ সাগর নিশ্চিত করার কথাও বলেন তিনি। 

কক্সবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ বদরুজ্জামান জানান, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায় মৌসুমের এ সময়ে ইলিশ বেশি পরিমাণে ডিম ছাড়ে। তাই এ সময় সমুদ্র ফ্রি রাখতে হবে। তাহলে পরবর্তী বছর অধিক পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যাবে।

এ সময় বেকার হয়ে যাওয়া ২৪ হাজার ৪০ জেলে পরিবারকে ৬০২ মেট্রিকটন চাল বিতরণ করা হবে বলেও জানান তিনি। । 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়