বগুড়ায় হুদহুদ পাখি উদ্ধার

বগুড়ার শেরপুরে বিরল প্রজাতির একটি হুদহুদ পাখি উদ্ধার করেছে স্থানীয়রা। বৃহস্পতিবার (১২ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার সীমাবাড়ী ইউনিয়নের কালিয়াকৈর গ্রামের ফসলি থেকে পাখিটি উদ্ধার করা হয়। পাখিটি ওই মাঠে অসুস্থ অবস্থায় খুড়িয়ে খুড়িয়ে হাঁটছিল।

আব্দুল কাদের শেখ নামের এক ব্যক্তি পাখিটিকে খুড়িয়ে চলতে দেখে তার কাছে যায়। পাখিটি তাকে দেখে উড়তে চেষ্টা করেও পারছিল না। পরে পাখিটিকে ধরেন। এরপর জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি সংরক্ষণ নিয়ে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী বেসরকারি সংগঠন স্বাধীন জীবন-এর কর্মীদের খবর দেন। খবর পেয়ে সংগঠনের নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক নাছিমসহ তার সংগঠনের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পাখিটিকে হেফাজতে নেন।

পাখিটি সম্পর্কে বিভিন্ন মাধ্যমে বলা হয়েছে, হুদহুদ পাখি বসবাসের জন্য মরুভূমি-লাগোয়া এলাকা পছন্দ তাদের। তবে নির্জন নদীর পাড়, আবাদি ও পতিত জমি, খোলা শুকনো মাঠেও বেশ বিচরণ করে ওই পাখি। হুদহুদ পাখি আকারে ছোট হয়। সর্বোচ্চ ২৫ থেকে ৩২ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। বিভিন্ন ফল ছাড়াও কাস্তের মতো বাঁকা কালচে ঠোঁট মাঠের গর্তে ঢুকিয়ে় পোকামাকড় বের করে খায়। তাই ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে ফেলে বলে ফসলের জন্য উপকারী পাখি মনে করা হয় হুদহুদকে। এই পাখির প্রজনন মৌসুম মার্চ থেকে জুন। বাসা বানিয়ে ডিম দেয়় ৪-৫টি। স্ত্রী পাখির ডিমে ১৮-২০ দিন তা দিযে বাচ্চা ফোটায় বলে বিভিন্ন গ্রন্থে পাওয়া যায়।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, পাখিটি শরীর বাদামি রঙের। ডানা ও লেজে সাদা ও কালো দাগ। কালচে দীঘল ঠোঁট কিছুটা বাঁকা। মাথায় সুন্দর হলদেটে ঝুঁটি। বাদামি পালকের মাথায় কালো রঙ। কিছুটা পরিচর্যার পরই বিরল প্রজাতির পাখিটি সুস্থ হয়ে উঠছে।

‘স্বাধীন জীবন’ নির্বাহী পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক নাছিম বলেন, তারা পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারেন, জমিতে কীটনাশক প্রয়োগের প্রভাবে পাখিটি ভীষণ দুর্বল হয়ে পড়ায় এমন অবস্থা হয়েছে। উদ্ধারের পর পাখিটিকে সেবা শুশ্রুষা দেওয়া হচ্ছে। সুস্থ ও স্বাভাবিক হলে অবমুক্ত করা হবে। তিনি আরও বলেন, জমিতে যখন-ইচ্ছে তখনই নানারকম কীটনাশক প্রয়োগ করা হয়। ফলে পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। সেইসঙ্গে ধ্বংস হচ্ছে জীববৈচিত্র্য ও প্রকৃতি। এই নান্দনিক পাখিটি এলাকায় কালেভদ্রে দেখা মেলে বলে মন্তব্য করেন।

নাছিম বলেন, আরব দেশগুলোতে এই পাখি হুদহুদ নামে পরিচিত হলেও বাংলাদেশে ‘মোহনচূড়া’ হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি দেশের জাতীয় পাখিও এটি।