যবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ, কমিটি স্থগিত

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) শনিবার (১৪ অক্টোবর) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতিসহ দুইজন। সংঘর্ষের প্রতিবাদে সন্ধ্যায় যশোর-চৌগাছা সড়ক অবরোধ করে যানচলাচল বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। 

এদিকে, আজ যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি  সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আফিস ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আজ ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশের আয়োজ করে ছাত্রলীগের একাংশ। সমাবেশ শেষ হলে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নির্দেশে তার অনুসারীরা সমাবেশকারীদের ওপর হামলা করে। এসময় যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল মামুন সিমন ও আশরাফুল আলম আহত হন। পরে বিকেল ৫টার দিকে আহতদের যশোর জেনারেল হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। 

যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার পক্ষের কর্মীরা জানান, আল মামুন সিমনের লোকজন সভাপতিকে না জানিয়ে ক্যাম্পাসে আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশের আয়োজন করেন। এর কারণ জানতে গেলে সমাবেশকারীরা হামলা চালায়। এতে আমাদের আশরাফুল আলমসহ কয়েকজন আহত হন। এমন কি আহতদের হাসপাতালে নেয়ার সময় তারা অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখে। এতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ক্যাম্পাসে মারামারির ঘটনার প্রতিবাদে সন্ধ্যা ৬টার দিকে যশোর-চৌগাছা সড়ক অবরোধ শুরু করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ফলে সড়কটিতে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে রাত ৮টার দিকে যবিপ্রবি'র ভাইস চ্যান্সেলর (ভিসি) অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ও পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে নেন। 

যশোর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) বেলাল হোসাইন বলেন, একটি অনুষ্ঠান ঘিরে ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে কথা কাটিকাটি হয়। এক পর্যায়ে তারা সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনায় দুই পক্ষেরই কমবেশি কয়েকজন আহত হয়েছেন। ঘটনার পরে কিছুক্ষণের জন্য যশোর-চৌগাছা আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সড়কটিতে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। এই ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি।

যবিপ্রবি’র ভিসি অধ্যাপক ড.আনোয়ার হোসেন জানান, ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে তা হবে না। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের বিষয়টি জানানো হয়েছে। স্থানীয় সাংসদ সদস্য ও রিজেন্ট বোর্ডের মেম্বর কাজী নাবিল আহমেদ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জানানো হয়েছে। 

এদিকে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। শনিবার বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি  সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আফিস ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রেক্ষিতে সংগঠনবিরোধী, শৃংখলা পরিপন্থী ও সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুন্ন হয় এমন কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হলো। একই সঙ্গে কেন পরবর্তী সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তার লিখিত জবাব আগামী ৭ দিনের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সেলে জমা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তিতে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ঘটনা উল্লেখ করেনি। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা জানিয়েছেন, শনিবার ক্যাম্পাসে ‘সরকারের উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশকারীদের’ উপর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি সোহেল রানার অনুসারীরা হামলা চালিয়েছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এই ঘটনার জেরে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে।

যবিপ্রবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইকরামুল কবির দ্বীপ সাংবাদিকদের জানান, শনিবার দুপুরে যবিপ্রবি ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উন্নয়ন ও শান্তি সমাবেশ করে। কিন্তু সমাবেশ শেষ হলে ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানার নির্দেশে তার অনুসারীরা সমাবেশকারীদের ওপর হামলা করে।

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ৩১ জুলাই রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের মো. সোহেল রানাকে সভাপতি ও পরিবেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের তানভীর ফয়সালকে সাধারণ সম্পাদক করে ১১ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত ঘটনায় ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠে।