ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

যবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, এক শিক্ষার্থী বহিষ্কার

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৪৪, ১৫ অক্টোবর ২০২৩  
যবিপ্রবিতে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, এক শিক্ষার্থী বহিষ্কার

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএম সোহেল রানা নামে গণিত বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অস্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে।

রোববার (১৫ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ পদক্ষেপ নিয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আনোয়ার হোসেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে (যবিপ্রবি) ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে ১২ জন আহত হন। তাদের মধ্যে তিনজন সাধারণ শিক্ষার্থীও আছেন। ওই শিক্ষার্থীরা বিচার চেয়ে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আবেদন করেন। এর ভিত্তিতে উপাচার্য ড. আনোয়ার হোসেন দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

দুটি কমিটির মধ্যে একটি ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ মারামারি ও অপরটি সাধারণ শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়ে তদন্ত করে আগামী সাত কার্য দিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করবে।

ছাত্রলীগের মারামারি তদন্তের জন্য গঠিত কমিটির আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন বোর্ডের সদস্য ড. সৈয়দ গালিব হাসান ও সদস্য মার্কেটিং বিভাগের চেয়ারম্যান মেহেদী আল ইমরান হাসান। 

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা তদন্তে গঠিত কমিটির প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিওথেরাপি বিভাগের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া ইসলাম। এই কমিটির সদস্য সচিব সহকারী প্রক্টর তানভীর হোসেন ও সদস্য আরেক সহকারী প্রক্টর এস এম মনিরুল ইসলাম।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় গণিত বিভাগের ২০১৭-২০১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সোহেল রানাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং তাকে ক্যাম্পাসে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। সোহেল রানা এর আগে ক্যাম্পাসের শহিদ মশিউর রহমান ছাত্র হল থেকে বহিস্কৃত হন। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত শনিবারে ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় গঠন করা দুটি কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িত থাকার অভিযোগে তাৎক্ষণিকভাবে এক শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে।’

ছাত্রলীগের কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দুপুরে ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল মামুন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান ও এস এম ইকরামুল কবিরের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে মৌলবাদবিরোধী একটি মিছিল শুরু হয়। এতে অংশ নেন শহিদ মশিউর রহমান হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বিপ্লব দে, শেখ হাসিনা ছাত্রী হল ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হুমায়ারা আজমিরাসহ অন্যরা। মিছিল শেষে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সমাবেশ করেন। সমাবেশ শেষে বেলা পৌনে ৩টার দিকে আল মামুনসহ নেতা-কর্মীরা শহিদ মশিউর রহমান ছাত্র হলে প্রবেশের চেষ্টা করেন। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি সোহেল রানা ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সালের কর্মীরা হল থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে তাদের ধাওয়া করে। তারা আল মামুনকে মারধর করেন। মামুনকে মারধর করতে দেখে তাদের সমর্থক আশরাফুল আলম তার মুঠোফোন বের করে ভিডিও ধারণ করতে থাকেন। তা দেখে ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা আশরাফুলকেও মারধর করেন। একপর্যায়ে মামুন ও আশরাফুলকে উদ্ধার করে পুলিশি পাহারায় যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় সাধারণ শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম ও জামিল খান আহত হন।

শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি আল মামুন বলেন, ‘আমরা ক্যাম্পাসে মৌলবাদবিরোধী মিছিল ও সমাবেশ করতে গেলে সোহেল রানা ও তানভীর ফয়সালের অনুসারী ছাত্রলীগের কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের ওপরে হামলা করে। তারা আমাকে এলোপাতাড়ি মারতে শুরু করে।’

সোহেল রানা বলেন, ‘ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি গঠনের পর সহ-সভাপতি আল মামুন প্রথম ক্যাম্পাসে আসেন। তিনি বহিরাগত কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে হলে প্রবেশের সময় তাদের এক কর্মী নৃপেন্দ্রনাথকে মারধর করেন। পরে ছাত্রলীগের কর্মীরা তাদের ধাওয়া দেন। এতে কয়েকজন আহত হয়।’ 

নৃপেন্দ্রনাথ রায় জানান, হলে রান্না শেষ না হওয়ায় বাইরে খেতে যাচ্ছিলেন। তখন বিপ্লব দে ও আল মামুন দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে এসে তাকে থামিয়ে বলেন, ‘তুমি তো দূর থেকে এসে খুব রাজনীতি করছ।’ তারপর তিনি (নৃপেন্দ্রনাথ) একটু তর্কাতর্কি করেছেন। একপর্যায়ে তারা চড়-থাপ্পড় মারেন। তিনি থামাতে গেলে পাশে থাকা ইট দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। তারপর তিনি দৌঁড়ে হলে গিয়ে বড় ভাইদের ডাকেন।

এদিকে এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিত করা হয়েছে। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার রাত ৮টার দিকে এ তথ্য জানানো হয়।

রিটন/ফয়সাল


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়