ঢাকা     রোববার   ০৭ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৩ ১৪৩১

মাদারীপুরে কলেজ কক্ষে পুলিশ ক্যাম্প, ব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম

বেলাল রিজভী, মাদারীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:৫৪, ১৭ অক্টোবর ২০২৩  
মাদারীপুরে কলেজ কক্ষে পুলিশ ক্যাম্প, ব্যাহত শিক্ষা কার্যক্রম

মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কদমবাড়ী ইউনিয়নের আড়য়াকান্দির একটি কলেজে ২০১৬ সালের শেষের দিকে সাত দিনের অনুমতি নিয়ে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। এরপর সাত বছর পেরিয়ে গেলেও সেই ক্যাম্প সরায়নি পুলিশ। কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, পুলিশ থাকার কারণে কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি হয় না। পুলিশের ভয়ে আসে না শিক্ষার্থীরা। জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও জেলা শিক্ষা দপ্তরে ধন্যা দিয়েও মেলেনি সমাধান। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে একসময় কলেজটির নাম মুছে যাবে চিরতরে। 

পুলিশের ভাষ্য, কলেজটিতে শিক্ষার্থী না থাকার কারণে পুলিশের ক্যাম্পটি এখনো রাখা হয়েছে। ক্যাম্প সরানোর সিদ্ধান্ত নিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষর সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান দেওয়া হবে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আড়য়াকান্দিতে ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় পল্লীশ্রী টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ। শুরুতে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে কলেজটি। এক সময় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল কলেজটিতে, ছিল হোস্টেলও। সুনাম কুড়িয়ে কারিগরি শিক্ষায় অবদান রাখতে শুরু করে কলেজটি। ২০১৬ সালের শেষের দিকে স্থানীয় রাজনীতির কারণে দুই পক্ষের তুমুল দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। দুই পক্ষের সংঘাত ঠেকাতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। তখন পুলিশদের থাকার ব্যবস্থা করতে কলেজটিকে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কলেজের অধ্যক্ষকে বলা হয়, চলমান সঙ্কট নিরসনের পরেই সরিয়ে নেওয়া হবে পুলিশ। সেই থেকে কলেজে স্থাপন করা হয় পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্প। কলেজে বিগত দিনে যে পরিমাণ বিদ্যুৎ বিল প্রদান করা হতো ক্যাম্প হওয়ার পরে তা কয়েকগুণ বেড়ে যায়। সেই বিলও গুণতে হয় কলেজ কর্তৃপক্ষকে বছরের পর বছর ধরে। বহু চেষ্টা করেও পুলিশ ক্যাম্প সরাতে পারনি কলেজ কর্তৃপক্ষ। পুলিশ সদস্য থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেন না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় ক্যাম্পটি। এছাড়া বিভিন্ন কারণে প্রতি বছরই শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমতে থাকে কলেজে। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১৫ জনে। 

টুম্পা নামে এক শিক্ষার্থী জানান, কলেজে ক্লাস করার মতো কোনো পরিবেশ নেই। পুলিশ সদস্যরা ঘোরাফেরা করে ও মাতামাতি করে। মেয়েদেরকে শুনতে হয় বিভিন্ন ধরনের কথা। কলেজে শিক্ষার পরিবেশ করে দিতে সরকারের কাছে দাবি জানাই।

কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রবীন মন্ডল বলেন, এক সপ্তাহের কথা বলে কলেজে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। সাত বছর হয়ে গেলেও ক্যাম্প সরানোর নাম নেই। সংশ্লিষ্ট সব দপ্তরে লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো সমাধান পাওয়া যায়নি। অনুকূল পরিবেশ না থাকার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে ১৫ জনে দাঁড়িয়েছে। কলেজটি এখন ধ্বংসের পথে। সরকারের কাছে দাবি জানাই প্রতিষ্ঠানটি রক্ষায় দ্রুত যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। 

সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) সভাপতি ইয়াকুব খান শিশির বলেন, বিষয়টি দুঃখজনক। পুলিশ সদস্যদের থাকার জন্য অন্য কোনো জায়গার ব্যবস্থা করা যেতে পারতো । শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি যেন ধ্বংস হয়ে না যায় তার জন্য প্রশানসনের সচেতন হওয়া উচিৎ। দ্রুত তাদের এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। 

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিবচর ও রাজৈর সার্কেল) রাব্বি হোসেন জানান, তিনি ক্যাম্পটি পরিদর্শন করেছেন। কলেজটিতে শিক্ষার্থী না থাকায় ক্যাম্প এতোদিন রাখা হয়েছে। ক্যাম্প সরানোর সিদ্ধান্ত নিতে যথাযথ কর্তৃপক্ষর সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান দেওয়া হবে।

মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম জানান, কোনো লিখিত অভিযোগ তার হাতে আসেনি। যেহেতু বিষয়টি নিয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের আপত্তি আছে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এলাকার মানুষ বা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হোক তা তারা চান না।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মারুফুর রশীদ খান জানান, বিষয়টি তার জানা ছিল না। তিনি যোগদানের পরে কেউ বিষয়টি নিয়ে তার কাছে আসেননি। কলেজ কর্তৃপক্ষ সহযোগীতা চাইলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। 

মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়