ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

ইটভাটার আগুনে পুড়ে গেছে ১৮ বিঘা জমির আমন

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:০১, ১৮ অক্টোবর ২০২৩  
ইটভাটার আগুনে পুড়ে গেছে ১৮ বিঘা জমির আমন

ঢাকার ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের গোয়ালদী গ্রামের কৃষক আনিসুর রহমান (৫০) ধারদেনা করে এ বছর ৫০ শতাংশ জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছেন। তার আশা ছিল, এই জমির ধান দিয়েই তার চার সদস্যের পরিবারের সারা বছর পার হয়ে যাবে। কিন্তু ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের আগুনে পুড়ে গেছে তার সব ধান। এখন কীভাবে পরিশোধ করবেন ঋণের টাকা, আর কীভাবেই চলবে তার পরিবার- এ আক্ষেপ নিয়ে বুধবার সকালে পুড়ে যাওয়া ধান ক্ষেতের পাশে বিলাপ করছিলেন কৃষক আনিসুর রহমান। 

শুধু তিনিই নন, তার মতো ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের গোয়ালদী গ্রামের আব্দুল আহাদ বাবু, দারোগ আলী, কবির হোসেন, ডাউটিয়া  গ্রামের ওয়ারেছ আলী, আব্দুল মোন্নাফ, কালামপুর গ্রামের মোস্তাক হোসেন, আব্দুল মান্নানসহ কয়েকজন কৃষকের ১৮ বিঘা জমির আমন ধানক্ষেত ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়া ও গ্যাসের আগুনে পুড়ে গেছে। ক্ষতিপূরণের দাবি জানিয়ে কৃষকদের পক্ষে আব্দুল আহাদ বাবু নামে একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
 
বুধবার সকালে সরেজমিনে গেলে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলেন, ধামরাইয়ের সোমভাগ ইউনিয়নের ডাউটিয়া এলাকায় এক, দুই ও তিন ফসলি জমিতে সাতটি ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এরমধ্যে ইউএসএ নামে একটি ইটভাটায় গত এক মাস আগেই ইট পোড়ানো শুরু হয়। গত দশ দিন আগে টানা চার-পাঁচ দিন বৃষ্টির ফলে ইটভাটার চুল্লির আগুন হঠাৎ বন্ধ করে বিষাক্ত গ্যাস ছেড়ে দেওয়া হয়। এরপরই এলাকার বাতাস উত্তপ্ত হয়ে যায়। ওই গরম বাতাস যে দিক দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সেই অংশের ধানক্ষেতই পুড়ে গেছে। এতে ডাউটিয়া, কালামপুর ও গোয়ালদী গ্রামের কৃষকের প্রায় ১৮ বিঘা জমির আমন ধানক্ষেত পুড়ে গেছে। এখন শুধুই ধানের শীষে চিটা দুলছে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, গোয়ালদী গ্রামের আব্দুল আহাদ বাবুর ৮০ শতাংশ, আনিসুর রহমানের ৫০ শতাংশ, দারোগ আলীর ১০ শতাংশ, কবির হোসেনের ২০ শতাংশ, ডাউটিয়া  গ্রামের ওয়ারেছ আলীর ৩০ শতাংশ, আব্দুল মোন্নাফের ৬০ শতাংশ, কালামপুর গ্রামের মোস্তাক হোসেনের ১০০ শতাংশ ও আব্দুল মান্নানের ১০০ শতাংশ জমির আমন ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। 

গোয়ালদী গ্রামের কৃষক ও সেচ পাম্পের মালিক দারোগ আলী বলেন, আমার প্রজেক্টে ৩০ বিঘা জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১৮ বিঘা জমির ধানই ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের আগুনে পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এখন যদি ক্ষতিপূরণ না পাই তাহলে পথে বসা ছাড়া উপায় থাকবে না।

আব্দুল আহাদ বাবু জানান, তিনি ৮০ শতাংশ জমিতে এবার আমন ধান চাষ করেছেন। ধানের গাছগুলো খুব সুন্দর হয়েছে। আর দুই সপ্তাহ পার হলেই ধান কাটার উপযোগী হতো। তার আগেই ইটভাটার বিষাক্ত গ্যাসের আগুনে তাপের কারণে সব ধান পুড়ে চিটা হয়ে গেছে।

কৃষকরা আরও জানান,গত দুই বছর আগেও ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় তাদের এলাকার প্রায় ৫০ বিঘা জমির বোরো ধান, ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসল পুড়ে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

এ বিষয়ে ইউএসএ ব্রিকসের মালিক নাজমা বেগম বলেন, আমার ভাটার কারণে কোনও ধানক্ষেত নষ্ট হয়নি। আমার ভাটার পাশে আরও ইটভাটা আছে, সেই ভাটার কারণেও হতে পারে। এ ছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত কোনও কৃষক আমার কাছে আসেনি।

এ বিষয়ে ধামরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসাইন মোহাম্মদ হাই জকী বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত সময়ে উপজেলা কৃষি অফিসারকে পাঠিয়ে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরিফুল ইসলাম/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়