ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

গাজীপুরের হাট-বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগে সয়লাব

রেজাউল করিম, গাজীপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:২৩, ১৮ অক্টোবর ২০২৩  
গাজীপুরের হাট-বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগে সয়লাব

পরিবেশ সুরক্ষায় পলিথিন ব্যবহার ও উৎপাদন বন্ধের জন্য বিভিন্ন আইন করা হলেও নেই যথাযথ প্রয়োগ। মহানগরীর জয়দেবপুর, চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাজারসহ সবকটি উপজেলার বাজারগুলোতে পরিবেশ দূষণকারী নিষিদ্ধ পলিথিনের শপিং ব্যাগ বিক্রি ও ব্যবহার বেড়ে গেছে।

হাট-বাজারগুলোতে এখন নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের ছড়াছড়ি। আইন করে পরিবেশ দূষণকারী পলিথিনের শপিং ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হলে বেশ কিছুদিন এর ব্যবহার ও বিক্রি বন্ধ ছিল। কিন্তু ফের পলিথিনের শপিং ব্যাগে এলাকা সয়লাব হয়ে গেছে।

বাংলাদেশের পরিবেশ সুরক্ষায় পলিথিন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ২০০২ সালে। ওই বছর আইন করে পলিথিন উৎপাদন, বিক্রয়, বিপণন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, যা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (সংশোধিত) ২০০২ নামে পরিচিত। ওই আইনে বলা হয়েছে, ‘পলিথিন ব্যাগ বিক্রয়, প্রদর্শন, মজুত ও বাণিজ্যিকভাবে বিতরণ করা যাবে না। আইন অমান্য করে পলিথিন উৎপাদন করলে ১০ বছরের জেল ও ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এ ছাড়া, যারা বাজারজাত করবে তাদের ৬ মাসের জেল ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে।’

বিশ্লেষকদের মতে, পরিবেশ সুরক্ষায় পলিথিন বন্ধ করতে যে আইন করা হয়েছে তা কার্যকর হচ্ছে না। বাজারে প্রকাশ্যে পলিথিন ব্যবহার হলেও, এটি বন্ধে এই আইনের তেমন প্রয়োগ নেই।

বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি মো. মনির হোসেন বলেন, পলিথিনের ব্যাগ একবার ব্যবহার করেই ফেলে দেওয়া হয়। যার ফলে ড্রেন ও সুয়ারেজ, নালা-নর্দমা, খাল, ডোবা ভরাট হয়ে যাওয়ায় পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়। এই কারণে কিছুদিন আগের টানা বৃষ্টিতে গাজীপুর শহরসহ আশপাশের এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। তাই পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার দ্রুত বন্ধ করা প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, পলিথিন মোড়ানো গরম খাবার খেলে মানুষের ক্যান্সার ও চর্মরোগের সংক্রমণ হতে পারে। পলিথিনে মাছ ও মাংস প্যাকিং করলে তাতে অবায়বীয় ব্যাকটেরিয়ার সৃষ্টি হয়, যা দ্রুত পচনে সহায়তা করে। পলিথিন থেকে সৃষ্ট ব্যাকটেরিয়া ত্বকের বিভিন্ন রোগের জন্ম দেয়, যা থেকে এমনকি ডায়রিয়া ও আমাশয় হতে পারে।

পরিবেশবিদ আসাদুল ইসলাম বলেন, উজ্জ্বল রঙের পলিথিনে রয়েছে সীসা ও ক্যাডমিয়াম, যার সংস্পর্শে শিশুদের দৈহিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত ও চর্ম-প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এ ছাড়া, পলিথিন অপচনশীল পদার্থ হওয়ায় দীর্ঘদিন প্রকৃতিতে অবিকৃত অবস্থায় থেকে মাটিতে সূর্যালোক, পানি ও অন্যান্য উপাদান প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। পচে না বলে মাটির উর্বরতা শক্তি কমে যায় ও উপকারী ব্যাকটেরিয়া বিস্তারে বাধা তৈরি করে।

পলিথিন ব্যবহারকারী কয়েকজন জানান, এখন বাজারগুলোতে কোন কিছু কেনার পর দোকানিরা পলিথিন ব্যাগে তা ভরে দিচ্ছেন। পলিথিনের বিকল্প কোনও ব্যাগ তেমনভাবে হাট-বাজারগুলোতে পাওয়া যায় না। যার কারণে পলিথিনের শপিং ব্যাগ ব্যবহার করতে হচ্ছে। তাছাড়া পলিথিনের বিকল্প ব্যাগ থাকলেও মূল্য বেশি, তাই ক্রেতা বা বিক্রেতা দুজনেরই এ বিষয়ের প্রতি আগ্রহ কম।

জয়দেবপুর বাজারের ব্যবসায়ী বিক্রেতা খায়রুর ইসলাম বলেন, পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ থাকলেও বাজারে এর বিকল্প না থাকায় বা যেটা পাওয়া যায়, তার দাম বেশি থাকায় বাজারে আবার পলিথিন ব্যাগের চাহিদা বেড়ে গেছে।

তিনি আরও বলেন, গাজীপুর সদর থেকে এবং ঢাকার চক বাজার, ইমামগঞ্জ থেকে তারা হাতল ছাড়া পলিথিন কিনে নিয়ে আসেন ক্রেতাদের মাল দেওয়ার জন্য। ক্রেতারা ব্যাগ নিয়ে বাজারে আসে না, তাই পলিথিনে দিতে হয়। এজন্য উপায় না দেখে পলিথিন রাখতে হয়।

গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নয়ন ভূঁইয়া জানান, ইতোপূর্বে গাজীপুরের টঙ্গীসহ আশপাশের এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল সংখ্যক পলিথিন ও পলিথিন তৈরির কাঁচামাল জব্দ করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলেই আমরা সেখানে অভিযান পরিচালনা করছি। আমরা এবার বাজারগুলোতে অভিযান পরিচালনা করবো।

ফয়সাল/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়