ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

সিন্ডিকেট: ‘ড-তে ডেঙ্গু, ড-তে ডাব’

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, খুলনা  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ১৯ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১৯:১৬, ১৯ অক্টোবর ২০২৩
সিন্ডিকেট: ‘ড-তে ডেঙ্গু, ড-তে ডাব’

সাম্প্রতি ডাব নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। মূলতঃ ডেঙ্গুকে পুঁজি করে গড়ে উঠেছে এ সিন্ডিকেট। সাধারণ মানুষ ডাবের ধারে কাছে যেতে পারছে না। প্রতি পিস ডাব খুলনা নগরীতে প্রকারভেদে ৬০ থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে উৎপাদন কমের কারণেই ডাবের মূল্য বৃদ্ধি, এ যুক্তি বিক্রেতাদের। 

ডেঙ্গুজ্বর কেন্দ্র করে সর্বত্র ডাবের চাহিদা বেড়েছে। বাগেরহাটের ফকিরহাট, চিতলমারী, রামপাল; খুলনার রূপসা, ডুমুরিয়া, ফুলতলা, তেরখাদা; নড়াইলের কালিয়া থেকে ৫ বছর আগে যে পরিমাণ ডাব জোগান দেওয়া হতো, এখন তা এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ডাবের চাহিদা বাড়ে। ডেঙ্গু পুঁজি করে ব্যবসায়ীরা ঢাকায় ডাব পাঠাচ্ছে। তারাই মূলত ডাবের মূল্য নির্ধারণ করে। ঢাকা থেকে তৃর্ণমূল পর্যন্ত একই সিদ্ধান্ত।

খুলনা জজ কোর্ট মোড়ের নিয়মিত ডাব বিক্রেতা রূপসা উপজেলার সিংয়ের চর গ্রামের হাফিজুল ইসলাম বলেন, আগে প্রতিদিন তার ১৫০টা ডাব বিক্রি হতো। এখন প্রতিদিন ৫০-৬০টা বিক্রি হয়। একই মোড়ের ডাব বিক্রেতা ফরিদা বেগম জানান, ১৫ বছর ধরে ডাব বিক্রি করছেন। এখন অস্বাভাবিক দাম। সর্বোচ্চ মূল্য ৯০ টাকা।

রূপসার রামনগর গ্রামের বাসিন্দা খুচরা ডাব ক্রেতা মো. আরিফুর রহমান মোল্লা বলেন, জাবুসা চৌরাস্তা ও কুদির বটতলা মোড়ে বসে মাঝেমধ্যে ডাব কেনেন। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে ডাবের দাম বাড়িয়ে দেয়।

রূপসার ঘাটভোগ ইউনিয়নের পিঠাভোগ এলাকার ডাব বিক্রেতা মো. বাদশা শেখ বলেন, ‘আমি গাছ থেকে ডাব কিনে এনে পাইকারি ৫৫-৬০ টাকা করে বিক্রি করি। গাছে ফলন কম হওয়ায় ডাবের দাম বেড়েছে। ডেঙ্গু জ্বরের কারণে দাম বাড়েনি।’

খুলনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার দরিমজুরী গ্রামের প্রান্ত বিশ্বাস। তিনি পিযুষ বিশ্বাসের পুত্র। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। তার স্বজনরা বেদানার পাশাপাশি ডাবও পথ্য হিসেবে দিচ্ছেন। এ হাসপাতালের ১০, ১১ ও ১২ নং বেড ডেঙ্গু কর্ণার হিসেবে ঘোষণা করেছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপপরিচালক ইব্রাহিম হোসেন জানান, বটিয়াঘাটা ও ফকিরহাট উপজেলা থেকে ডাবের সরবরাহ কমেছে। তুলনামূলকভাবে এখানে উৎপাদন কমেছে। এ কারণে প্রতি পিস ডাব ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

ক্যাবের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেনের যুক্তি, ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন জেলার ডাব সেখানে পাঠানোর কারণে চাহিদা বেড়েছে। তুলনামূলকভাবে জেলা ও উপজেলা পর্যায় এখন ডাবের চাহিদা কম।

খুলনা জেলা সিভিল সার্জন সবিজুর রহমান বলেন, ডেঙ্গুজ্বর উপশমে ডাবের পানি তেমন ভূমিকা রাখে না। তবে ডেঙ্গুজ্বর হলে অন্যান্য ফলের রসের মতো ডাবের পানি পান করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

খুলনা জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও কনসালটেন্ট ডা. মো. নাজমুল কবির বলেন, ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে ডাব জরুরি নয়। চিকিৎসকরা তরল খাবার ও শরবত পানের পরামর্শ দেন। রোগীর স্বজনরা ডাবকে প্রাধান্য দিয়েছে।  

তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগীর ক্ষেত্রে প্রেসার কমে যেতে পারে। সে জন্যই স্যালাইন বা তরল খাবারের পরামর্শ দেওয়া হয়। এ যুক্তির সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন ডা. পার্থ ঘোষ।

বিএমএ খুলনা শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, ডেঙ্গু রোগীর জন্য ডাব বাধ্যতামূলক নয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত সক সিনড্রম খারাপ হয়। পানি বা শরবত পানের পরামর্শ দেওয়া হয়। রোগীর স্বজনরা এক্ষেত্রে ডাবকে প্রাধান্য দিয়ে আসছেন। ডাবে খনিজ লবণ রয়েছে।

মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল ফয়সাল মোহাম্মদ নুরুদ্দীন চৌধুরী এক প্রবন্ধে উল্লেখ করেন, ডাবের পানিতে পটাশিয়াম আছে। জ্বরের সময় প্রচণ্ড ঘাম হয়। এতে মাংসপেশীতে খিঁচুনি হয়, ক্রাম্প হয়, রোগী কষ্ট পায়। রোগী যদি সামান্য কলা, ডাব খেতে পারে, তাহলে ওই ঘাটতি পূরণ হয়। কিন্তু পরিমিত খেতে হবে। অতিরিক্ত খেলে শরীরে অতিরিক্ত পটাশিয়াম যোগ হবে, অতিরিক্ত কিছুই ভালো না। শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে সোডিয়াম বের হয়ে যায়। তাই এত পরিমাণ পানি আর ঘামের মাধ্যমে বের হওয়া সোডিয়ামের মধ্যে ভারসাম্য থাকে। জ্বর হলে এই ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, তাই রোগীকে সাধারণ স্যালাইন দেওয়া হয়, যাতে ০.৯ শতাংশ সোডিয়াম থাকে। কিন্তু পটাশিয়াম শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে বের হয় না, পায়খানার সঙ্গে অথবা বমিতে কিছুটা বের হয়। সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ক্লোরাইড শরীরের স্বাভাবিক মেকানিজম নিয়ন্ত্রণ করে। এসব উপাদান বেশি নেওয়া ভালো না, কমও ভালো না। ডাবের পানিতে পটাশিয়াম বেশি, সোডিয়াম কম থাকে। পটাশিয়াম যতটুকু থাকা দরকার তার চেয়ে বেশি হলেই কিডনিতে চাপ পড়ে। 
 

/বকুল/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়