ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

গৃহবধূকে ধর্ষণ, বাস চালক কারাগারে

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ২০ অক্টোবর ২০২৩  
গৃহবধূকে ধর্ষণ, বাস চালক কারাগারে

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে এক গৃহবধূকে ধর্ষণের মামলায় জাহাঙ্গীর আলম (৩১) নামের বাস চালককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে মামলা দায়েরের পর ওই নারীকে শারীরিক পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। গ্রেপ্তারকৃত জাহাঙ্গীরকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে হালুয়াঘাটের একটি বাসা থেকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে জাহাঙ্গীরকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। হালুয়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন চন্দ্র রায় এতথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর উপজেলার গোবরাকুড়া গ্রামের আব্দুল কাদিরের ছেলে। তিনি হালুয়াঘাট থেকে ঢাকাগামী একটি পরিবহনের চালক। 

মামলার নথির বরাত বরাত দিয়ে ওসি সুমন চন্দ্র বলেন, ভুক্তভোগী গৃহবধূ গত ১৬ অক্টোবর সকালে নিজ বাড়ি থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। তাকে বাসে তুলে দিতে যান বৃদ্ধ নানা। তবে, ওই নারী ঢাকার বাসে না উঠে ভুল করে হালুয়াঘাটের বাসে উঠে পড়েন। হালুয়াঘাটে গিয়ে বাস থেকে নেমে ওই নারী তার স্বামীর কাছে ফোন করেন। স্বামী তার কাছে জানতে চান তিনি কোথায় আছেন। কিন্তু তিনি জায়গা চিনতে না পারায় বাসচালকের সহকারীকে মোবাইল ফোন দিতে বলেন। সহকারীর সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, তার স্ত্রী ঢাকার বাসে না উঠে ভুল করে হালুয়াঘাটের বাসে উঠেছেন।

বাসের চালক গৃহবধূকে হালুয়াঘাট বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ঢাকাগামী অন্য বাসে তুলে দেওয়ার আশ্বাস দেন। দুপুর ৩টার দিকে বাসচালকের সহকারী ওই নারীকে বাসস্ট্যান্ডে এক দোকানের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখে অন্য বাসে উঠিয়ে দিতে সামনে যান। এসময় অন্য এক বয়স্ক নারী জানতে চান তিনি কোথায় যাবেন? সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন হালুয়াঘাট উপজেলার গোবরাকুড়া এলাকার বাসিন্দা ইমাম পরিবহনের বাসের চালক জাহাঙ্গীর।

বৃদ্ধার সঙ্গে গৃহবধূর কথা শুনে ওই নারীর পিছু নেন জাহাঙ্গীর। যে বাসে করে ওই গৃহবধূ হালুয়াঘাটে এসেছিলেন সেই বাসের চালক গৃহবধূকে ঢাকাগামী একটি বাসে উঠিয়ে দেন। সুযোগ বুঝে সেই বাসে উঠে পড়েন জাহাঙ্গীর। জাহাঙ্গীর ওই নারীর সরলতার সুযোগ নিয়ে তাঁকে জানান, এই বাসে গেলে ঢাকায় যেতে গভীর রাত হয়ে যাবে। তিনি যেন তাঁর বাসে ঢাকায় যান। তার বাস রিজার্ভ করা আছে এবং ধারা বাজার এলাকায় রাখা। রাত ৮টার মধ্যেই ঢাকায় নিয়ে যাবেন।

ওই নারী সরল বিশ্বাসে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে ধারা বাজার মুরগি মহাল এলাকায় নেমে পড়েন। তারপর জাহাঙ্গীর ওই নারীকে নিয়ে মুরগি মহালের পাশে নির্জন স্থানে দাঁড় করিয়ে রাখা ইমাম বাসে উঠে বসতে বলে অপেক্ষা করতে বলেন। বিকেল আনুমানিক ৫টার দিকে ওই বাসের চালক জাহাঙ্গীর বাসে উঠে দরজা বন্ধ করে দেন এবং ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। ওই নারী চিৎকার করতে চাইলে গলা চেপে ধরে তাকে মেরে ফেলার হুমকি দেন। ধর্ষণের পর তিনি নারীকে বাসে রেখে বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে চলে যান। এক ঘণ্টা পর জাহাঙ্গীর ফিরে এসে ওই গৃহবধূকে বিয়ে করবেন বলে প্রলোভন দেখান। ওই দিন রাত ১০টায় জাহাঙ্গীর রিজার্ভ যাত্রী নিয়ে রওনা হন এবং ভোরে নারায়ণগঞ্জে পৌঁছান।

গত ১৭ অক্টোবর সকালে পুনরায় ভুক্তভোগীকে বাস নিয়ে জাহাঙ্গীর হালুয়াঘাটের উদ্দেশে রওনা হন। দুপুর ৩টার দিকে হালুয়াঘাট উপজেলার নাগলা বাজার পৌঁছে বাসের সহকারী ফয়সালকে বলেন, এই মহিলাকে বিয়ে করেছি। সে তোর নতুন ভাবি। তাকে বাড়িতে নিয়ে যা। আমি রাতে আসব। জাহাঙ্গীর রাতে ফয়সালদের বাড়িতে এসে একই পরিচয় দেন এবং ওই নারীকে দ্বিতীয়বার ধর্ষণ করেন। ১৮ অক্টোবর জাহাঙ্গীর ওই নারীকে নিয়ে হালুয়াঘাট পৌর শহরের পাগলপাড়া এলাকায় স্বামী স্ত্রী-পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নেন এবং তৃতীয়বার ধর্ষণ করেন। পরে ওই নারীকে বাসায় রেখে জাহাঙ্গীর সেখান থেকে চলে যান।  সুযোগ বুঝে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে ওই নারী তার বাবাকে মোবাইলে বিষয়টি জানান। ওই নারীর বাবা হালুয়াঘাট থানা পুলিশকে ঘটনাটি জানায়। তাৎক্ষণিক পুলিশ ওই নারীকে পাগল পাড়ার ভাড়া বাসা থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। পাশাপাশি অভিযান চালিয়ে বাসসহ চালক জাহাঙ্গীরকে গ্রেপ্তার করে।

ওসি সুমন চন্দ্র রায় বলেন, এই ঘটনায় জাহাঙ্গীরকে আদালতের নির্দেশে কারাগারে পাঠানো হয়েছে এবং ভুক্তভোগীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার জাহাঙ্গীর ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্কীকার করেছেন। 

মিলন/মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়