ঢাকা     সোমবার   ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৯ ১৪৩১

রাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে অছাত্র-ড্রপআউট, ভাঙচুর-বিক্ষোভ

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৮, ২২ অক্টোবর ২০২৩  
রাবি ছাত্রলীগের নেতৃত্বে অছাত্র-ড্রপআউট, ভাঙচুর-বিক্ষোভ

প্রায় সাত বছর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে সভাপতি ও আসাদুল্লা-হিল-গালিবকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। ৩৯ সদস্যের ঘোষিত আংশিক কমিটির বেশিরভাগ নেতাকেই নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। এদের মধ্যে অছাত্র এবং ড্রপআউট দুই নেতা রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

এদিকে, কমিটি ঘোষণার পর ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতাদের মধ্যে চরম ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। রোববার (২২ অক্টোবর) তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে আসাদুল্লা-হিল-গালিবের কক্ষও ভাঙচুর করেন। 

আরও পড়ুন: অবশেষে রাবি ছাত্রলীগে নতুন কমিটি

আরো পড়ুন:

গতকাল শনিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে রাবি শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। 

রাবি ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, নতুন কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। মাস্টার্স শেষ করার পর তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে চলেও গিয়েছিলেন। ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি শুরু হলে তিনি ক্যাম্পাসে ফিরে আসেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইংলিশ অ্যান্ড আদার লাংগুয়েজের একটি শর্ট কোর্সে ভর্তি হয়েছেন। তার বাড়ি জয়পুরহাট সদরে। তিনি সদ্য বিলুপ্ত কমিটির গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিব আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। প্রথম বর্ষে উত্তীর্ণ হলেও দ্বিতীয় বর্ষ আর টপকাতে পারেননি তিনি। পরে ড্রপআউট হয়ে ছাত্রত্ব হারিয়েছেন। ছাত্রত্ব দেখাতে ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ভুয়া’ সনদ দেখিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে সন্ধ্যাকালীন মাস্টার্স কোর্সে ভর্তি হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়ার কারণে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

আজ সকাল ১১টা ২০মিনিটের দিকে মাদার বখশ হলে ঢোকেন সদ্য ঘোষিত কমিটির সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম লিংকন, তাওহীদুল ইসলাম দূর্জয়, শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন ও পদ না পাওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য সাকিবুল হাসান বাকিসহ তাদের অনুসারীরা। পরে তারা ওই হলে আসাদুল্লা-হিল-গালিবের ২১৫ নম্বর কক্ষ ও ওই কক্ষের দু'পাশের দুটো কক্ষ ভাঙচুর চালান। তারা কক্ষের দরজা, জানালা ও গাছের টপ ভেঙে প্রায় ১০ মিনিট পর হল ত্যাগ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন মার্কেটে এসে সভাপতির এক অনুসারীকে মারধর করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন তারা।

অবস্থান নেওয়া নেতাদের দাবি, নতুন সভাপতি ব্যবসা করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পদ নিয়ে এসেছেন এবং সাধারণ সম্পাদক ইন্টার পাশ। তাই এই কমিটি তারা মানেন না। 

নতুন কমিটির সহসভাপতি শাহিনুল ইসলাম সরকার ডন বলেন, কমিটির সাধারণ সম্পাদক এইচএসসি পাস। তিনি অনার্স করতে পারেননি। ভুয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে জীবনবৃত্তান্ত দিয়েছেন। তার নেতৃত্বে কীভাবে ছাত্রলীগ চলবে। আর সভাপতি নিষ্ক্রিয় ছিলেন। ব্যবসা করতেন। ছয় মাসের মধ্যে নেতা হয়ে এসেছেন। তারা এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন। তাদের দুজনকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলেও ঘোষণা দেন তিনি।

অবাঞ্ছিত ঘোষণা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সদ্য ঘোষিত কমিটির সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবু বলেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যাচাই-বাছাই করেই কমিটি ঘোষণা করেছেন। আমাদের ছাত্রলীগেরই কতিপয় নেতা নাকি কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছে শুনলাম। আসলে তারা ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিল করার জন্য এমনটা করছেন। 

এ বিষয়ে জানতে নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লাহ-হিল-গালিবের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ২৫তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ১১ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়াকে সভাপতি ও ফয়সাল আহমেদকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্র। ওই কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর। এরপর চলতি বছরের গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২৬তম সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর ৩৪ দিন পর ৩৯ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। 

কমিটিতে ২০ জনকে সহসভাপতি করা হয়েছে। তাঁরা হলেন- মেজবাহুল ইসলাম, শাহিনুর ইসলাম সরকার ডন, জাকিরুল ইসলাম জ্যাক, মঈনউদ্দিন রাহাত, মেহেদী হাসান মিশু, মেহেদী হাসান তায়েব, মামুন শেখ, নূর সালাম, আলফাত সায়েম জেমস, আশিকুর রহমান আশিক, তাওহীদুল ইসলাম দূর্জয়, তানভীর ইসতিয়াক, তামান্না আক্তার তন্বী, আবুল বাশার আহমেদ, জান্নাতুল নাইমা আকন্দ জানা, সামিউল আলম সোহাগ, মোমিন ইসলাম, শাখাওয়াত হোসেন শাকিল, জুয়েল হোসেন ও মনু চন্দ্র দেব বর্মণ।

আটজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হলেন- ভাস্কর সাহা, নাঈম আলী, নিয়াজ মোর্শেদ, আশিকুর রহমান অপু, আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বদেশ, তাজরিন আহমেদ মেধা, সাদেকুল ইসলাম সাদিক ও শামীম হোসেন। এ ছাড়া ৯ জনকে সাংগঠনিক সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁরা হলেন কাবিরুজ্জামান রুহুল, আল মুক্তাদির তরঙ্গ, প্রিয়াংকা সেন মৌ, ইমরান হোসেন, বুলবুল জোয়ার্দার, জোবায়ের আহমেদ, নাশরাত আর্শিয়ানা ঐশী, জাহিদ হাসান ও কাইয়ূম মিয়া। এই কমিটির অনেককে ঘিরেই রয়েছে নানা ধরনের বিতর্ক।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, ‘সময়ের বাস্তবতা বিবেচনায় বা প্রেক্ষাপট বিবেচনায় আমাদেরকে নেতৃত্ব নির্বাচন করতে হয়েছে। তবে তারপরও যদি কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থেকে থাকে সেটি আমরা খতিয়ে দেখবো।’

এই কমিটিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটি আমার জানা নেই। সবাইকে আহ্বান জানাবো যে, সংগঠনের সবাই সমানভাবে তো মূল্যায়ন করার সুযোগ থাকে না। আমাদের একটি আদর্শকে নিয়েই সবাইকে চলতে হবে। এই মানসিকতাই সবার ধারণ করা উচিৎ।’

কেয়া/মাসুদ


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়