নেই দৃষ্টিশক্তি, ইচ্ছেশক্তিতে মুদি দোকান চালান হারুন
মোসলেম উদ্দিন, দিনাজপুর || রাইজিংবিডি.কম
দুই ছেলের সঙ্গে হারুন উর রশিদ
দিনাজপুরের হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের সড়ঞ্জাগাড়ি গ্রামের বাসিন্দা ৪৪ বছর বয়সী হারুন উর রশিদ। ১০ বছর আগে ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার দুইটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। চিকিৎসা করেও তিনি ফিরে পাননি দৃষ্টিশক্তি। তবে দৃষ্টি শক্তি হারালেও মনোবল হারাননি। মানুষের কাছে হাত না পেতে, ইচ্ছেশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সংসার চলিয়ে যাচ্ছেন তিনি। চোখে না দেখেও মুদি দোকান করে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে কাটছে হারুনের সংগ্রামী জীবন।
রোববার (২২ অক্টোবর) দুপুরে উপজেলার সড়ঞ্জাগাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, এক শতক জায়গার ওপর একটি ছোট মুদির দোকান। এই দোকানকে কেন্দ্র করেই চলে দৃষ্টিহীন হারুনের কর্মযজ্ঞ। দাঁড়িপাল্লায় অনুমান করে পণ্য ওজনের পর ক্রেতাদের মধ্যে বিক্রি করতে দেখা যায় তাকে। চোখে না দেখেও নিজ হাতে পান তৈরি করে ক্রেতাদের দিতেও দেখা গেছে তােকে। ছোট-বড় আকৃতি বুঝে টাকার ধরণ বোঝেন তিনি। আবার খরচের বাকি টাকাটাও ফেরত দিচ্ছেন অনুমান করে। এভাবেই দোকানের মালামাল বেচাবিক্রি করছেন তিনি।
পণ্য বিক্রির টাকা অনুমান করে বুঝে নিচ্ছেন হারুন
অন্ধ হারুনের সংসারে স্ত্রী আর দুই ছেলে রয়েছে। তিন শতক জমিতে মাটির একটি কুঁড়ে ঘর রয়েছে তার। মাদরাসায় পড়ালেখা করে হারুনের দুই ছেলে। প্রয়োজনের তুলনায় তার দোকানে মালামালের পরিমাণ খুবই অল্প। সারাদিনের স্বল্প বেচাবিক্রিতে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনো রকম চলে সংসার। ছেলেদের পড়ালেখা এবং অন্য চাহিদা মেটাতে তার চেষ্টার কোনো কমতি নেই। প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পেয়েছেন হারুণ। তবে সেখান থেকে যে ভাতা পান তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন তিনি।
আমিরুল ইসলাম, জহির উদ্দিনসহ সড়ঞ্জাগাড়ি গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, হারুন ভাই একজন ভালো মানুষ। একসময় তিনি সুস্থ ছিলেন। তখন সুন্দরভাবে চলতো তার জীবন। ১০ বছর আগে তার চোখ দুটি নষ্ট হয়ে যায়। চোখের চিকিৎসা করতে তার সংসারে যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে। তবুও মানুষের নিকট হাত পাতেননি তিনি। তখন থেকে ছোট পানের দোকান করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন। বর্তমান দোকানের আয় দিয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে তার। ছেলেদের পড়ালেখা আর সংসারের খরচ মেটাতে হিমশিম খাচ্ছেন তিনি।
দৃষ্টিহীন হারুন উর রশিদ রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘১০ বছর আগে আমার বাম চোখে ভাইরাস আক্রমণ করে। পরে দুই চোখেই সমস্যা শুরু হয়। চোখ ভালো করতে ঢাকায় চিকিৎসা করি। অপারেশনও করি। কিন্তু চোখ ভালো করতে পারিনি। বাইরের কোনো কাজ বা চলাফেরা আর করতে পারি না। মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে হাত বাড়াতে চাইনি। তাই নিজের মনের জোরে ব্যবসা করছি। বর্তমান ব্যবসার যে অবস্থা তাতে ছেলেদের পড়ালেখার খরচ আর সংসার চালাতে পারছি না। খেয়ে না খেয়ে দিন অতিবাহিত করছি।’
হাকিমপুর উপজেলার বোয়ালদাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছদরুল ইসলাম বলেন, ‘আমার ইউনিয়নের সড়ঞ্জাগাড়ি গ্রামের অসহায় অন্ধ হারুন উর রশিদ একজন ভালো মানুষ। তাকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি। অনেক দিন আগে তার দুটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি জীবিকার তাগিদে দোকান করে সংসার চালান। তাকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। আগামীতে তাকে সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা করা হবে।’
মাসুদ