ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

নজর কেড়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্যে সাজানো মণ্ডপ

শিরিন সুলতানা কেয়া, রাজশাহী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:১৩, ২৩ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১১:৩৩, ২৩ অক্টোবর ২০২৩
নজর কেড়েছে ইতিহাস-ঐতিহ্যে সাজানো মণ্ডপ

গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী কুঁড়েঘরের মতো করেই মণ্ডপটি সাজানো হয়েছে। মন্দিরের প্যান্ডেলের চারটি পিলারের নাম জাতীয়তাবাদ, ধর্মনিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র। বঙ্গবন্ধুর যে চার মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে বাঙালী জাতি ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মুক্তিযুদ্ধে সেই ভিত্তির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে পূজামণ্ডপটি। আর ওপরে বাংলাদেশের ইতিহাস লিখিত এক ব্যানার।

রাজশাহী নগরীর মালোপাড়ার শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ দেব বিগ্রহ ঠাকুর মন্দিরের পূজামণ্ডপটি শুধু মণ্ডপ নয়, যেন একটা বাংলাদেশ! মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে এবং সংগ্রামের ইতিহাস তরুণ প্রজন্মকে জানাতে এবার শারদীয় দুর্গোৎসবে লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরের এই সৃজনশীল আয়োজন। এমন আয়োজন এবার আলাদা করে দৃষ্টি কেড়েছে নগরবাসীর।

মন্দিরটিতে গিয়ে দেখা যায়, আলপনা অঙ্কিত ঐতিহ্যবাহী গ্রাম-বাংলার কুঁড়েঘরের মাঝে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু করে ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার সবই ফুটে উঠেছে এক পর্দায়। ফ্রেমের সবার উপরে বড় করে লেখা রয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের সাল ১৯৭১। এর প্রতিটা অঙ্ক অর্থাৎ ১ দিয়ে বোঝানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে এক তর্জনীর হুংকার, ৯ অর্থ ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধ, ৭ অর্থ ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ এবং ১ মানে একটি বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর এক তর্জনীর হুংকারে নয়মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে সাতজন বীরশ্রেষ্ঠ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগের বিনিময়ে একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশ অর্জনের কথা বলা হয়েছে এতে।

এর নিচে ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪ এর সাধারণ নির্বাচন, ’৬৬ এর ছয়দফা, ’৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ’৬৯ এর গণঅঅভ্যুত্থান, ’৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধর ছবির পাশাপাশি সবার বোঝার সুবিধার জন্য রয়েছে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। সেইসাথে ব্যানারে ফুটে উঠেছে ১৯৭৫ সালে জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা ও জাতীয় চার নেতার কাপুরুষোচিত হত্যাকাণ্ডও। ২০১৩ সালের গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ বিচার নিশ্চিতকরণের জন্য দেশব্যাপী যে গণজাগরণ হয়েছিল, তাও বর্ণীত রয়েছে একই ফ্রেমে। ২০২১ সালের দেশব্যাপী সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ক্ষত যে এখনও সংখ্যালঘুদের মাঝে রয়েছে তা বোঝানোর জন্য এর প্রতিবাদও স্থান পেয়েছে ফ্রেমে।

দেশব্যাপী উন্নয়নের অংশ হিসেবে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থান পেয়েছে ফ্রেমের উন্নয়ন অংশে। দেশের মেয়েরাও যে এগিয়ে যাচ্ছে তা সাফ চ্যাম্পিয়নে বাংলাদেশের মেয়েদের বিশ্বকাপ জয়ের ছবি স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার সঙ্গে শিক্ষানগরী রাজশাহীও যে পিছিয়ে নেই তা বোঝানোর জন্য এ শহরের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক ছবিও স্থান পেয়েছে ফ্রেমের শেষ অংশে। প্রতীমা দর্শনে গিয়ে অনেকে লম্বা সময় দাঁড়িয়ে সেসব ছবি দেখছেন, দেশের ইতিহাস জানছেন।

শ্রী শ্রী লক্ষ্মী নারায়ণ দেব বিগ্রহ ঠাকুর মন্দিরের সাধারণ সম্পাদক পাপন চন্দ্র রায় বললেন, ‘দশভুজা দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গা দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালনে ধরণিতে আবির্ভূত হন। দেবী দুর্গার আরধনার সময়কে ধরা হয় সকল প্রকার অশুভ-অসত্যকে পরাভূত করে সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠার শুভ সময়। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন সাজে ও আঙ্গিকে দেবী দূর্গার আরাধনার আয়োজন করে থাকেন। আমরা এমনভাবে মণ্ডপটাকে সাজিয়েছি, যেন বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি এখানে উঠে আসে। সবার মনে যেন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি জাগ্রত হয়।’

/টিপু/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়