ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিতে রংপুরে কমছে না আলুর দাম

আমিরুল ইসলাম, রংপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৬, ২৩ অক্টোবর ২০২৩  
মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিতে রংপুরে কমছে না আলুর দাম

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী অঞ্চল এখন রংপুর। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এই জেলায় চলতি মৌসুমে ৫৩ হাজার ৩০৫ হেক্টর জমিতে আলুর আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ৪ হাজার ৫৫৬ টন। বাৎসরিক খাদ্য চাহিদা, বীজ ও ঘাটতি বাদ দিলেও এখানে ১৩ লাখ ১৬ হাজার ৩৯২ টন আলু উদ্বৃত্ত থাকে। তারপরও বছরের শুরু থেকে উর্ধ্বমুখী আলুর বাজার।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাজার নিয়ন্ত্রণে আলুর দামে নির্ধারণ করে দেয় সরকার। তবে মাস পেরিয়ে গেলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া দাম কার্যকর না হয়ে উল্টো দিন দিন বাড়ছে আলুর দাম। বর্তমানে রংপুরের বাজারগুলোতে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৭০ টাকা পর্যন্ত। 

খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আলুর বাজারে বেড়েই চলছে মধ্যস্বত্বভোগীদের দাপট। চাহিদার তুলনায় অধিক উৎপাদন হলেও শুধুমাত্র মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজিতেই বছর শেষে বিশেষ কায়দায় বাড়ানো হচ্ছে আলুর দাম। একশ্রেণির সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে আলুর বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে সরকার নির্ধারিত দামে পাওয়া যাচ্ছে না আলু। সরকার দাম নিয়ন্ত্রণে নানা ধরনের উদ্যোগ নিলেও তা কোনোভাবেই কাজে আসছে না।

আলু ব্যবসায়ী ও হিমাগার মালিকদের দাবি, সংরক্ষণ খরচ বেড়ে যাওয়ায় আলুর দামের ওপর প্রভাব পড়ছে। তবে মজুত সিন্ডিকেট ভাঙতে প্রশাসন উদ্যোগ নেওয়ায় প্রতিদিনই খালি হচ্ছে হিমাগার। এতে করে বীজ আলুও আর থাকছে না। অক্টোবর থেকে রংপুর অঞ্চলে রবি মৌসুমের আলুবীজ রোপণ শুরু হবে। অথচ এর আগেই বীজ আলুর দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত। যেকারণে আগামী আলু আবাদেও পড়বে প্রভাব।

বর্তমানে জেলার ৩৯ হিমাগারে আলুর মজুদ আছে ১ লাখ ২৯ হাজার টন। যার মধ্যে বীজ আলু আছে ৯০ হাজার ১০৯ মেট্রিক টন। স্টোর মালিক ও বিপণন অধিদপ্তর বলছে, চাহিদার তুলনায় হিমাগার গুলোতে আলু কম থাকায় আলুর সংকট আরও বাড়তে পারে।

রংপুর কিষাণ হিমাগারের ম্যানেজার সৌরভ হোসেন বলেন, গতবারের তুলনায় এবার তিন ভাগের দুই ভাগ আলু ঢুকেছে স্টোরে। এরইমধ্যে চার ভাগের তিন ভাগ আলু বের হয়ে গেছে। বর্তমানে হিমাগারে যে আলু আছে তার সিংহভাগই ভাগই বীজ আলু।

রংপুর হিমাগার মালিক সমিতির সভাপতি মোছাদ্দেক হোসেন বাবলু বলেন, বিগত কয়েক বছরে থেকে এবার উৎপাদন কম হওয়ায় হিমাগারগুলোতে আলু সংরক্ষণ কমেছে ২০ শতাংশ পর্যন্ত। অন্যদিকে নির্দিষ্ট সময়ের দুই মাস আগে থেকে হিমাগারগুলো থেকে আলু বের হওয়া শুরু হয়েছে। যে হারে আলুর চাহিদা দেখা যাচ্ছে, তাতে অক্টোবরের পর আলুর আরও সংকট দেখা দিতে পারে।

রংপুর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম বলেন, হিমাগারে সংরক্ষণ করতে গেলে উৎপাদন, পরিবহন, বস্তা, ওজন, ব্যাংক ঋণের সুদ আর হিমাগার ভাড়া দিয়ে প্রতি কেজি আলুতে খরচ পরে প্রায় ২০ টাকা। যে কারণে সাধারণ কৃষকদের অনেকেই হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেন না। ফল হিসেবে বছরের শেষে বাড়াছে আলুর দাম। তবে এই সংকট কাটাতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। 

তিনি আরও জানান, সরকার সারাদেশে কম খরচে আলু সংরক্ষণে হিমায়িত মডেল ঘর তৈরি করছে। এই মডেল ঘরের প্রতিটিতে রাখা যাবে ৩০ মেট্রিক টন আলু। এই মডলে ঘরের সংখ্যা আরও বাড়ানো গেলে কৃষকরা স্বল্প খরচে আলু সংরক্ষণ করে লাভবান হবেন। একইসঙ্গে বছর শেষে কমবে আলুর সংকট।

এদিকে আলুর বাজর নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মনিটরিং চলছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর রংপুর বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মো. আজাহারুল ইসলাম। তিনি জানান, সরকার নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। খুচরা থেকে পাইকারি বাজার এমন কি হিমাগারে নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। 

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়