বাজারে সয়লাব নিম্নমানের ‘কালটার’
মেহেদী হাসান শিয়াম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম
চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিম্নমানের কালটার (প্যাকলোবিউট্রাজল) বাজারে ছড়িয়ে পড়ায় আম চাষিদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। এই কালটার ব্যবহারের ফলে বাগানের গাছগুলো ঝলসে যাওয়ায় ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মান যাচাই বাছাই করতে ৬-৭টি প্রতিষ্ঠানের কালটার পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।
কালটার উদ্ভিদের এক ধরনের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক রাসায়নিক। কয়েকবছর আগেও এই রাসায়নিক ভারত থেকে নিয়ে আসা হতো চোরাই পথে। কৃষকের আগ্রহ আর চাহিদার প্রেক্ষিতে এটি ব্যবহারের অনুমতি দেয় সরকার। এরপর থেকেই দেশের কিটনাশক ও রাসায়নিক কোম্পানিগুলো কালটার উৎপাদন করে বাজারে বিক্রি করতে শুরু করে।
জেলার আমচাষিদের অভিযোগ, নিম্নমানের কালটারে সয়লাব দেশের কিটনাশক-রাসায়নিক বাজার। দাম কম হওয়ায় মান বিবেচনা না করেই চাষিরা নকল হরমোন কিনছেন দেদারসে। প্যাকেটর গায়ে লেখা উৎপাদন পণ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখেই চুন, পানি ও বিভিন্ন ধরণের আটা দিয়ে তৈরী করা হচ্ছে নকল কালটার। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা।
দীর্ঘদিন ধরে আম উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত আছেন সদর উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়নের চাষি মতিউর রহমান। তিনি বলেন, কিটনাশক দোকানির পরামর্শে এক কোম্পানির কালটার (প্যাকলোবিউট্রাজল) ব্যবহার করা হয় তার বাগানে। এ হরমোন ব্যহারের করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। নিম্নমানের কালটার বাজারে ছড়িয়ে পড়ার করাণে তার এলাকার আম চাষিরা এ রাসায়নিক পণ্য ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন না।
অপর আম চাষি হাফিজুর রহমান বলেন, নিম্নমানের কারণে আমার বাগানে কালটার ব্যবহার করতে পারছি না। শুধু আমি নই, এলাকার অনেকেই এ সমস্যায় ভুগছেন।
সম্প্রতি জেলার শিবগঞ্জ অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ নকল কালটার ধ্বংস করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় উপজেলার বাসিন্দা রিপন আলীকে (২৮) নকল কালটার বিক্রি করার দায়ে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। তারপরেও থেমে নেই নকল কালটারের কেনাবেচা।
কৃষি সংগঠেনের নেতারা বলছেন, জেলার অধিকাংশ আম চাষিরা সারের সঙ্গে মিশিয়ে কালটার ব্যবহার করেন। এটা মোটেও সমুচিত নয়। এ হরমোন ব্যবহার করতে হয় গাছের গোড়ায় সার প্রয়োগের অন্তত মাস খানেক পর। কাঙ্খিত পরামর্শ নিয়ে কৃষকরা কিটনাশক-রাসায়নিক সার ব্যবহার না করার ফলে সুফলই পাচ্ছেন না। জেনে বুঝে পরিমিত মাত্রা আর সঠিক পরামর্শ নিয়ে কালটার ব্যবহার করা গেলে এর সুফল পাওয়া যাবে।
জেলার বাজারগুলোতে নিম্নমানের কালটারে সয়লাব হয়ে গেছে এ কথার সঙ্গে একমত শিবগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, প্যাকলোবিউট্রাজল বা কালটার উদ্ভিদের একধরনের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক রাসায়নিক পণ্য। এটি তরল কিংবা পাউডার উভয় অবস্থাতেই পাওয়া যায়। নিম্নমানের কালটার বাজারে বিক্রি কমানোর জন্য চেষ্টা চলছে।
তিনি আরও বলেন, এখন পর্যন্ত ৬-৭টি প্রতিষ্ঠানের প্যাকলোবিউট্রাজল বা কালটার মান পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের হরমনগুলোর রিপোর্ট হাতে পাওয়া যাবে অল্প সময়ের মধ্যে। পণ্যগুলোর মান যাচাই-বাছাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, নিম্নমানের প্যাকলোবিউট্রাজলের সংখ্যা দিন দিন বাজারে বাড়ছে। বাইরে থেকে পণ্য দেখে আসল-নকল না চেনার কারণে নকল পণ্য বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এসব পণ্যের দাম কম হওয়ার কারণে হরহামেশাই কৃষকরা এটি ব্যবহার করছেন। নিম্নমানের হরমোন টাকা দিয়ে কিনে ব্যবহারে ফলে চাষিরা কোনো সুফল পাচ্ছেন না। কমদামি হরমোন ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
মাসুদ