ঢাকা     বুধবার   ২৭ নভেম্বর ২০২৪ ||  অগ্রহায়ণ ১২ ১৪৩১

নিহত পুলিশ সদস্যের বাবা

‌‘এখন কীভাবে চলবে আমাদের পরিবার’

জাহিদুল হক চন্দন, মানিকগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:১৩, ২৯ অক্টোবর ২০২৩   আপডেট: ১৯:১৬, ২৯ অক্টোবর ২০২৩
‌‘এখন কীভাবে চলবে আমাদের পরিবার’

নিহত পুলিশ সদস্য পারভেজের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী

‘আমি মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। আমার ছেলে পুলিশে চাকরি করে দেশের সেবা করেছে। পুরো পরিবারকে আগলে রেখেছে। কিন্তু অকালে আমার ছেলে মারা গেলো। এখন কীভাবে চলবে আমাদের পরিবার।’

রোববার (২৯ অক্টোবর) বিকেলে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারি এলাকায় এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বিএনপির সমাবেশে সংঘর্ষে নিহত পুলিশ সদস্য আমিরুল ইসলাম পারভেজের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী।

পুলিশ সদস্য ছেলের অকাল মৃত্যুর সংবাদ শোনার পর থেকেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন সেকেন্দার আলী। 

আরো পড়ুন:

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত দেড় বছর আগে নদী ভাঙনের কবলে পড়ে মানিকগঞ্জ জেলার দৌলতপুর উপজেলার চরকাটারী এলাকা থেকে পার্শ্ববর্তী টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর উপজেলার দপ্তিয়র ইউনিয়নের ফয়েজপুর এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস শুরু করে পারভেজের পরিবার। সেকেন্দার আলী মোল্লার তিন সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে পারভেজ ও আজিজুল হক বিপ্লব। তার মেয়ের নাম সেফালি বেগম। দারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয়ে ওঠেন পারভেজ। প্রায় দশ বছর আগে পারিবারিকভাবে মানিকগঞ্জের সিংগাইর এলাকার রুমা আক্তারের সঙ্গে পারভেজের বিয়ে হয়। ঘর আলো করে একটি কন্যা সন্তানও জন্ম নেয়। নাম রাখা হয় তানহা ইসলাম। বর্তমানে তার বয়স সাত বছর।

পারভেজের বড় বোনের বিয়ে হয় অনেক আগেই। ছোট ভাই বিপ্লব মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তেমন কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। ফলে পুরো সংসার নির্ভরশীল ছিল পারভেজের ওপর। কিন্তু পারভেজের মৃত্যুর সংবাদটি শোনার পর থেকেই বাবা সেকেন্দার আলী বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন।  

আমিরুল ইসলাম পারভেজ চলতি বছরের ৩ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন সিটিআই-৩ এ যোগ দেন। পুলিশ বাহিনীতে যোগ দেন ২০১১ সালের ১৫ আগস্ট। পারভেজ স্বাভাবিক অবসরে যাওয়ার কথা ছিল ২০৪৯ সালের ৯ মে।  

পারভেজের বড় বোন সেফালি বলেন, আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা সেকেন্দার আলী মোল্লা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, তিনি দেশকে শত্রুমুক্ত করতে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। আমার ভাই পারভেজ দেশের পুলিশ বাহিনীর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহিদ হয়েছেন। পুরো পরিবারটি পারভেজ ওপর নির্ভর ছিল। আমার ছোট ভাতিজি তানহা অল্প বয়সে এতিম হয়ে গেলো। আমার ভাইয়ের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই।  

প্রতিবেশী হাফিজা বেগম বলেন, পারভেজ ভাই আমার বয়সে বড় হলেও কোনো সময় আমার সঙ্গে তুমি বলে কথা বলেননি। সব সময় সম্মান দিয়ে কথা বলেছেন। ছুটিতে বাড়িতে এলে সবার খোঁজ-খবর নিতেন তিনি।  

চরকাটারি ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক বলেন, পারভেজ যখন ছোট ছিল, তখন থেকেই আমি তাকে চিনি। ছেলে হিসেবে সে ছিল লাখে একটা। তার বাবা দেশকে শত্রুমুক্ত করতে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন আর ছেলে সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শহিদ হলেন। পারভেজের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি জানাই।  

দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সফিকুল ইসলাম মোল্ল্যা বলেন, সন্ধ্যায় দৌলতপুর সরকারি হাই স্কুল মাঠে আমিরুল ইসলাম পারভেজের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

ঢাকা/মাসুদ

ঘটনাপ্রবাহ

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়