আগাম আলুতে স্বপ্ন বুনছেন নীলফামারীর চাষিরা
ইয়াছিন মোহাম্মদ সিথুন, নীলফামারী || রাইজিংবিডি.কম
আলু চাষের জন্য খেত তৈরিতে ব্যস্ত নীলফামারীর কৃষকরা
আগাম আলু চাষে ব্যস্ত সময় পার করছেন নীলফামারী জেলার কৃষকরা। এ আলু একটু বেশি দামে বিক্রি হয় বলে দীর্ঘ দিন ধরে অল্পপুঁজিতে আগাম আলু চাষ করে আসছেন তারা। স্থানীয় বাজারে চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে পৌঁছে দিতে ও ভালো দাম পাওয়ার আশায় স্বপ্ন বুনছেন কৃষক পরিবারগুলো।
আগাম জাতের আলু রোপণের জন্য হিমাগার থেকে বীজ সংগ্রহ, জমি প্রস্তত, সার প্রয়োগসহ বিভিন্ন কাজে দিনভর নিজেদের ব্যস্ত রাখছেন চাষিরা। ভাদ্র ও আশ্বিন মাসে স্বল্পমেয়াদি আগাম আউশ, আমন ধান কাটা ও মাড়াই শেষ করে এখন আলু রোপণ করছেন তারা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, আলু রোপণকে ঘিরে মাঠজুড়ে কৃষকদের মাঝে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দ্বিগুণ লাভের আশায় মাঠে কেউবা জমি তৈরি, আগাছা পরিষ্কার ও বীজ সংগ্রহ নিয়ে নিজেদের মতো ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এবছর জেলায় ২১ হাজার ৭১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে আগাম আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। দোআঁশ মাটিতে রোপণের ৫০-৫৫ দিনের মধ্যেই সেভেন জাতের উত্তোলন যোগ্য হয়ে ওঠে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে সেপ্টেম্বর মাসের শুরুতে আলু চাষ করা হলেও এবছর বৈরী আবহাওয়ার কারণে দেরিতে চাষ করতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। জমিগুলো ত্রি-ফসলী হিসেবে ব্যবহার করেছেন তারা। প্রতি বছর আগাম আলু চাষ করে স্বাবলম্বীও হয়েছেন অনেক প্রান্তিক ও মাঝারি কৃষক। বাড়তি দামের আশায় চাষিরা আগেভাগেই আলু রোপণ করছেন।
নীলফামারী সদরের কচুকাটা বন্দরপাড়া এলাকার কৃষক আব্দুল আলিম বলেন, এবছর ৪ বিঘা জমিতে আগাম আলু রোপণ করেছি। এবার আলুর বীজ ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি কিনতে হয়েছে। তাতে আগেভাগে আলু উত্তোলন করতে পারলে ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বাজার ধরা যাবে। এর থেকে কম দাম পেলে আমাদের আলু চাষ করে লোকসানে পড়তে হবে।
একই এলাকার মহসিন আলী আগাম আলু চাষ করেছেন ৫ বিঘা জমিতে। তিনি বলেন, আমাদের এদিকের জমিগুলো একদম উঁচু এবং বালুমিশ্রিত। ভারী বৃষ্টিপাত হলেও তেমন ভয় থাকে না। তাই আগেভাগে দ্বিগুণ লাভের আশায় আগাম আলু চাষ করছি।
জলঢাকা উপজেলার মীরগঞ্জের কালকেট দোলাপাড়া গ্রামের আহমেদ হোসেন বলেন, যেভাবে সার কিটনাশকের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে বিঘা প্রতি ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা খরচ হচ্ছে। আগাম আলু আবাদ করে আমরা চিন্তিত থাকি। যদি ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি দাম না পাই তাহলে আলু আবাদ করে লস হবে।
একই এলাকার আনিছুর রহমান বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার আলুর বীজের দাম তিন গুণ বেড়েছে। বেড়েছে কৃষি উপকরণের দামও। এবার আগাম বৃষ্টি হওয়ায় অনেক আলু নষ্ট হয়েছে। আলু দাম না পেলে আমরা কৃষক মারা যাবো। আমরা কৃষক আগাম আলু চাষ করে চিন্তিত থাকি দাম পাওয়া নিয়ে। সরকারের কাছে আবেদন যাতে আগাম আলুর দাম পাই।
কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাহাগিলী ইউনিয়নের দক্ষিণ বাহাগিলী গ্রামের মমতাজ আলী বলেন, প্রত্যেক বছরের মতো এবারও ১১ বিঘা জমিতে আগাম জাতের আলু রোপণের প্রস্ততি নিয়েছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে ৫৮ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আলু ঘরে তুলতে পারবো। বাজারদর ভালো পেলে সার, বীজ, পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বাদে পাঁচ থেকে ছয় লাখ টাকা পর্যন্ত লাভ হতে পারে।
কিশোরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লোকমান আলম বলেন, কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাটি ও আবহাওয়া আগাম আলু চাষের জন্য খুবই উপযোগী। প্রতি বছর এ এলাকার কৃষক আগাম আলু চাষ করে দ্বিগুণ লাভ করছেন। গত বছরের চেয়ে এবার ৪০০ হেক্টর বেশি জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস. এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, চলতি বছর ২১ হাজার ৭১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যার মধ্যে আগাম আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮ হাজার ৮০০ হেক্টর। যা গত বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে। বর্তমান আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উঁচু জমিতে আলুচাষে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। নিচু জমিতে আবহাওয়া দেখে আলুর বীজ রোপণের কথা বলা হচ্ছে।
মাসুদ