ঢাকা     শুক্রবার   ১৮ অক্টোবর ২০২৪ ||  কার্তিক ২ ১৪৩১

অবরোধে পেয়ারা চাষিদের সর্বনাশ

মেহেদী হাসান শিয়াম, চাঁপাইনবাবগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৭, ২ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১০:২৮, ২ নভেম্বর ২০২৩
অবরোধে পেয়ারা চাষিদের সর্বনাশ

বিএনপি-জামায়াতের ডাকা টানা তিন দিনের অবরোধে ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের পেয়ারা চাষিরা। উৎপাদিত পেয়ারা মোকামে পাঠাতে না পারায় নষ্ট হচ্ছে বাগানে। কিছু পেয়ারা বিক্রি করা গেলেও পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত দাম। এমন অবস্থায় নতুন করে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি না দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন চাষিরা।

তারা বলছেন, বাগানে পরিপক্ব অনেক পেয়ারা নষ্ট হচ্ছে। অবরোধের কারণে পাইকাররা পেয়ারা কিনতে আসছেন না। হাতেগোনা কয়েকজন পাইকার আসলেও পেয়ারার দাম বলছে কম। অবরোধের আগে পরিপক্ব যেসব পেয়ারা প্রতি মণ বিক্রি হয়েছে ১০০০-১৩০০ টাকায়। এখন সেই পেয়ারার দাম সর্বোচ্চ সাড়ে ৭০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত উঠছে। ফলে কম দামে পেয়ারা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

চাষিদের অভিযোগ, ৮০০ টাকা মণ পেয়ারা বিক্রি করে উৎপাদন খরচই উঠছে না। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা। অনেকে দেউলিয়া হয়ে গেছেন।

পেয়ারা চাষি আব্দুস সালাম বলেন, ঢাকা পেয়ারা পাঠাই, কিন্তু অবরোধের কারণে পাঠাতে পারছি না। ঢাকার পাইকাররাও যোগাযোগ করছেন না। ৩০ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষে কমপক্ষে ১৫ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। পেয়ারা বিক্রি করে লাভ দূরের তো কথা, শ্রমিক খরচই উঠছে না।

তিনি আরও বলেন, পেয়ারা তো কাঁচামাল। পরিপক্ব হয়ে গেলে ঘরে রাখা যায় না। তাই, পেয়ারা নষ্ট হওয়ার আগে বিক্রি করতে হয়। অবরোধের কারণে চাষিদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।

আরেক পেয়ারা চাষি আব্দুর রহমান বলেন, হরতাল অবরোধের আগে ১২৫০-১৩৫০ টাকায় প্রতি মণ পেয়ারা বিক্রি হয়েছিল। অবরোধের পর পাঁচশ টাকা কমে ৮০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামাল পরিপক্ব হয়ে গেলে গাছে রাখলে নষ্ট হবে। তাই বাধ্য হয়ে কম দামে পেয়ারা বিক্রি করতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, অবরোধের কারণে ঢাকায় গাড়ি পাঠানো যাচ্ছে না। ট্রাক চালকেরা গাড়ি বের করতে চাচ্ছেন না। কাঁচামালের কারণে বাধ্য হয়ে কম দামে পেয়ারা বিক্রি করতে হচ্ছে। রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অবসান ঘটিয়ে কৃষকদের জন্য অবরোধ প্রত্যাহার করা উচিত।

কৃষক নাইম ইসলাম বলেন, পেয়ারার ব্যবসায় ভাটা পড়েছে। অবরোধের কারণে পেয়ারা পাঠানো যাচ্ছে না। মানুষ পেয়ারা না খাওয়ার কারণে দামও কম বলছেন পাইকাররা। যেসব পাইকাররা আগে নিয়মিত আমাদের কাছ থেকে পেয়ারা নিত, তারা এখন নিতে চাচ্ছেন না। যে কারণে পেয়ারার দাম আরও কমেছে। সব মিলিয়ে কম দামে পেয়ারা বিক্রি করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা।

জেলা কৃষি অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৭৮৫ হেক্টর জমিতে পেয়ারা চাষ হচ্ছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলনও হয়েছে ভালো। বেশির ভাগ পেয়ারাই পরিপক্ব হয়েছে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক পলাশ সরকার বলেন, উৎপাদিত পেয়ারাগুলো যথাসময়ে মোকামে পাঠাতে না পারলে ব্যাপক লোকসান গুণতে হবে চাষিদের। এ অবস্থায় কৃষিপণ্য হরতাল-অবরোধের আওতামুক্ত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

তিনি আরও বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে পেয়ারাসহ অনেক ফল উৎপাদন হয়। এসব পণ্য লোকাল মার্কেটে বিক্রি হয় না। এগুলো ঢাকাসহ দূরবর্তী জেলায় বিভিন্ন পরিবহনের মাধ্যমে চলে যায়। অবরোধের কারণে চাষিরা পেয়ারা পাঠাতে পারছেন না। উৎপাদিত এসব পণ্য পরিবহনে বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন তারা।

কেআই


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়