ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

পাবনা-৫

নতুন মুখ, নাকি পুরনোতেই আস্থা?

শাহীন রহমান, পাবনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৫, ৩ নভেম্বর ২০২৩  
নতুন মুখ, নাকি পুরনোতেই আস্থা?

বিভিন্ন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী

পাবনা-৫ আসন মূলত জেলা সদরের আসন। এই আসনের নির্বাচনী হিসেব নিকেশ সবসময় একটু ভিন্ন হয়। দলীয়ভাবেও ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়। ক্ষমতাসীন দলের বর্তমান নির্বাচিত সংসদ সদস্য পরপর তিনবার জয়ী হয়েছিলেন। আবারও প্রার্থী হতে তিনি মাঠে আছেন এবং নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি ইউনিয়ন, গ্রাম, পাড়া ও মহল্লায় বিচরণ করছেন। 

বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা এ নিয়ে রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্বে। তারপরও দু-একজন শীর্ষ নেতার নাম নেতাকর্মীদের মুখে জানান দিচ্ছে। অন্যদিকে সুকৌশলে নির্বাচনী মাঠ তৈরি করছে জামায়াতে ইসলামী। আর নির্বাচনে অংশগ্রহণের জানান দিচ্ছে জাতীয় পার্টি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশের ওয়ার্কাস পার্টি।

নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা না থাকলেও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ইতোমধ্যে চায়ের দোকান, আড্ডায় চলছে আলাপচারিতা। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কে হচ্ছেন আসন্ন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী এ নিয়েও বেশ আলোচনা হচ্ছে।

পাবনা সদর আসনটি ১০টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। রাজনীতিতে এটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন। এই আসনটি আওয়ামী লীগ, বিএনপির ও জামায়াত তিন দলেরই রয়েছে ভালো ভোট ব্যাংক। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের রফিকুল ইসলাম বকুল ও বিএনপির অ্যাডভোকেট আবুল আহসানকে হারিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী (যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) মাওলানা আব্দুস সোবহান।

১৯৯৩ সালে আওয়ামী লীগ থেকে বিএনপিতে যোগ দেন রফিকুল ইসলাম বকুল। পরে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ কে খন্দকার ও জামায়াতে ইসলামীর মাওলানা আব্দুস সোবহানকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বিএনপির রফিকুল ইসলাম বকুল। ২০০০ সালের নির্বাচনে বিএনপির রফিকুল ইসলাম বকুল মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে ১৪ দল থেকে জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুস সোবহানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। তিনি আওয়ামী লীগের ওয়াজি উদ্দিন খানকে হারিয়ে সাংসদ হন। 

২০০৮ সালে মাওলানা আব্দুস সোবহানকে হারিয়ে চমক দেখান আওয়ামী লীগের সাবেক জনপ্রিয় ছাত্রনেতা গোলাম ফারুক প্রিন্স। ২০১৪ সালে তিনি আবারও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এমপি নির্বাচিত হন। একইভাবে ২০১৮ সালের একাদশ সংসদ নির্বাচনে চারদলীয় জোটের ধানের শীষের প্রার্থী জামায়াতে ইসলামীর নেতা অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইনকে হারিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোলাম ফারুক প্রিন্স।

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত রফিকুল ইসলাম বকুলের মৃত্যুর পর এ পর্যন্ত প্রায় সব নির্বাচনেই প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে জোটগত জামায়াত প্রার্থী আর আওয়ামী লীগের মধ্যে। এ আসন থেকে একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের প্রয়াত নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুস সোবহান নিজদল ও জোট থেকে ৫ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

জামায়াত ইসলামীর নেতাকর্মীরা মনে করেন, এই আসনটি সারাদেশের মধ্যে জামায়াতের অন্যতম দূর্গ। ফলে জোটগত হোক আর এককভাবে হোক; আসনটিতে জামায়াতের প্রার্থী আশা করেন তারা। আব্দুস সুবহানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার পর এই আসনটির হাল ধরতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন পাবনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারী মাওলানা মুহাম্মদ ইকবাল হোসাইন। নিজের গ্রহণযোগ্যতা জানান দিতে ইতোমধ্যে তিনি উপজেলা নির্বাচন ও পৌর নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন। কিন্তু দুই নির্বাচনেই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন।

এদিকে বিএনপির কোনো নেতা প্রার্থী হিসেবে আত্মপ্রকাশ না করলেও দলীয়ভাবে একক প্রার্থী হিসেবে নাম শোনা যাচ্ছে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী অ্যডাভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের নাম। এ জেলায় বিএনপির রাজনীতিতে কিছুটা কোন্দল রয়েছে। যে কারণে একটি গ্রুপ একক প্রার্থী হিসেবে শিমুল বিশ্বাসকে দাবি করলেও অপর গ্রুপ আরও দু’-একজনের নাম বলছেন।

এদিকে জেলা কাউন্সিল হওয়ার পর থেকে সদর আসনে আওয়ামী লীগ সক্রিয়। বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাইবেন এটা নিশ্চিত করেছেন তার পরিচিতরা। দলে প্রকাশ্য কোনো দলাদলি নাই। দলটির সিনিয়র নেতারা মনে করেন প্রকাশ্য দলাদলি বা কোন্দল না থাকায় এই আসনে মনোনয়ন নিয়ে দলীয় নেতাদের মধ্যে বিভেদ বা দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা  নেই। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্সের মনোনয়ন প্রাপ্তিকে একরকম নিশ্চিতই ধরে রেখেছেন তারা।

তবে প্রিন্সকে খালি মাঠে গোল দিতে নারাজ দলের কিছু তরুণ ও প্রবীণ নেতা। নৌকার মাঝি হতে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সংস্কৃতি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও রাষ্ট্রপতি পুত্র আরশাদ আদনান রনি। ইতিমধ্যে তিনি পাবনা সদর আসনের বিভিন্ন এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। দলীয় সব কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন। জেলার অনেক নেতাকর্মী যুক্ত হয়েছেন তার সাথে।

এছাড়াও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক উপ-কমিটির সদস মাজহারুল ইসলাম মানিক, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক স্থপতি আবু রায়হান রুবেলসহ কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর বাইরেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে থাকবেন জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক তারিকুল ইসলাম স্বাধীন, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি কমরেড জাকির হোসেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পাবনা জেলা শাখার সভাপতি সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ।

যোগাযোগের চেষ্টা করে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। 

তবে জেলা বিএনপির একাধিক শীর্ষ নেতার দাবি, বিএনপি যদি নির্বাচনে যায় তাহলে শিমুল বিশ্বাস প্রার্থী হবেন এমনটি নিশ্চিত তারা। বর্তমানে তারা আন্দোলন নিয়ে মাঠে রয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে ভাবছেন না বলে মত দিয়েছেন।

এছাড়া জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী, ওয়ার্কাস পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন বলে নিশ্চিত করেছেন।

বাবার সম্মতি ও ইচ্ছাতেই নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন জানিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী রাষ্ট্রপতি পুত্র আরশাদ আদনান রনি বলেন, ‘আমি পাবনা-৫ আসন থেকে নৌকার কান্ডারি হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করছি। আমি পাবনাবাসীকে জানাতে চাই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি মনোনয়ন চাইবো এবং তিনি নির্বাচন করার সুযোগ যদি দেন তাহলে নৌকাকে বিজয়ী করে পাবনার মানুষের জন্য কাজ করার চেষ্টা করবো।’

মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, ‘টানা তিনবার সংসদ সদস্য হিসেবে এ আসনের জনগণের সেবা করে আসছি। দলীয় প্রধানের কাছে এবারও নৌকা প্রতীক চাইবো। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি আশাবাদী আমার আসনের সর্বস্তরের মানুষের ভালোবাসায় আবারও নির্বাচিত হয়ে সেবা করার সুযোগ পাবো।’

/এসবি/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়