ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

৩ নভেম্বরের জেল হত্যাকাণ্ড

প্রিয় নেতা সৈয়দ নজরুলকে আজো ভুলতে পারেনি স্বজনরা 

রুমন চক্রবর্তী, কিশোরগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২১, ৩ নভেম্বর ২০২৩  
প্রিয় নেতা সৈয়দ নজরুলকে আজো ভুলতে পারেনি স্বজনরা 

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন জাতীয় চার নেতা। তাঁদেরই একজন কিশোরগঞ্জের কৃতিসন্তান দেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তিনি ছিলেন কিশোরগঞ্জবাসীর প্রিয় নেতা, একান্ত আপনজন। তাঁকে হারানোর কষ্ট আজো ভুলতে পারেননি স্বজন ও নেতাকর্মীরা। 

স্বাধীন বাংলার অন্যতম রূপকার সৈয়দ নজরুল ইসলাম কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার যশোদল ইউনিয়নের বীরদামপাড়া গ্রামে জন্মেছিলেন। স্বাধীনতার পর পালন করেন শিল্পমন্ত্রীর দায়িত্বও। সুযোগ পেলেই ছুটে যেতেন গ্রামের বাড়ি বীরদামপাড়ায়। অকৃত্রিম ভালোবাসায় মিশতেন সবার সঙ্গে। তাই গ্রামের প্রবীণরা আজো ভুলতে পারেন না তাঁকে। গ্রামবাসীর হৃদয়ে স্বজনের মতো জায়গা করে আছেন এই সংগ্রামী নেতা।

তবে তাঁর স্মৃতিঘেরা বাড়িটি বর্তমানে জরাজীর্ণ। বাড়ি জুড়ে অযত্ন-অবহেলার ছাপ। ছেলে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম জীবিতকালে মাঝেমাঝে আসতেন বাড়িতে। এখন পরিবারের কেউ আর বাস করেন না সেখানে। সৈয়দ নজরুলের স্মৃতিস্মারক বলতে কিছু নেই বাড়িতে। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা দেখাশোনা করেন বাড়িটি। গ্রামের লোকজন বলছেন, সৈয়দ নজরুল ইসলামের বাড়ি ঘিরে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হোক, যেখানে তাঁর স্মৃতি, সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিষয়গুলো মূর্ত হয়ে থাকবে। যা দেখে উদ্বুদ্ধ হবে নতুন প্রজন্ম।

সৈয়দ নজরুল ইসলামের গ্রামের বাড়ির প্রতিবেশী মো. আজিজুল হক। সেদিনের ঘটনা হলেই তার চোখ ছলছল করে উঠে। তিনি বলেন, এভাবে প্রিয় নেতাকে হারাবো কখনও ভাবিনি। জেল হলো একটি নিরাপদ জায়গা সেখানে নিমর্মভাবে হত্যা করা হয়, আমাদের প্রাণপ্রিয় নেতাকে। স্বাধীন বাংলার বিনির্মাণে ঊনার ভূমিকা ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আমরা ঊনার এমন নৃশংস হত্যার পূর্নাঙ্গ বিচারের দাবি জানাচ্ছি।  

তরুণ বয়সে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন সৈয়দ নজরুল। জাতীয় সব আন্দোলন সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর পাশে ছিলেন তিনি। একাত্তরে বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হলে নিজের কাঁধে তোলে নেন মুক্তিযুদ্ধের সব দায়িত্ব। দেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন মুক্তিযুদ্ধের। স্বাধীনতার পর শিল্পমন্ত্রী থাকাকালে তাঁর হাত ধরে কিশোরগঞ্জ গড়ে ওঠে বেশকিছু শিল্প-কারখানা। এতে কর্মসংস্থান হয় এলাকার বহু মানুষের। এ অবদানের কথা কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন এলাকাবাসী। তবে সেই শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো আজ আর চালু নেই। একে একে বন্ধ হয়ে গেছে সব।

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান বলেন, সৈয়দ নজরুল ইসলামসহ জাতীয় চারনেতার যে বিচারটি হয়েছে, আমি মনে করি সেটি অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে। চারনেতার মূল হত্যাকারীর পেছনে আরও যারা রয়েছে, তাদেরকে বিচারের আওতায় এনে তদন্তের মাধ্যমে একটি পূর্ণাঙ্গ বিচারের দাবি জানাচ্ছি।

পিতার এমন কষ্টের মৃত্যুর কথা মনে হলে আজো শিউরে উঠেন নজরুল ইসলাম কন্যা কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদ‌স্য ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারের হত্যার পর ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে তাজউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এএইচএম কামরুজ্জামানের সাথে হত্যা করা হয় সৈয়দ নজরুল ইসলামকেও। প্রিয় পিতাকে এভাবে হারাতে হবে কোনোদিন ভাবিনি। 

তিনি আরও বলেন, খুনি মোস্তাক জাতীয় চারনেতার সঙ্গে সমঝোতা করতে চেয়েছিলো, কিন্তু তারা সেটি করেননি। তাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখানো হয়েছিলো। কিন্তু আমার পিতাসহ কেউই মোস্তাকের ফাঁদে পা দেননি। এই চারনেতা তাদের মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও মৃত্যুকেই আলিঙ্গন করেছেন। তবুও দেশের প্রতি ভালবাসায় কেউ বেঈমানি করেননি। আমি জাতীয় চারনেতার এমন নির্মম-নৃশংস জেল হত্যার পূর্ণাঙ্গ বিচার দাবি করছি।

/টিপু/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়