ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

ব্যাংকের ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ম্যানেজার বরখাস্ত

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:১৮, ৪ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২০:২১, ৪ নভেম্বর ২০২৩
ব্যাংকের ৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ: ম্যানেজার বরখাস্ত

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে সোনালী ব্যাংক গোবিন্দাসী শাখার গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্রের ৫ কোটি টাকা আত্মসাতের দায়ে ম্যানেজারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আত্মসাতের এসব টাকা শাখা ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম, তার ভাই, বন্ধুর শাশুড়ির একাধিক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আত্মসাত করা হয়েছে বলে ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে, এ ঘটনায় সোনালী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় ও টাঙ্গাইল প্রিন্সিপাল কার্যালয় থেকে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শহিদুল ইসলাম ম্যানেজার হিসেবে সোনালী ব্যাংক গোবিন্দাসী শাখায় ২০২০ সালে যোগদান করেন। তিনি ওই শাখায় ৩ বছর ২ মাস কাজ করেন। এই সময়ে শহিদুল ইসলাম কৌশলে ব্যাংকের ১৩০ জনের সঞ্চয়পত্রের টাকা লুজ চেকের (জরুরি উত্তোলণের জন্য একক পাতা) মাধ্যমে অন্য অ্যাকাউন্টে ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা সরিয়ে নেন। এছাড়া উপজেলার গাবসারা ইউনিয়নের হত দরিদ্রদের ভাতার ৬ লাখ ৮১ টাকাও গায়েব করা হয়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, সোনালী ব্যাংক ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম তার বড় ভাই ঘাটাইল উপজেলার লোকেরপাড়া গ্রামের মহির উদ্দিনের তালুকদারের এগ্রো ফার্ম ও কালিহাতী উপজেলার আদাবাড়ি গ্রামের খালেদা বেগম নামে পলাশ এগ্রো ফার্মের অ্যাকাউন্টসহ তার বন্ধু-বান্ধবদের অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে টাকা আত্মসাত করেন। খালেদা বেগমের মেয়ের জামাই পটুয়াখালী জেলায় দুদকের উপ-পরিচালক মামুন চৌধুরীর সঙ্গে শহিদুল ইসলামের বন্ধুত্বের কারণে ওই হিসাব নম্বর ব্যবহার করে টাকা সরানোর অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া, কেন্দ্রীয় সোনালী ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে গোবিন্দাসী শাখা থেকে ঋণের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন শহিদুল ইসলাম।

উপজেলার কয়েড়া গ্রামের মর্জিনা নামের ভুক্তভোগী এক গ্রাহক জানান, মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার জন্য জমি বিক্রি ও অন্যান্য মিলিয়ে ২১ লাখ টাকা ব্যাংকে সঞ্চয়পত্রে রেখেছিলাম। কিন্তু পরে লভ্যাংশ তুলতে গিয়ে দেখি সঞ্চয়পত্রে টাকাই জমা হয়নি। ব্যাংক ম্যানেজার কৌশলে অনেক গ্রাহকের টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

রুহুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শেফালী বেগম জানান, রক্ষক যদি ভক্ষক হয় তাহলে কি করবো আমরা। কয়েক মাস লাভের টাকা তুলেছিলাম। ম্যানেজার শহিদুলকে বদলি করার পর ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারি আমার সঞ্চয়পত্রই খোলা হয়নি। প্রতিকার চেয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দিয়েছি।

তালুকদার এগ্রো ফার্মের মালিক মহির উদ্দিন বলেন, ব্যাংকে একাউন্ট করার পর ৭ লাখ টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই ঋণের টাকাসহ জমি বন্ধক রেখে ভাইকে (শহিদুল) আরো দুইলাখ টাকা দিয়েছি। একাউন্টে কয় টাকা আছে বা নেই আমি কিছুই জানি না। চেকের পাতাগুলোতে সই নিয়ে রেখেছিলেন শহিদুল।

পলাশ এগ্রো ফার্মের মালিক খালেদা বেগম বলেন, অ্যাকাউন্টের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কত টাকা আছে বা নেই তাও জানি না। মেয়ের জামাই মামুন চৌধুরী অ্যাকাউন্টে লেনদেন করতেন তার লোকজন দিয়ে। ব্যাংক ম্যানেজার শহিদুল তার বন্ধু ছিল। তাই গোবিন্দাসী শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছিল। ঝামেলার কারণে দেড় মাস আগে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছি।

পটুয়াখালী দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপ-পরিচালক মামুন চৌধুরী বলেন, শহিদুলের সঙ্গে ঢাকায় পড়ালেখার কারণে পরিচয়। পরিচিত হওয়ায় তার ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে শাশুড়ির নামে। বিভিন্ন সময় ব্যাংকে লেনদেন করা হয়েছে। শাশুড়ির অ্যাকাউন্টে তো নগদ টাকা জমা দেওয়া হয়েছে কিন্তু সেখানে যদি ম্যানেজার অন্য অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তার অ্যাকাউন্টে জমা দিয়ে উত্তোলণ করেন তাহলে আমাদের কিছুই করার নেই।

সাময়িক বরখাস্ত হওয়া ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম বলেন, ম্যানেজারের আইডি হ্যাক করে টাকা আত্মসাত করে আমাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমাকে বদলি করার পর আমার আইডি ব্যবহার করে টাকা সরানো হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের কাগজপত্রগুলো ব্যাংকের পিয়ন লাভলুর বাড়িতে পোড়ানো হয়েছে। এছাড়া এখনো গ্রাহকদের সঞ্চয়পত্রের টাকা আত্মসাৎ করা হচ্ছে।

সোনালী ব্যাংক গোবিন্দাসী শাখার ম্যানেজার ফিরোজ আহম্মেদ বলেন, যেহেতু তদন্ত হচ্ছে, সেহেতু এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা যাবে না। প্রতিদিনই ভুক্তভোগী গ্রাহকরা ব্যাংক ভিড় করছেন টাকা ফেরত পাবার আশায়।

সোনালী ব্যাংক প্রিন্সিপাল অফিস ঘাটাইলের ডিজিএম আব্দুল্লাহ ফয়সাল বলেন, গ্রাহকদের টাকা আত্মসাতের ঘটনায় ম্যানেজার শহিদুল ইসলাম দোষ স্বীকার করায় তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এছাড়া প্রধান কার্যালয় তদন্ত করছে। অন্যদিকে, দুদকে একটি মামলা হয়েছে। গ্রাহকদের হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা টাকা ফেরত পাবেন।

কাওছার/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়