ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

গাজীপুরে নদীর গল্প শোনালেন তাঁরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:১৬, ৪ নভেম্বর ২০২৩  
গাজীপুরে নদীর গল্প শোনালেন তাঁরা

নদীর সঙ্গে আমাদের অস্তিত্ব, আর্থ-সামাজিক অবস্থা, জীবন, অর্থনীতি, পর্যটন, সাহিত্য ও সংস্কৃতি অনেকাংশেই নির্ভরশীল। তাই নদীভিত্তিক জীবন, অর্থনীতি ও পর্যটন সম্পর্কে গভীর জ্ঞান এবং পরিণত উপলব্ধির প্রয়াস যোগাতে বেলা,  প্রকৃতি ও জীবন এবং বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো ‘এসো নদীর গল্প শুনি’। অনুষ্ঠানে অংশ নেন তিন শতাধিক বিভিন্ন শ্রেণির আমন্ত্রিত অতিথিরা। এদের মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সংস্কৃতিকর্মী, সুধীজন ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা ছিলেন। 

শনিবার (৪ নভেম্বর)  সকাল ১০টা থেকে গাজীপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার অডিটোরিয়ামে আসতে শুরু করেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। নির্ধারিত আসনে বসে তারা উপভোগ করেন নদীর নানাবিধ গল্প।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মনির হোসেনের সঞ্চালনায় ও প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশন চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবুর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন- গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও প্রধান আলোচক ছিলেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। বিষয়ভিত্তিক আলোচনা করেন ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অধ্যাপক অসীম বিভাকর এবং রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এজাজ।

অনুষ্ঠানের শুরুতেই মালয়েশিয়া থেকে ভ্যার্চুয়ালী নদী বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ বক্তব্য রাখেন- গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট সেন্টারের বিভার কেয়ার ম্যানেজার ড. কালিদ দাসান। তিনি তার বক্তব্য নদীর গুরুত্ব, দূষণ এবং প্রতিকার নিয়ে নানাবিধ আলোচনা করেন। জলবায়ু পরিবর্তন, মানব জাতির জন্য নদীর গুরুত্ব এবং নদীর স্বাস্থ্য নিয়ে কথা বলেন তিনি। দূষণ রোধে মানুষের করণীয় ও দায়িত্বের কথা তুলে ধরেন। এসময় তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে নদী নিয়ে কাজ করার কথা বলেন এবং বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের চেয়ারম্যানের ভূয়সী প্রশংসা করেন। 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবীদ সমিতি বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, নদী একটি জীবন্ত সত্তা। নদীকে আমাদের মানুষের মতো জীবন্ত মনে করবো। নদীকে বাঁচাতে না পারলে নিজেরাও বাঁচতে পারবো না। নদী আমাদের পানি দেয়। নদীকে আমরা মেরে ফলেতে পারি, কিন্তু সৃষ্টি করতে পারি না। নদীর সঙ্গে মানুষের আত্মার সম্পর্কে আছে। নদীর পানির স্রোত আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। আমাদের আমিষের চাহিদা মেটায়, আমাদের কৃষকের বাঁচিয়ে রাখে নদী। আমাদের আগামী প্রজন্মকে সুন্দরভাবে বাঁচানোর জন্য নদীকে রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব। 

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গাজীপুর জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, এসো নদীর গল্প শুনি, এই নামটি দারুণ সুন্দর। এই নামটি এই আয়োজনের অন্যতম সফলতা। শিল্পায়নের ফলে নদী দখল ও দূষণ বেড়ে যায়। নদী নিয়ে সরকারি আইনকানুন অনেক বেশি শক্তিশালী। এরমধ্যেও নদী দখল ও দূষণ হচ্ছে। এজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। যদি আমরা সচেতন হতে না পারি, তাহলে নতুন প্রজন্ম চরম ক্ষতির মধ্যে পড়বে। নদী জীবন্ত সত্তা, একে হত্যা করা যাবে না। যারা নদী নিয়ে কাজ করেন তাদের অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে। আমাদের নদী দখলে অনেক শক্তিশালী লোক পেছনে থাকে। এসবের মধ্যেও আমাদের নতুন প্রজন্মের জন্য সুন্দর বাসযোগ্য পৃথিবী করার জন্য সচেতন হওয়া জরুরি। 

বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মনির হোসেন বলেন, আমরা শিল্পের বিরুদ্ধে না, আমরা নদী বান্ধব শিল্প চাই। আমাদের নতুন প্রজন্মকে নদী চিনতে হবে। নদী এবং পরিবেশ সম্পর্কে উন্নত এবং স্পষ্ট ধারণা, নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার, নদীর সুরক্ষা ও সংরক্ষণের নিয়ম জেনে সমাজের প্রয়োজনে তা কাজে লাগানো এবং নদীর সঙ্গে স্বাস্থ্যকর সহাবস্থানের ক্ষেত্রে আমাদের প্রয়োজনীয় অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তোলার প্রচেষ্টা শৈশব থেকেই শুরু হওয়া উচিত। বলাবাহুল্য, আমাদের প্রচলিত শিক্ষা-ব্যবস্থা বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেই অন্তর্দৃষ্টি গড়ে তোলার জন্য যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে অত্যন্ত উৎসাহব্যঞ্জক এবং কার্যকর একটি পদ্ধতি হলো সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষ পাঠচক্র, বিষয়ভিত্তিক আড্ডা ও ক্যাম্পেইনসহ নদী-বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা।

সভাপতির বক্তব্যে মুকিত মজুমদার বাবু বলেন, যারা নদী নিয়ে কাজ করেন ও আন্দোলন করেন তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমরা যদি ভালো না থাকি, প্রকৃতি ভালো থাকে না। আবার প্রকৃতি ভালো না থাকলে আমরাও ভালো থাকি না। তাই আমাদের উচিৎ প্রকৃতিকে এবং নদীকে ভালোবাসা, তাদের রক্ষা করা। পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় পরিবারের অনেক দায়িত্ব রয়েছে। শিশুদের শিক্ষা দেওয়া জরুরি। আমরা মসজিদ ও মন্দিরের আদব রক্ষার শিক্ষা দেই, কিন্তু পরিবেশ রক্ষার শিক্ষাটাই দেই না। ফলে প্রকৃতি দখল হলে ও নষ্ট হলে অনেকেরই খারাপ লাগা কাজ করে না। আমরা ছেলেবেলায় নদীর পানি খেয়েছি। আমরা কল্পনা করিনি যে নদী দূষণ হবে, নষ্ট হবে বা মাছ পাওয়া যাবে না।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সাসটেইনেবিলিটি এন্ড জিএস কলম্বিয়া ওয়াশিং প্লান্ট লি. এর মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মেজর (অব.) মো. ইমতিয়াজ ইসলাম ও ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের উপপরিচালক ড. সেলিম শেখ। অনুষ্ঠানে সম্মানিত আলোচক হিসাবে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ নদী পরিব্রাজক দলের সভাপতি প্রকৌশলী হাবিবুর রহমান, সম্মানিত আলোচক অধ্যক্ষ মুকুল কুমার মল্লিক, বেলার হেড অব প্রোগ্রাম ফিরোজুল ইসলাম মিলন প্রমুখ। 

এসো নদীর গল্প শুনি অনুষ্ঠানে অংশ নেন- ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজ, গাজীপুর কমার্স কলেজ, গাজীপুর মেট্রোপলিটন কলেজ, গাজীপুর জেলা কলেজ, মাওনা মডেল কলেজ, সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাঠশালা মুসাফির ইশকুল, প্রথম আলো বন্ধুসভা, রোটারি ক্লাব গাজীপুর, অনির্বাণ সেবা ফাউন্ডেশন, বইপোকা পাঠাগারে, গাজীপুর ট্যুরিস্ট ক্লাব। পরে তাদেরকে সার্টিফিকেট ও শুভেচ্ছা উপহার পাটের ব্যাগ, গামছা ও একটি করে বই উপহার দেওয়া হয়। 

রেজাউল/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়