ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

ডা. কাজেমের খুনিরা ধরা পড়েনি, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি চিকিৎসকদের

রাজশাহী প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ৫ নভেম্বর ২০২৩  
ডা. কাজেমের খুনিরা ধরা পড়েনি, কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি চিকিৎসকদের

এক সপ্তাহেও রাজশাহীর যৌন ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমেদের খুনিরা ধরা পড়েনি। কী কারণে এই হত্যাকাণ্ড সেটিও উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এ অবস্থায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। 

রোববার (৫ নভেম্বর) সকাল বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশে তারা এই হুঁশিয়ারি দেন। কর্মবিরতির অংশ হিসেবে এই সমাবেশ করেন তারা। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) রাজশাহী শাখা এ কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল। এর আগে, গতকাল শনিবারও এক ঘণ্টা হাসপাতালের সামনে একই কর্মসূচি পালিত হয়। সমাবেশ থেকে তারা ডা. কাজেমের খুনিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানান।

সমাবেশে রামেক হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের প্রধান ডা. হাফিজুর রহমান বলেন, পুলিশ বড় বড় অপরাধীদের খুব স্বল্প সময়ের মধ্যে গ্রেপ্তার করে ফেলতে পারে। কিন্তু ডা. কাজেমের খুনিদের এক সপ্তাহেও গ্রেপ্তার করতে পারেনি। এতে চিকিৎসক সমাজ উদ্বিগ্ন। তারা ভীতসন্ত্রস্ত। চিকিৎসকসমাজ কাজ ফেলে মাঠে নামলে কিন্তু ভালো হবে না।

বিএমএর রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি মোস্তফা আতাউর রহমান বলেন, ‘আমি একজন অ্যানেসথেসিয়াসিস্ট। সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের জন্য রাত-বিরাতে রিকশা নিয়েই চলে আসতাম। এখন আসি না। আমাদেরও প্রাণের ভয় আছে। এ অবস্থা তো চলতে পারে না। খুনিদের দ্রুতই গ্রেপ্তার করতে হবে। তা না হলে আমাদের আতঙ্ক কাটবে না। এর প্রভাব পড়বে রোগীদের ওপর।’

স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) রাজশাহীর সভাপতি ডা. চিন্ময় কান্তি দাস বলেন, ‘একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তৈরি করতে অনেক সময় লাগে। রাষ্ট্রের অনেক টাকাও খরচ হয়। মেধাবী চিকিৎসকরা রাষ্ট্রের সম্পদ। তাই তাদের এভাবে মেরে ফেলাটা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতির কারণ। এটা যেন আর না হয়। চিকিৎসকদের নিরাপত্তা এই রাষ্ট্রকেই নিশ্চিত করতে হবে।’

কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন বিএমএ’র রাজশাহীর সাধারণ সম্পাদক ডা. নওশাদ আলী। তিনি বলেন, ডা. কাজেম যে দলেরই সমর্থক হন না কেন, তিনি একজন চিকিৎসক। তাকে হত্যা করা চিকিৎসক সমাজ মেনে নেয়নি। হত্যাকারী যেই হোক না কেন, তাকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমরা পুলিশের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। এবার সিটি মেয়রের সঙ্গে দেখা করব। দ্রুতই খুনিরা গ্রেপ্তার না হলে প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ রাখা কিংবা আরও বেশি সময় ধরে কর্মবিরতি পালন করার কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

কর্মসূচিতে অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- বিএমএ রাজশাহীর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক ডা. আহমেদ আসিফ ইকবাল, কোষাধ্যক্ষ ডা. হাফিজুর রহমান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক আহমেদ মাসিয়া জামিল অরুপ, রামেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান ডা. হাসান তারিক, যৌন ও চর্মরোগ বিভাগের প্রধান ডা. নজরুল ইসলাম  প্রমুখ। সমাবেশ পরিচালনায় ছিলেন ডা. অংকুর স্যানাল।

প্রসঙ্গত, গত ২৯ অক্টোবর রাত পৌনে ১২টার দিকে চেম্বারে রোগী দেখা শেষ করে ফেরার পথে খুন হন যৌন ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গোলাম কাজেম আলী আহমদ। তিনি একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক ছিলেন। শিক্ষকতা ছেড়ে দেওয়ার পর বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে শুধু প্রাইভেট প্র্যাকটিস করতেন।

ডা. কাজেম যে রাতে খুন হন, সেই একই দিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরীর চন্দ্রিমা থানার কৃষ্টগঞ্জ বাজারের পল্লী চিকিৎসক এরশাদ আলী দুলালকে তুলে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। রাত ৯টার দিকে কয়েক কিলোমিটার দূরে সিটিহাট এলাকায় তার মরদেহ পাওয়া যায়। একইদিনে এ দুই চিকিৎসক খুনের ঘটনায় মামলা হলেও কোনো রহস্য উদঘাটন হয়নি।

রাজশাহী নগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-কমিশনার জামিরুল ইসলাম বলেন, দুটি খুনের ঘটনাই পুলিশ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। সন্দেহভাজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তবে, এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। খুব দ্রুতই খুনিদের শনাক্ত করা যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

কেয়া/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়