ঢাকা     শনিবার   ০৫ অক্টোবর ২০২৪ ||  আশ্বিন ২০ ১৪৩১

চান্দার বিলের জলাশয় দখল করে মাছ চাষের অভিযোগ

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৪৯, ৭ নভেম্বর ২০২৩  
চান্দার বিলের জলাশয় দখল করে মাছ চাষের অভিযোগ

গোপালগঞ্জের ঐতিহাসিক চান্দার বিলের প্রায় এক হাজার একর জলাশয় অবৈধ দখল করে এবং বাঁশের পাটা ও নেট দিয়ে ঘিরে মাছ চাষ করেছেন প্রভাবশালীরা বলে অভিযোগ ‍উঠেছে। আর এ কারণে জলাশয়ে মাছ শিকার করে ও শাপলা তুলে জীবিকা নির্বাহকারীরা বিলে নামতে পারছেন না। প্রতিবাদ করলেই প্রভাবশালীদের হাতে শারিরিকভাবে নির্যাতিত হতে হচ্ছে তাদের। ফলে দৈনন্দিন জীবিকা বন্ধ হয়ে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে সদর উপজেলার সাতপাড় ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের বাসিন্দাদের।

চান্দার বিল গোপালগঞ্জ জেলার একটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় এলাকা। বলা চলে দেশীয় প্রজাতির মাছের মিলন মেলা এই চান্দার বিল। সদর উপজেলা, মুকুসুদপুর ও কাশিয়ানী উপজেলার বিশাল এলাকা জুড়ে বিলের অবস্থান। এই বিল এলাকার বাসিন্দাদের বেশিরভাগই অতিদরিদ্র সম্প্রদায়ের। বিলে মাছ শিকার করে, শাপলা তুলে, শামুক আহরণ করে বিক্রি করে চলে তাদের সংসার। কিন্তু, সাতপাড় ইউনিয়নের রাধানগর গ্রামের প্রভাশালী কুশল বৈরাগী, শান্ত মজুমদার, সুষেন বৈরাগী, উশল বৈরাগী, উত্তম বৈরাগী ও গোবিন্দ বৈরাগী গত ৪ থেকে ৫ বছর ধরে বিলের প্রায় ১ হাজার একর ফসলি জমির এলাকা জুড়ে মালিকদের অনুমতি ছাড়াই বাঁশের বানা ও নেট দিয়ে ঘিরে মাছ চাষ করছেন। এলাকার সাধারণ মৎসজীবী ও সাধারন মানুষ কেউ বিলে এমনকি নিজেদের জমিতেও মাছ শিকার করতে পারছেন না। এমন কি বিলের শাপলা তুলতে গেলেও শারিরিক নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

ভুক্তভোগী মৎস্যজীবী মো. ইলিয়াস কাজী বলেন, বিলে আমাদের প্রত্যেকের ৩ থেকে ৫ বিঘা করে জমি রয়েছে। কিন্তু যারা অবৈধভাবে ঘিরে মাছ চাষ করছেন তাদের কোনো জমি নেই। বিলের মধ্যে ৩টি পুকুর লিজ নিয়ে প্রায় হাজার একর এলাকা জুড়ে জমি মালিকদের না বলে গায়ের জোরে মাছ চাষ করছে অভিযুক্তরা। আমরা মাছ ধরতে ও শাপলা তুলতে গেলে বাঁধা দিয়ে আমাদের হুমকি দেওয়া হয়।

আরো পড়ুন:

অপর মৎস্যজীবী দুলাল মণ্ডল বলেন, বিলের মাছে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালীরা। প্রতিবাদ করতে গেলে আমাদেরকে জীবননাশের হুমকি দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসনের কাছে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে অভিযোগ দিয়েছি। কিন্তু, কাজের কাজ এখনো কিছু হয়নি, জলাশয় উন্মুক্ত হয়নি।

অপর ভুক্তভোগী কালিপদ মণ্ডল ও গৌর মণ্ডল বলেন, বিলের মাছ শিকার ও শাপলা তুলে বাজারে বিক্রি করে আমরা আয় রোজগার করি। কিন্তু প্রভাবশালীদের কারণে এখন কিছুই করতে পারছি না। ফলে অতিকষ্টে চলছে আমাদের সংসার। আমরা চাই বিল উন্মুক্ত করে দেওয়া হোক।

এসব বিষয় নিয়ে কথা বললে অভিযুক্ত মাছচাষি দলনেতা উশল বৈরাগী বলেন, আমরা চান্দার বিলের ওই এলাকায় গত ৯ বছর ধরে মাছ চাষ করছি। এতোদিন কোনো সমস্য হয়নি। আমাদের একজন পার্টনার চলে যাওয়ায় এ সমস্যা তৈরী হয়েছে। মূলত ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান প্রণব বিশ্বাস বাপী ও সাবেক চেয়ারম্যান সুজিত মণ্ডলের রাজনীতির দ্বন্দ্বের শিকার হচ্ছি আমরা। আমরা কোনো জমির মালিককে বাঁধা দেই না, কোন ক্ষতি করি না। বরং আমাদের ওই মাছের ঘেরে পাহারা থাকায় এলাকার লোক শান্তিতে থাকে।

স্থানীয় সাতপাড় ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রনব বিশ্বাস বাপ্পী বলেন, রাধানগর গ্রামের ভুক্তভোগী লোকজন আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে। আমি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দিক-নির্দেশনা মোতাবেক উভয় পক্ষকে ডেকে বিষয়টি মিমাংসার চেষ্টা করেছি। বানা ও নেট তুলে জেলেদের জমি উন্মুক্ত করে দেওয়ার জন্য বলেছি। কিন্তু মাছ চাষিরা আমার সিদ্ধান্ত মানেননি। এসব বিষয় আমি সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি। 

গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কমর্কর্তা (ইউএনও) মো. মহসিন উদ্দিন বলেন, আমি বিয়য়টি মিমাংসা করার জন্য সাতপাড় ইউযনিয়নের চেয়ারম্যানকে দ্বায়িত্ব দিয়েছিলাম। তিনি আমার সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু মাছ চাষিরা সিদ্ধান্ত মানেননি। বিষয়টি চেয়ারম্যান আমাকে জানিয়েছেন। আমি সরজমিনে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

বাদল/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়