হামলা ও হুমকির প্রতিবাদ
নিরাপত্তা চেয়ে অনশন করলেন বশেমুরবিপ্রবি শিক্ষার্থী, মানববন্ধন
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) আবাসিক হলে প্রবেশ করে মারধরের প্রতিবাদে ও জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে অনশনে বসেছিলেন ফিসারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স (এফএমবি) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. সাজ্জাদ হোসেন। গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে অনশন শুরু করেন তিনি। পরে গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ন্যায় বিচারের আশ্বাস দিলে অনশন ভেঙে হলে ফেরেন তিনি।
এদিকে, রোববার (১২ নভেম্বর) দুপুরে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী সাজ্জাদ হোসেনের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যমে অভিযুক্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা।
অভিযুক্ত একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রনি মৃধা ও তার সহযোগীরা। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ নভেম্বর ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসাইন্স বিভাগ ও ফার্মেসি বিভাগের মধ্যে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ হয়। এসময় দুই বিভাগের খেলোয়াড়দের মধ্যে কথা কাটাকাটি এবং এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ওইদিন রাতে ফার্মেসি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রনি মৃধা তার ১০-১২ জন সহযোগীদের নিয়ে শেখ রাসেল হলের ৬০৪ নম্বর কক্ষে গিয়ে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জাহিদ হোসেনকে কক্ষ থেকে বের করে ৫০৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে আটকে রেখে মারধর করেন।
এরপর ৬ নভেম্বর রনি মৃধা আবারো শেখ রাসেল হলে যান। ৩০৩ নম্বর কক্ষে প্রবেশ করে প্রথমে সাজ্জাদের কাছে তার বিভাগের অন্য দুই-তিন শিক্ষার্থীর নাম ধরে জানতে চান তারা কোথায় আছেন। এক পর্যায়ে সাজ্জাদের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে তাকে লোহার পাইপ দিয়ে মারধর করেন মৃধা। এসময় ছুরি দিয়ে মাথায় আঘাত করলে সাজ্জাদ হাত দিয়ে ঠেকাতে গেলে ছুরিতে তার বাম চোখের কোনে আঘাত লাগে। পরে সাজ্জাদকে গোপালগঞ্জ ২৫০-শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনার বিচার ও নিজের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করেন সাজ্জাদ। এতে আবারো ক্ষিপ্ত হয়ে গতকাল শনিবার দুপুরে সাজ্জাদকে হুমকি দেয়া হয়।
এ ঘটনায় কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনের ফটকে অনশনে বসেন সাজ্জাদ। রাত সাড়ে ১১টার দিকে প্রকটোরিয়াল বডি ও শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট সেখানে যান। তারা সাজ্জাদকে ন্যায়বিচার ও নিরাপত্তার প্রতিশ্রুতি দিলে রাত সাড়ে ১২টার দিকে সাজ্জাদ অনশন ভেঙে হলে ফেরেন।
অনশন চলাকালে ‘আমি কি পরবর্তী আবরার ফাহাদ? আর কত বিচারহীনতা? আমি মরলে কি টনক নড়তো প্রশাসনের? সন্ত্রাসীদের কারখানা কি বশেমুরবিপ্রবি? আমাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমাকে হত্যার চেষ্টার বিচার চাই। হামলার বিচার চাই। আমি বাঁচতে চাই, বাঁচতে দিন লেখা বিভিন্ন প্লাকার্ড প্রদর্শণ করেন সাজ্জাদ।
এদিকে ওই ঘটনায় ৬ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ডীন মো. হাসিবুর রহমানকে প্রধান করে ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি তদন্তের জন্য উভয় পক্ষকে নোটিশ প্রদান করে। তদন্ত কমিটিকে আজ রোববার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়।
এদিকে, ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স শিক্ষার্থী সাজ্জাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। দুপুরে রংপুর বিভাগীয় ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনের সামনে ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এতে ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
ভুক্তভোগী সাজ্জাদ বলেন, রনি মৃধা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তবে সে হলে থাকে না। সে হলে এসে জাহিদ হোসেনকে মারধর করলো। পরের দিন দুপুরে আমাকে মারধর করলো। আমরা অভিযোগ করলাম, কিন্তু কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষণিক কিছুই করলো না। তদন্ত কমিটি করেছে। তদন্ত করতে কিন্তু তদন্ত করতে করতে এর মধ্যে যদি আমাকে প্রাণে মেরে ফেলে তার দায়ভার কে নেবে? আমার নিরাপত্তা কে দেবে? বাইরে থেকে লোকজন নিয়ে এসে মারধর করে যায়, আমাকে হুমকি দিয়ে গেল আমাকে হত্যা করা হবে। আমরা বারবার বলতেছি, যে ওই দিনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হোক কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছেন গত ৬ তারিখ থেকে সিসিটিভি ফুটেজ উধাও। এটা রহস্যজনক ঘটনা। আজ আমাকে হুমকি দিয়ে গেল সেটা তো সিসি ক্যামেরায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমি দ্বিতীয় আবরার হতে চলেছি।
এ বিষয়ে শেখ রাসেল হলের প্রভোস্ট এমদাদুল হক বলেন, আমরা ঘটনা জানার পরপরই সাজ্জাদকে নিয়ে হসপাতালে যাই। তাকে সার্বিক নিরাপত্তার কথা বলি। একটা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা ওইদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা কর্মীদের সতর্ক করে বলেছিলাম, রনি মৃধা যেনো আর শেখ রাসেল হলে প্রবেশ করতে না পারে। গতকাল কিভাবে সে হলে প্রবেশ করল এটা আমার জানা নেই। এটা নিরাপত্তা কর্মীদের কিছুটা দুর্বলতা রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান বলেন, পূর্বের ঘটনায় তদন্ত কমিটি করেছি। জানতে পেরেছি রনি মৃধা গতকাল শেখ রাসেল হলে প্রবেশ করে ভুক্তভোগী দুই শিক্ষার্থীকে হুমকি দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আজ দিনের মধ্যেই তদন্ত কমিটি নিয়ে বসছি। তদন্ত কমিটির সুপারিশ শৃঙ্খলা কমিটিকে জানানো হবে। অতি দ্রুতই সমাধান হবে। অপরাধী যেই হোক তাকে শাস্তি পেতেই হবে।
বাদল/মাসুদ