ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

মৌসুমেও হাওরের মাছের চড়া দাম, বঞ্চিত সাধারণ ক্রেতা

রুমন চক্রবর্তী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:১৪, ১৫ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৮:১৭, ১৫ নভেম্বর ২০২৩
মৌসুমেও হাওরের মাছের চড়া দাম, বঞ্চিত সাধারণ ক্রেতা

শীত এখনো জেঁকে বসেনি। এরই মধ্যে হাওর অঞ্চলের নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করেছে। মৌসুমের প্রথম থেকেই বাজারে আসতে শুরু করেছে হাওরের মাছ। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতো এই মাছও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। হাওর এলাকার বাসিন্দা হয়েও অনেকে এ কারণে বাধ্য হয়ে কম দামে চাষের মাছ কিনছেন। 

প্রতি বছর কার্তিক মাসের শুরুর দিকে হাওর অঞ্চলসহ বিভিন্ন নদ-নদী, খাল বিলে পানি কমে যায়। এ সময় মাছ আহরণের মৌসুম। কিশোরগঞ্জের ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম ও নেত্রকোনার খালিয়াজুড়িসহ বিভিন্ন হাওর অঞ্চলে মাছ ধরতে জেলেরা এখন ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। সারারাত জাল টেনে মাছ ধরে ভোরে জেলেরা বালিখোলা ঘাটে নৌকা ভেড়ায়। ঘাট থেকেই চলে দর কষাকষি। অধিকাংশ জেলে প্রতিদিনের মাছ নির্দিষ্ট কোনো আড়তদারের কাছেই বিক্রি করেন। আড়ত থেকে মাছ চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বিশেষ করে রাজধানীসহ চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল, খুলনাসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহের বিভিন্ন জেলায়। 

সরেজমিনে করিমগঞ্জের বালিখোলা মাছের আড়তে গিয়ে দেখা যায়, হাওর অঞ্চলের মিঠাপানির ছোট-বড় নানা প্রজাতির দেশি মাছের আমদানি বেড়েছে। মৎস্য আড়তে বেড়েছে ব্যস্ততা। প্রতিদিন ভোর থেকেই নৌকাযোগে মাছ আড়তে আসতে শুরু করে। মাছ আড়তে আসার পরপরই বিক্রেতারা মাছের জাত প্রক্রিয়া শেষে বিক্রির জন্য সাজিয়ে বসেন। তারপর চলে বেচা-কেনা। রানী, কাকিয়া, পুটা, গুতুম, বাইম, শিং, মাগুর, চিংড়ি, কই, পাবদা, টেংরা, রুই, কাতলা, বোয়ালসহ প্রায় ৮০ থেকে ৯০ প্রজাতির দেশিয় মাছ বিক্রি হয় এ বাজারে। প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত বাজার বসে। তিন ঘণ্টায় বিক্রি হয় কোটি টাকার মাছ। যোগান বেশি থাকলে বিক্রির পরিমাণ দেড় থেকে দুই কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যায়।

তবে পাইকারী এ বাজার থেকে মাছ খুচরা বাজারে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। এতে সাধারণ ক্রেতারা পড়ছেন বিপাকে। একদিকে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, অন্যদিকে হাওরের মাছের প্রচুর দাম, ফলে অনেকেই ইচ্ছে থাকলেও উপায় না পেয়ে চাষের মাছ কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। 

বিভিন্ন খুচরা ক্রেতারা জানান, হাওর এলাকার বাসিন্দা হয়েও এখন তারা সুস্বাদু মাছ খেতে পারছেন না।  তার একমাত্র কারণ অধিক দাম। তাই বাধ্য হয়েই তারা দাম কম থাকায় চাষের পাবদা, টেংরা, তেলাপিয়া, পাঙ্গাস, কই, শিং মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। 

স্থানীয় বাজারগুলোতে আকার ভেদে হাওরের বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, রুই ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকা, ছোট চিংড়ি ১ হাজার থেকে ১২শ টাকা, বাইম ৮০০ থেকে ১২শ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা, বাচা ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, গোলশা ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা, টেংরা ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়াও অনেক প্রজাতির ছোট মাছ পাওয়া যায়। সেসব মাছ ৩০০-৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, হাওর এলাকায় মাছ ধরা মাত্র শুরু হয়েছে। অন্য বছরের তুলনায় এ বছর মাছ ধরা পড়ছে কম। তাই আড়ত থেকে কিনতে গিয়েও বেশি দাম দিতে হচ্ছে। খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। মাছ বেশি ধরা পড়লে খুচরা বাজারেও দাম কমে আসবে।

ইটনা এলাকার বিভিন্ন হাওর থেকে রুই, বোয়াল, চিংড়ি, গোলশা, টেংরাসহ নানা প্রজাতির মাছ নিয়ে বিক্রির জন্য আড়তে আসেন রহিম উদ্দিন। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, সারারাত আমরা কয়েকজন জাল টেনে মাছ ধরি। তারপর আড়তে এসে বিক্রি করি। মাছ জালে আসছে কম। ধীরে ধীরে পরিমাণ বাড়বে। তখন হয়তো দামও কিছুটা হাতের নাগালে চলে আসবে।

বালিখোলা বাজার আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. সিদ্দিক মিয়া রাইজিংবিডিকে জানান, বাজারে অন্তত ৬০টি আড়ত রয়েছে। কিশোরগঞ্জের বৃহত্তম হাওর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার হাওরের মাছ এ বাজারে বিক্রি হয়। প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো এ বাজারে শুধু হাওরের মাছ বিক্রি হয় প্রতিদিন প্রায় কোটি টাকার। এ বাজারে ফিসারির মাছ বিক্রি হয় না।  

গত কয়েকদিন হরতাল-অবরোধের কারণে যাতায়াত ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটায় মাছের দাম ঊর্ধ্বমুখী বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। 

তারা//

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়