ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

বগুড়ায় নবান্ন উপলক্ষে মাছের মেলা

বগুড়া প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৯, ১৮ নভেম্বর ২০২৩  
বগুড়ায় নবান্ন উপলক্ষে মাছের মেলা

বগুড়ার শিবগঞ্জের উথলীতে হয়ে গেলো নবান্ন উপলক্ষে মাছের মেলা। প্রায় ২০০ বছর ধরে নবান্ন উৎসব কেন্দ্র করে প্রতি বছর উথলীতে মাছের মেলা বসে। শনিবার (১৮ নভেম্বর) সকাল থেকে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতারা বড় মাছ কেনাবেচার জন্য মেলায় ভিড় করে। প্রতি বছর মেলায় এই এক দিনে লাখ লাখ টাকার মাছ বিক্রি হয়।  

ব্রিটিশ শাসনামলে জমিদার বুৎসিংহের কাছে স্থানীয়রা দাবি করেন হাট স্থাপনের। প্রজাদের কথা শুনে জমিদার প্রায় ৫২ বিঘা জমি হাটের জন্য দান করেন। সেই থেকে বাংলা বছরের ১ অগ্রহায়ণ স্থানটিতে নবান্ন মেলা অনুষ্ঠিত হয়।

নবান্ন উৎসব ঘিরে উথলী, রথবাড়ী, ছোট ও বড় নারায়ণপুর, ধোন্দাকোলা, সাদুল্লাপুর, বেড়াবালা, আকনপাড়া, গরীবপুর, দেবীপুর, গুজিয়া, মেদেনীপাড়া, বাকশন, গণেশপুর, রহবল শিবগঞ্জসহ প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ তাদের বাড়িতে করেছেন বিভিন্ন আয়োজন। মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়স্বজনদের নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে সেই নিমন্ত্রণে গ্রামগুলোতে আত্মীয়স্বজনের ভিড়ে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ভোরে মেলায় বড় মাছ নিয়ে হাজির হয়েছেন ব্যবসায়ীরা। শতাধিক দোকানে দেড় থেকে শুরু করে ১৫ কেজি ওজনের বাঘাইড়, বোয়াল, রুই, কাতলা, চিতল, সিলভার কার্প, ব্রিগেড কার্প, ব্লাড কার্পসহ নানা রকমের মাছ বিক্রি হচ্ছে। মেলায় বাঘাইড় ১৩০০ টাকা কেজি, বোয়াল ১৪০০ টাকা কেজি, রুই, কাতলা ও চিতল মাছ ৪৫০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও মাঝারি আকারের মাছ ৩০০ থেকে ৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ৩০০-৪৫০ টাকা দরে ব্রিগেড ও সিলভার কার্প মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে। 

নবান্নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নতুন আলু ২০০ টাকা কেজি, কেশর ২০০ টাকা এবং মিষ্টি আলু ২১০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়া মেলায় বিভিন্ন ধরণের মিষ্টি, জিলাপি, দইসহ খাবারের দোকান বসে। পাশাপাশি মাটির বাসনকোসনসহ ছোট বাচ্চাদের খেলনার দোকান নিয়ে হাজির হন ব্যবসায়ীরা।

উথলী গ্রামের খালিদ হাসান বলেন, মেলাটি অনেক পুরনো। মেলাকে ঘিরে লোকজন প্রায় কয়েক মাস আগে থেকে আর্থিক প্রস্তুতি নিয়ে থাকে কেনাকাটা করার জন্য। মেলায় মেয়ে-জামাইসহ আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেয়া হয়। প্রতিটি বাড়িতেই মেহমান দিয়ে ভরপুর থাকে। একেকটি পরিবারের এ মেলায় খরচ অন্তত ৫ হাজার টাকা। অনেকে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকাও খরচ করে। যার বাড়িতে যেমন মেহমান আসে, তার বাড়িতে তেমন খরচ।  

প্রদীপ নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, তার বাড়িতে অন্তত ১০ জন মেহমান এসেছেন। আরও আসার কথা রয়েছে। তিনি ৪ কেজি ওজনের সিলভার কার্প মাছ কিনেছেন। মিষ্টি কিনেছেন ৫ কেজি। এছাড়া নতুন আলুসহ বিভিন্ন ধরণের সব কিনেছেন। মাত্র ৪ কেজি মাছ দিয়ে হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটা দিয়েই হবে। এছাড়া শুধু আমরা না, বাড়ির মেহমানরাও মেলায় এসে মাছ কেনেন। আজকে আমরা আনন্দ করছি।’

মাছ ব্যবসায়ী উজ্জ্বল বলেন, তিনি ২ লাখ টাকার মাছ এনেছেন। গতবারের তুলনায় এবার মাছের দাম একটু বেশি। তবুও বিক্রি বেশ ভালো হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতা নারায়ণপুর গ্রামের আব্দুল ওয়াহাব জানান, মেলায় ছোট-বড় মিলে শতাধিক মাছের দোকান বসেছে। প্রত্যেক বিক্রেতা অন্তত ৫ থেকে ১০ মণ করে মাছ বিক্রি করেছেন। মেলায় মাছ সরবরাহের জন্য সেখানে রাত থেকে ২০টি আড়ৎ খোলা হয়। সেসব আড়ৎ থেকে স্থানীয় বিক্রেতারা পাইকারি দরে মাছ কিনে মেলায় খুচরা বিক্রি করেন।

শিবগঞ্জ পৌর মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক বলেন, ‘৩০০ বছরের পুরনো এই মেলায় সূর্যোদয়ের পর থেকে রাত পর্যন্ত মাছ কেনাবেচা হবে। এবার মাছের আমদানি ভালো। আশা করি এ বছর এখানে কোটি টাকার ওপরে মাছ কেনাবেচা হবে।’ 

শিবগঞ্জ উথলি হাটের ইজারাদার মো. বাদশা বলেন, বাংলার ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে প্রতিবছর সুষ্ঠুভাবে নবান্ন উপলক্ষে একদিনের এই মেলা হয়ে আসছে। আগে মেলাটি ক্ষুদ্র পরিসরে হলেও গত ৩০ বছর ধরে বড় পরিসরে হচ্ছে। শুধু আশপাশের গ্রামের নয়, পুরো বগুড়া জেলার মানুষ এখানে নবান্নের বাজার করতে আসেন এ মেলায়। 
 

এনাম/বকুল 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়