ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

কিশোরগঞ্জের ১২ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স

চিকিৎসক সঙ্কটে বেহাল চিকিৎসাসেবা

রুমন চক্রবর্তী, কিশোরগঞ্জ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:২১, ২০ নভেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২১:২৫, ২০ নভেম্বর ২০২৩
চিকিৎসক সঙ্কটে বেহাল চিকিৎসাসেবা

গ্রাম-গঞ্জের মানুষের চিকিৎসাসেবা সুষ্ঠুভাবে দিতে রয়েছে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। কিন্তু, কিশোরগঞ্জের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষজন। সাধারণ চিকিৎসা ছাড়া কোনো কঠিন রোগের চিকিৎসাই হচ্ছে না জেলার এসব স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে। ফলে নামমাত্র সেবা দিয়ে চলছে হাসপাতালগুলো। সেবা নিতে আসা মানুষদের অভিযোগ, চিকিৎসকসহ লোকবলের তীব্র সঙ্কটের কারণে জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য মতে, জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে সদর ছাড়া সবগুলোতে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে। এই ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসকের পদ ২৯৬টি। এরমধ্যে, শূন্য রয়েছে ১১৭টি পদ। পেষণে অন্য জায়গায় কর্মরত ৩৬ জন। সবমিলিয়ে ১৫৩ জন চিকিৎসক কম নিয়ে চলছে হাসপাতালগুলো। 

সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের তথ্য সূত্রে আরও জানা যায়, করিমগঞ্জে ৩২জন চিকিৎসকের মধ্যে আছেন মাত্র ১২জন। তাদের মধ্যে নিয়মিত ছুটিতে থাকেন অন্তত তিনজন। তাড়াইলে ২৮জনের মধ্যে রয়েছেন ১০জন, ভৈরবে ২৯ জনের মধ্যে ১৯জন, কুলিয়ারচরে ১৬ জনের মধ্যে ৮ জন, নিকলীতে ১৭ জনের মধ্যে ৯ জন, বাজিতপুরে ২১ জনের মধ্যে ১৪ জন, পাকুন্দিয়ায় ৩১ জনের মধ্যে ২১ জন, কটিয়াদীতে ৩১ জনের মধ্যে ১৩ জন, হোসেনপুরে ২৮ জনের মধ্যে ১৬ জন, ইটনায় ১৯ জনের মধ্যে ৬ জন, মিঠামইনে ১৬ জনের মধ্যে ৮ জন ও অষ্টগ্রামে ২৮ জন চিকিৎসকের মধ্যে কাজ করছেন মাত্র ৭ জন।

রোববার (১৯ নভেম্বর) করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, নিয়ম অনুযায়ী বর্হিবিভাগে রোগী দেখা শুরু হওয়ার কথা সকাল সাড়ে ৮টায়। কিন্তু সকাল ৯টার দিকেও এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসকদের কক্ষগুলো খালি। কোনো কক্ষে আবার ঝুলছে তালা। চিকিৎসক আসেনি বলে টিকিটও ছাড়া হচ্ছে না। যে কক্ষে শিশুদের দেখা হয়, সেখানে বসে থাকতে দেখা যায় হাসপাতালের  এমএলএসএস।

করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এমএলএসএস নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় রোগী দেখেন মেডিক্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট শাহনাজ পারভিন। তিনি আসেননি, তাই কোনো রোগীকে টিকেট দেওয়া হচ্ছে না। 

দুই বছরের সন্তান রাজিবকে নিয়ে সুরমা বেগম বালিখোলা গ্রাম থেকে সকালে এসেছেন হাসপাতালে। দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দরজার সামনে। শিশুটি গত চার-পাঁচদিন ধরে জ্বর ও কাঁশিতে আক্রান্ত। অসুস্থ তাই শিশুটিও বিরক্ত করছে। সুরমা বেগম বলেন, ‘সহালে এইহানো আইছি। বাড়িত অনেক কাম থুইয়া আইসি। মনে করছিলাম তাড়াতাড়ি ডাক্তার দেহাইয়া বাড়িত যাইয়াম গা। অহত দেখতাসি হেই দেরিই অহইতাসে। তাইলে সহালে আইয়া কি লাভ অইল আমার।’ 

ষাটোর্ধ আজিমুদ্দিনও এসেছেন একই গ্রাম থেকে। অসুস্থতার কারণে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না তিনি। হাড়ের ক্ষয়রোগে ভুগছেন। তিনিও বললেন, ‘কিছু ওষুধপত্রের জন্য এসেছি। দু’ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি।’ 

চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষায় থাকা ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, ‘জানি হাসপাতালে চিকিৎসক কম। তবু, যারা আছেন তারা যদি ঠিকমতো দায়িত্বটা পালন করতেন তাহলেও রোগীরা কমবেশি সেবা পেত।’

করিমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু শাহেদ রনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘৫০ শয্যা হাসপাতালে প্রয়োজনের তুলনায় চিকিৎসকের সংখ্যা অনেক কম। যারা রয়েছেন, তারা তিন পালায় ভাগ হয়ে কাজ করেন। বহির্বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্তরা সকালে ভর্তি রোগীদের দেখেন। এ কারণে বহির্বিভাগে তাদের বসতে কিছুটা দেরি হয়। এরপরও এখানে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ রোগী দেখা হয়।’ 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু করিমগঞ্জ নয়, চিকিৎসকের অভাবে জেলার ১২টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কোনোটাই কাঙ্খিত চিকিৎসেবা পাচ্ছেন না রোগীরা। বেশিরভাগ হাসপতালেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। যারা রয়েছেন, প্রায় সবাই মেডিক্যাল অফিসার। ফলে জটিল কোনো অসুখের চিকিৎসা দিতে পারেন না তারা। রোগীদের পাঠিয়ে দেওয়া হয় জেলা সদরের হাসপাতালে। 

এদিকে, কর্মচারী সঙ্কট নিয়ে তাড়াইল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলমাছ হোসেন রাইজিংবিডিকে বলেন, শুধু চিকিৎসক নয়, তৃতীয় ও চতুর্থশ্রেণির কর্মচারীর ঘাটতির কারণে নূন্যতম চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।

অষ্টগ্রামের উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ আলম শামীম চিকিৎসক সঙ্কটে সেবা ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, সঙ্কটের মধ্যেও রোগীদের যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করছেন তারা।  

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. সাইফুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘চিকিৎসক সঙ্কটের কারণে উপজেলা পর্যায়ের সরকারি হাসপতালগুলোতে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত অবহিত করছি। আশা করছি, নতুন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হলে এ সমস্যা কেটে যাবে।’

মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়