ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচোতে নারীর সুদিন
হবিগঞ্জ প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার ভুলকোট গ্রামে ভার্মি কম্পোস্ট সার ও কেঁচো বিক্রি করে স্বাবলম্বী হয়েছেন মোছা. শাহেনা আক্তার নামে এক নারী। উৎপাদিত সার ও কেঁচো বিক্রি করে তিনি বছরে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করছেন। তার আয়ে পরিবারের অভাব দূর হয়েছে। ফিরেছে সুদিন।
সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সিলেট অঞ্চলের কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পে জেলার বাহুবল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সহায়তায় ২০২০ সাল থেকে মোছা. শাহেনা আক্তার নিজ ঘরের পাশে পতিত কিছু জমিতে ইট বালি সিমেন্ট দিয়ে একটি চেম্বার (পাকা হাউস) নির্মাণ করেন। চেম্বারের উপরে ঢেউটিন ও বাঁশ দিয়ে ছাউনী করা হয়েছে। পরে আরও দুইটি চেম্বার নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে তিনটি চেম্বারের মধ্যে তিনি গোবর, কচুরিপানা ও ছোট ছোট করে কাটা কলাগাছের টুকরো মিশিয়ে ভিজানো পাটের থলে দ্বারা ঢেকে রাখেন।
৩ মাসের মধ্যে কম্পোস্ট সার ও কেঁচো উৎপাদন হয়। প্রতিকেজি সার ২০ থেকে ২৫ টাকা ও প্রতিকেজি কেঁচো বিক্রি করা হয় ১ হাজার টাকায়। ৩ মাসে তিনি ৩৬ মণ সার ও ৩০ কেজি কেঁচো উৎপাদন করতে পেরেছেন। এভাবে পুরো বছরজুড়ে তিনি সার ও কেঁচো উৎপাদন করছেন।
স্থানীয় কৃষকরা তার কাছ থেকে এ সার ক্রয় করে নিয়ে জমিতে প্রয়োগ করছেন। এতে করে বিষমুক্ত ফসলের চাষ করে তারা (কৃষকরা) লাভবান হচ্ছেন। পাশাপাশি কৃষকরা কেঁচো ক্রয় করেন সার তৈরির জন্য।
বাহুবল উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের ভুলকোট গ্রাম পরিদর্শনকালে কথা হয় মোছা. শাহেনা আক্তারের সাথে। তিনি বলেন, ‘পরিবারের যাবতীয় কাজ করতে হয়। অভাব পিছু ছাড়ছিল না। এক সময় উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম স্যার আমাদের এখানে এসে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরিতে উৎসাহ দেন। ফলে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি শুরু করি। এগুলো জমিতে প্রয়োগ করায় সম্ভব হচ্ছে কীটনাশকমুক্ত ফসল উৎপাদন। সেই সাথে আমি সার ও কেঁচো তৈরি করে সফলতা পেয়েছি।’
উপজেলার দ্বিমুড়া কৃষি ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম বলেন, ‘মোছা. শাহেনা আক্তার ব্র্যাকের স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে অবসর সময়ে তিনি বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট তৈরি করছেন। এতে তিনি সফলতা পেয়েছেন। প্রকল্পের প্রযুক্তি নিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন হচ্ছে। এ সার কৃষকরা জমিতে প্রয়োগ করছেন। এতে উৎপাদন হচ্ছে কীটনাশকমুক্ত ফসল।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচোসারে মাটির পানি ধারণ করার ক্ষমতা ও মাটি নরম করার ক্ষমতা রাখে। এছাড়া এতে আছে ৮৮ দশমিক ৩২ ভাগ জৈব পদার্থ, ১ দশমিক ৫৭ ভাগ নাইট্রোজেন, ১ দশমিক ২৬ ভাগ বোরন। এগুলো অন্যান্য জৈব সারে এত বেশি পরিমাণে নেই। কেঁচোসার ব্যবহার করলে চাষের খরচ কম হয়। উৎপাদিত ফসলের বর্ণ, স্বাদ, গন্ধ হয় আকর্ষণীয়। ফসলের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে। ভার্মি কম্পোস্ট বা কেঁচোসার উৎপাদন করতে গভীর মাটিতে যে ছাই রঙের কেঁচো পাওয়া যায় সেগুলো না নিয়ে বরং মাটির ওপর স্তরে থাকা লাল রঙের কেঁচো খুবই ভালো।’
মামুন/ফয়সাল