ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

কাজে আসছে না ১৩ কোটি টাকার ল্যান্ডফিল প্রকল্প 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৩, ২৩ নভেম্বর ২০২৩  
কাজে আসছে না ১৩ কোটি টাকার ল্যান্ডফিল প্রকল্প 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার স্যানিটারি ল্যান্ডফিল প্রকল্প নির্মাণের পরেও কোন কাজে আসছে না। পৌর এলাকার বাসিন্দাদের ময়লা-আর্বজনা নিয়মিত এ ল্যান্ডফিল ফেলার কথা থাকলেও তা রাস্তার পাশে ফেলা হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয়রা নানা ধরণের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে।

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে পৌরসভার এই স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণের কাজ শেষ হয়। নির্মাণের ৩ বছর পরও প্রায় ১৩ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প কোন কাজে আসছে না। পৌরসভার সকল বর্জ্য ও ময়লা-আর্বজনা ফেলা হচ্ছে পৌর এলাকার নয়াগোলায়। সেখানে রয়েছে বিসিক শিল্পনগরী, জেলা পুলিশ লাইন্স, মানুষের বাড়িসহ বিভিন্ন ধরণের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। নিয়মিত জায়গাটিতে বর্জ্য ফেলার কারণে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।

সংশ্লিষ্টদের মতে- প্রায় ২ লাখ ৮০ হাজার জনসংখ্যার এই পৌরসভায় দৈনিক ৫০ টন বর্জ্য তৈরি হয়। স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণে জমি অধিগ্রহণ ও অবকাঠামো নির্মাণকাজে মোট ব্যয় হয়েছে ১২ কোটি ৯৫ লাখ ১৪ হাজার ২৩৫ টাকা। বাংলাদেশ সরকার ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের অর্থায়নে তৃতীয় নগর পরিচালন ও অবকাঠামো উন্নতিকরণ প্রকল্পের আওতায় ল্যান্ডফিল নির্মাণকাজ শেষ হয়।

স্থানীয়দের অভিযোগ- পৌর প্রশাসনকে বারবার বাধা আর অভিযোগ দেওয়ার স্বত্বেও আবাসিক এলাকায় ফেলা হচ্ছে এসব বর্জ্য। ফলে স্থানীয়রা নানারকম রোগ-বালাইতে ভুগছে।

নয়াগোলার বাসিন্দা আসাদুল ইসলাম জানান- পৌরসভার যতগুলো ময়লা আর্বজনা হয়, প্রতিদিন তা জমা করে এখানে আবাসিক এলাকায় এনে ফেলা হয়। দীর্ঘদিন ধরে একই জায়গাতে আর্বজনা ফেলার কারণে, নানান ধরণের সমস্যা দেখা দিয়েছে।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শুনে আসছি সরকারি অর্থায়নে একটি স্যানিটারি ল্যান্ডফিল নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে ময়লা-আর্বজনা না ফেলে আমাদের এখানেই ময়লা ফেলা হচ্ছে। এখানে ময়লা ফেলার জন্য আমরা বারবার বাধা দিয়েছি, অভিযোগ দিয়েছি। এতদিনেও কোন সুরাহা হয়নি।

রিকশাচালক আজিজুল হক বলেন, ময়লা ফেলার জায়গার সামনে দিয়ে যাওয়ার আধা কিলোমিটার এলাকায় গন্ধ থাকে। ওই রাস্তা দিয়ে পারাপার হতে নাক ঢেকে যেতে হয়। যাত্রীদের খুব সমস্যায় পড়তে হয়। বৃষ্টি হলেও তো আরও সমস্যা- গন্ধ আরও তীব্র হয়।

তিনি আরও বলেন- বর্জ্যগুলো এমন আবাসিক এলাকায় এমন ময়লা-আর্বজনা না ফেলে শহরের বাইরে ফেলা হোক। এতে পৌরবাসী স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার শহর পরিকল্পনাবিদ মোহা. ইমরান হোসাইন বলেন- বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটর কারণে স্যানিটারি ল্যান্ডফিলটি পুরোপুরি চালু করা যায়নি। তবে বর্তমানে সেখানে পৌরসভার মধ্যে থাকা মনুষ্যবর্জ্য ফেলার কাজ চলছে। তবে বিভিন্ন ময়লা আর্বজনা ফেলার কার্যক্রম করার আগে প্রয়োজন পৌরবাসীর জনসচেতনতা তৈরি। এলক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভা। আশা করি, শিগগিরই পৌরসভার ল্যান্ডফিলটির কার্যক্রম শুরু হবে।

স্যানিটারি ল্যান্ডফিল প্রকল্পের তত্বাবধায়ক মো. ওয়াসিম বলেন- দীর্ঘদিন ধরে পুরোপুরি প্রস্তুত থাকলেও এখানে ময়লা-আর্বজনা ফেলা হয়না। আপাতত নয়াগোলায় খোলা জায়গায় ফেলা হচ্ছে পৌরসভার সকল বর্জ্য। কবে নাগাদ এখানকার কার্যক্রম শুরু হবে তাও তার জানা নেই।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মো. সালেহ্ উদ্দীন বলেন- আমাদের লোকবল ও বিভিন্ন সরঞ্জাম সংকট রয়েছে। পাশাপাশি পৌরবাসীর মাঝে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য বসতবাড়ি থেকেই আলাদা করে ডাস্টবিনে ফেলার বিষয়ে সচেতনতার অভাব রয়েছে। প্রধানত এই দুই কারণে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল না চালু করতে পারছে না পৌর কর্তৃপক্ষ।

তিনি আরও বলেন, বর্জ্য আলাদা করে ফেলতে বাড়িতে বাড়িতে আধুনিক ডাস্টবিন প্রদান ও জনসচেতনতা তৈরিতে উঠান বৈঠক করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১২ হাজার আধুনিক ও বর্জ্য পৃথক রাখার ডাস্টবিন প্রদান করা হয়েছে।

মেহেদী হাসান শিয়াম/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়