ঢাকা     শনিবার   ২৯ জুন ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৫ ১৪৩১

দুদকের মামলা: সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সাঈদ কারাগারে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:৫২, ২৮ নভেম্বর ২০২৩  
দুদকের মামলা: সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সাঈদ কারাগারে

জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে প্রতারণা, জালিয়াতি ও তথ্য গোপনের মাধ্যমে কনিষ্ঠ শিক্ষকদের এমপিও ভুক্তকরণসহ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়েরকৃত মামলায় সাতক্ষীরা সিটি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবু সাঈদকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। 

মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) দুপুরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। এসময় সাতক্ষীরা বিশেষ আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ চাঁদ মো. আব্দুল আলীম আল রাজী শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এর আগে, গত ৩০ অক্টোবর এ মামলায় অপর তিন আসামি সাতক্ষীরা সিটি কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এসএম আবু রায়হান, দর্শন বিভাগের প্রভাষক নাসির আহম্মেদ এবং হিসাব বিজ্ঞানের প্রভাষক অরুন কুমার সরকারকে কারাগারে পাঠান আদালত। সাতক্ষীরা আদালতের দুদকের প্যানেল আইনজনীবী অ্যাডভোকেট সাধন চক্রবর্তী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, প্রতারণা ও জাল জালিয়াতির মাধ্যমে কাগজপত্র তৈরি করে চার প্রভাষককে এমপিওভুক্ত করার মাধ্যমে ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আসামিদের বিরুদ্ধে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাস মামলা করেন। ২০২২ সালের ৯ মার্চ খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয় মামলাটি হয়। যা পরবর্তীতে সাতক্ষীরা বিশেষ আদালতে ২/২০২২ নং মামলা হিসেবে নথিভুক্ত হয়।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের খুলনা অফিসের সহকারী পরিচালক বিজন কুমার রায় চলতি বছরের ৫ মে আদালতে মামলার পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। গত ২৬ অক্টোবর দুদকের দাখিলকৃত অভিযোগপত্র গ্রহণ করে আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আদেশ দেন।

প্রসঙ্গত, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা নিয়ে রেজুলেশন জালিয়াতি করে সাতক্ষীরা সিটি কলেজে ২৪ জন শিক্ষক নিয়োগ ও ২১ জন শিক্ষককে এমপিওভুক্ত করার অভিযোগে ২০১৫ সালের ১৫ আগস্ট তদন্ত শুরু করেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক প্রবীর কুমার দাস। ২০২০ সালের ২২ ডিসেম্বর সাবেক অধ্যক্ষ ইমদাদুল হক ও সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ সুকুমার দাসের কাছ থেকে দুদক সাতক্ষীরা সিটি কলেজের দুর্নীতি সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য অবগত হন। অভিযুক্ত ২১জন প্রভাষক ও অধ্যক্ষ আবু সাঈদকে ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কয়েক দফায় দুদক কার্যালয়ে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। নেওয়া হয় তাদের লিখিত জবানবন্দি। পরবর্তীতে বাংলা বিভাগের প্রভাষক মো. মনিরুল ইসলাম, দর্শন বিভাগের প্রভাষক নাসির আহম্মেদ, ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক এসএম আবু রায়হান এবং হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অরুন কুমার সরকারের কাগজপত্র জাল বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়। ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই দুদকের হটলাইনে সিটি কলেজের এমপিও বঞ্চিত এবং কলেজ থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিতাড়িত বিধান চন্দ্র দাসসহ অন্যান্যদের অভিযোগের পর ২০২১ সালের ১৭ জানুয়ারির পর থেকে এসব শিক্ষককে তদন্ত কর্মকর্তার মুখোমুখি হতে হয়।

মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়, ব্যান বেইস এর তথ্য অনুসারে মো. মনিরুল ইসলামের প্রকৃত যোগদানের তারিখ ২০২১ সালের ২০ ডিসেম্বর। এসএম আবু রায়হানের যোগদানের তারিখ ২০০৫ সালের ১৭ মার্চ। মো. নাসির আহম্মেদ এর প্রকৃত যোগদানের তারিখ ২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর ও অরুন কুমার সরকারের যোগদানের তারিখ ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর। এইসব শিক্ষকদের যোগাদানের তারিখ জালিয়াতি করে মনিরুল ইসলাম ও অরুন কুমার সরকারের যোগদান ২০০৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর, এসমএম আবু রায়হান ও নাসির আহম্মেদের যোগদান দেখানো হয়েছে ২০০৯ সালের ১৪ ডিসেম্বর। অধ্যক্ষ আবু সাঈদের যোগসাজশে ওই চারজন শিক্ষক ২০১৯ সালের পহেলা ডিসেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট পর্যন্ত বেতন ভাতা বাবদ ২০ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৬ টাকা রুপালী ব্যাংক সাতক্ষীরা কর্পোরেট শাখা থেকে উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেন।

অভিযোগ রয়েছে, বর্তমানে আরও ১২জন শিক্ষকের তথ্য জালিয়াতি করে এমপিওযোগ্য নামের তালিকাভুক্ত করার অভিযোগে ২০২৩ সালের ১০ জুলাই থেকে ১২ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও অনুসন্ধানী কর্মকর্তা তাদেরকে ডেকে নিয়োগ সংক্রান্ত সকল তথ্য উপাত্ত রেকর্ড করেন। এছাড়া চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক আজিম খান শুভসহ চারজনের নামে দুদক থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে তাদের নিয়োগ সংক্রান্ত জটিলতা ও বেতন ভাতা গ্রহণের পরিমান জানতে চাওয়া হয়েছে।

শাহীন/মাসুদ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়