শাহজাহান ওমর নৌকার প্রার্থী হওয়ায় ঝালকাঠিতে বিভ্রান্তি
অলোক সাহা, ঝালকাঠি || রাইজিংবিডি.কম
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী ব্যারিস্টার মেজর (অব.) শাহজাহান ওমর ঝালকাঠি-১ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ গত রোববার সারা দেশে দল মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করে। তখন রাজাপুর-কাঁঠালিয়া নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের নাম ঘোষণা করা হয়। সেখানে হঠাৎ বিএনপির এক নেতার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার খবর বিস্ময় তৈরি করেছে নেতা–কর্মীদের মধ্যে।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খান সাইফুল্লাহ পনির বলেন, ‘শাহজাহান ওমরের নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার বিষয় কেন্দ্র থেকে আমাদের কাছে কোনো নির্দেশনা নেই। এ আসনে এখন পর্যন্ত বজলুল হক হারুন নৌকার মনোনীত প্রার্থী।’
এর বাইরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষযক উপ কমিটির সদস্য মো. মনিরুজ্জামান এ আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আর তৃণমূল বিএনপির পক্ষে এখানে প্রার্থী হচ্ছেন জসীম উদ্দীন তালুকদার।
শাহজাহান ওমরের প্রার্থিতা নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগ নেতা মনিরুজ্জামান মনির বলেন, শাহজাহান ওমরকে আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা–কর্মীরা মেনে নেবেন না। তাকে রাজাপুর ও কাঁঠালিয়ার জনগণ প্রত্যাখ্যান করবেন।
শাহজাহান ওমরের এভাবে দল পাল্টানো মেনে নিতে পারছেন না স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীরা। রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসিম আকন বৃহস্পতিবার রাত ৯ টার দিকে উপজেলার বাগরি এলাকার তার বাসভবনে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে বক্তব্যে শাহজাহান ওমরের নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করার তীব্র প্রতিবাদ জানান।
বিএনপি নেতা নাসিম আকন বলেন, ‘আমরা নেতা–কর্মীরা তার হাতে-পায়ে ধরেছি। তাকে বুঝিয়েছি, আপনি জীবনে সবকিছু পেয়েছেন এখন দলের সাথে বেইমানি করবেন না। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, তিনি দলত্যাগ করে দলের নেতা–কর্মীদের সাথে অন্যায় করেছেন। বেইমানি করেছেন।’
রাজাপুর বাইপাস মোড়ে উপজেলা বিএনপি কার্যালয় ছিলো শাহজাহান ওমরের জমিতে। সেখান থেকে বিএনপির সাইনবোর্ড ও ব্যানার ফেস্টুন নামিয়ে ফেলা হয়েছে। বিএনপির নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, এই কার্যালয় এখন শাহজাহান ওমরের নির্বাচনী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
২৮ অক্টোবর ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সহিংসতার পর পুলিশ বিএনপির নেতা–কর্মীদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান শুরু করে। এর ধারাবাহিকতায় ৪ নভেম্বর রাতে শাহজাহান ওমরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন ঢাকার বাসে আগুন দেওয়ার একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। ওই মামলায় তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় বিএনপির এই জ্যেষ্ঠ নেতাকে। প্রায় চার সপ্তাহ কারাবন্দী থাকার পর বুধবার দুপুরে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত থেকে জামিন পান শাহজাহান ওমর। সন্ধ্যার পরই কেরানীগঞ্জে ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ইউটিসি ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসে আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার কথা জানান শাহজাহান ওমর। তিনি বলেন, ঝালকাঠি-১ আসনে তাকে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। নৌকার প্রার্থী হিসেবে অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তিনি। এরপর তাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
ঝালকাঠির এই আসনে শাহজাহান ওমর ছাড়াও সদ্য বহিষ্কৃত বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার আবুল কাশেম ফখরুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আবুল কাশেম ফখরুল মানবতাবিরোধী অপরাধের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আইনজীবী ছিলেন। ওই মামলার বিচার চলাকালে নথি ফাঁসের ঘটনায় তিন বছরের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপি। এর মধ্যে সম্প্রতি আবুল কাশেম ফখরুল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিলে তাকে বহিষ্কার করে বিএনপি। তিনি ঝালকাঠি সদরের গাভারামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের বারুকাঠি গ্রামের সন্তান।
নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে আবুল কাশেম ফখরুল বলেছেন, ‘গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সাংবিধানিক বিধান অনুযায়ী নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো বিধান নেই। তাই আওয়ামী লীগ যাতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের জয়ী না হতে পারে, সে জন্য আমি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছি।’
/টিপু/