ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

এমপি হয়ে কপাল খুলেছে বেনজীরের

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৭:০৩, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩  
এমপি হয়ে কপাল খুলেছে বেনজীরের

বেনজীর আহমদ

শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগ করার পর প্রায় পাঁচ দশক ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বেনজীর আহমদ। ১৯৯১ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। নৌকার প্রার্থী হিসেবে প্রথম সংসদ সদস্য হন ২০০৮ সালে। 

জনশক্তি রপ্তানিসহ নানা ব্যবসায় সংশ্লিষ্ট বেনজীর আহমদ। সংসদ সদস্য হওয়ার পর তার কপাল খুলেছে। লাখপতি থেকে হয়েছেন কোটিপতি। ২০০৮, ২০১৮ ও ২০২৩ সালের নির্বাচনে অংশ নিতে তার জমা দেওয়া তিনটি হলফনামা থেকে জানা গেছে এমন তথ্য।

বেড়েছে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সময় আহমদ এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল বেনজীর আহমদের। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার আগের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আহমদ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সি ও আহমদ রিয়েল এস্টেট ডেভেলপার নামের দুটি প্রতিষ্ঠান যুক্ত হয়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বেড়েছে আরও দুটি। সবগুলো প্রতিষ্ঠানই পরিচালিত হয় ঢাকার ঠিকানা থেকে।

লাখপতি থেকে কোটিপতি

২০০৮ সালে বেনজীর আহমদের কাছে নগদ টাকা ছিল ১ লাখ ৭৫ হাজার আর স্ত্রীর নামে ছিল ৪ লাখ ৪ হাজার ৭৫০ টাকা। ব্যাংকে জমা টাকা ছিল ৪ হাজার ৮২ টাকা।

২০১৮ সালে বেনজীর আহমদের ব্যবসার আয় দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৯১ হাজার ৪৭৫ টাকায়। তার ওপর নির্ভরশীলদের আয় দাঁড়ায় ৫ লাখ ৮৪ হাজার ৪৩৫ টাকায়। ওই সময় তার কাছে নগদ ছিল ৩ লাখ ৫০ হাজার ৫৯১ টাকা। ব্যবসায় ছিল ৪২ লাখ ৬৪ হাজার টাকা এবং ব্যবসাবহির্ভূত অর্থ ছিল ৮৯ লাখ ২৬ হাজার ৩৮১ টাকা। স্ত্রী ও ছেলের আয় হয় যথাক্রমে ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৭৩০ টাকা ও ৪৯ লাখ ৩০ হাজার ১৮০ টাকা।

ব্যাংকে নিজের ও স্ত্রীর নামে জমা ছিল ৬৮ হাজার ২১৪ টাকা ও ৩ লাখ টাকা। নিজের নামে ১২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রও কিনেন তিনি।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোটিপতি বনে গেছেন বেনজীর আহমদ। আয়ের বিবরণী বলছে, বর্তমানে তার ব্যবসা থেকে আয় ৪ কোটি ৮৭ লাখ ৫৪ হাজার ৭ টাকা। সংসদ সদস্য ভাতা ও আহমেদ লজিস্টিকস লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে যথাক্রমে ৬ লাখ ৬০ হাজার ও ১২ লাখ টাকা পেয়েছেন। মোট অর্থের পরিমাণ ৫ কোটি ৬ লাখ ১৪ হাজার ৭ টাকা। স্ত্রী ও ছেলের ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় যথাক্রমে ১৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৯ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। নিজের এবং স্ত্রী ও ছেলের ব্যাংক জমা আছে যথাক্রমে ১ কোটি ৪ লাখ ৩৯ হাজার ১৯৮ টাকা, ২ লাখ ৩৫ হাজার ১৮৭ টাকা ও ২ লাখ ১৫ হাজার ৭৪৪ টাকা।

ঋণ বেড়েছে

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালে বেনজীর আহমদের ঋণ ছিল ৬৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যা ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫ কোটি ৪০ লাখ ১৭ হাজার ৮৪২ টাকায়। ২০২৩ সালের হলফনামা অনুযায়ী, বর্তমানে এই সংসদ সদস্যের ঋণ আছে ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে তার ৩ কোটি ৮ লাখ টাকার বেশি দেনা কমেছে এবং ২০০৮ সালের তুলনায় ঋণ বেড়েছে।

হয়েছেন অঢেল জমির মালিক 

২০০৮ সালে জমা দেওয়া বেনজীর আহমেদের হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ১৫ লাখ টাকা দামের আড়াই তলা বাড়ি ও ৫৬ শতাংশ জমি ছিল তার। ২০১৮ সালে ৭৯ লাখ ২০ হাজার টাকা দামের ১৫৫.২৫ শতাংশ কৃষিজমির মালিক হন তিনি। আর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তার ২ কোটি ৬৯ লাখ ৪৫ হাজার ৫৯০ টাকা দামের ৩৪৪.৭৫ শতাংশ কৃষিজমি আছে।

২০০৮ সালে নিউ ইস্কাটনে দিলু রোডের ১৬/এ ভবনে ১ কোটি ১৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার দুটি অ্যাপার্টমেন্টের মালিক ছিলেন বেনজীর আহমদ। ২০১৮ সালের হলফনামার তথ্য বলছে, ২০০৮ সালের সেই অ্যাপার্টমেন্ট দুটির দাম কমে হয়েছে ১ কোটি ১২ লাখ টাকা। আর ২০২৩ সালে এসে ওই অ্যাপার্টমেন্টের মূল্যমান একই আছে। পুরনো দুই আ্যপার্টমেন্ট ছাড়াও ৮ কোটি ৮৬ লাখ ৬৪ হাজার ৩১০ টাকা ও ২ কোটি ৬০ লাখ টাকায় আরও দুটি আ্যপার্টমেন্টের মালিক এবং ১ কোটি ৭২ লাখ ৫ হাজার টাকার দোকানের মালিক হয়েছেন গত পাঁচ বছরে। 

স্বর্ণ কমেছে, আসবাবপত্র-ইলেকট্রনিক্স ও গাড়ি বেড়েছে

২০০৮ সালে বেনজির আহমদের স্বর্ণ ছিল ২০ তোলা। সে সময় এর বাজারমূল্য ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। স্ত্রীর ছিল দেড় লাখ টাকা বাজারমূল্যের ৪৫ তোলা স্বর্ণ। ২০১৮ সালে স্ত্রীর স্বর্ণের পরিমাণ একই থাকলেও বেনজীরের নিজের স্বর্ণ কমে হয় ১৫ তোলা। ২০২৩ সালে স্বর্ণহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। স্ত্রীর কাছেও আছে মাত্র ১৫ হাজার টাকা মূল্যের ৫ তোলা স্বর্ণ।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় দুটি মামলার তথ্য উল্লেখ থাকলেও প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আর কোনো মামলার বিবরণ নেই এই সংসদ সদস্যের বিরুদ্ধে।

২০০৮ সালের আগে বেনজীর আহমদের বাড়িতে ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকার বিভিন্ন আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী ছিল। ২০১৮ সালে ছিল ৪ লাখ ২০ হাজার টাকার। বর্তমানে তার বাসায় ৮ লাখ টাকার আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী রয়েছে।

২০০৮ সালে কোনো গাড়ির বিবরণ ছিল না বেনজীর আহমদের হলফনামায়। ২০১৮ সালে তিনি ৭২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা মূল্যমানের গাড়ির মালিক হন। ২০২৩ সালে এসে তিনি এখন আগের মূল্যমানের গাড়ি ছাড়াও আরও ১ কোটি ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৯৫০ টাকা মূল্যমানের গাড়ির মালিক বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-২০ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত বেনজীর আহমদসহ ছয়জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।

সাব্বির/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়