ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৪২ পরীক্ষার্থীর কোড নম্বর ভুল

বরগুনা প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:২৯, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩  
প্রাইমারি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় ৪২ পরীক্ষার্থীর কোড নম্বর ভুল

কেন্দ্র শিক্ষকের ভুলের কারণে বরগুনায় ৪২ জন শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার্থীর রেজাল্ট অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা বলছেন, পুনরায় পরীক্ষা নেওয়ার কথা। এদিকে কেন্দ্র শিক্ষক বলছেন এটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। কেন্দ্র প্রধান দায়সারাভাবে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দায় এড়াচ্ছেন। 

শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) বরগুনা সদরে টাউন হল সড়কে অবস্থিত রেডক্রিসেন্ট বিদ্যানিকেতন স্কুলে ৮৪ জন প্রাথমিক সহকারী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়। ঘণ্টাব্যাপি এ পরীক্ষা সকাল ১০ টায় শুরু হলে মাত্র ২ মিনিট আগে কেন্দ্র পরিদর্শক হাসি আক্তার একটি কাগজে কোড নম্বর লিখে অপর কেন্দ্র পরিদর্শক প্রতাপ রায়ের নিকট দেয়। কোডটি হল পদ্মা-১৪৬৫, মেঘনা-৪৭৭৪, যমুনা-৩৬৭১ ও সুরমা-২৫৬৮। 

রেড ক্রিসেন্ট বিদ্যানিকেতন ৪ নম্বর কক্ষে দুই ভাগে ৭২১৭১১৬ হতে ৭২১৭২০০ মোট ৮৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ গ্রহন করেন। তাদের মধ্য ৪২ জন পরীক্ষার্থীর কোড হলো : সুরমা-৩৬৭১ যমুনা-২৫৬৮। কেন্দ্র পরিদর্শক হাসি আক্তার ভুল করে প্রতাপ রায়কে কোড নম্বর দেয় সুরমা ২৫৬৮ এবং যমুনা ৩৬৭১। প্রতাপ রায় ওই কোড নম্বর স্কুলের ব্ল্যাক বোর্ডে লিখে দেন। পরীক্ষার্থীরা ব্ল্যাক বোর্ডের লেখা দেখে উত্তরপত্র ভরাট করে।

শিক্ষা অফিসের তথ্য মতে, প্রকৃতপক্ষে যমুনার কোড হবে ২৫৬৮ এবং সুরমার কোড হবে ৩৬৭১। 

পরিদর্শক প্রতাপ রায় ওই ৪২ জন পরীক্ষার্থীর স্বাক্ষর নেন সুরমার সেটে যমুনার পরীক্ষার্থী এবং যমুনার সেটে সুরমার পরীক্ষার্থী। 

পরীক্ষার্থী মো. সবুজ মিয়া (রোল নম্বর ৭২১৭১৭১) কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমরা ৪ নম্বর কক্ষে ৪২ জন পরীক্ষা দিয়েছি। ওই ৪২ জন পরীক্ষার্থীর কোড যমুনা। কোড নম্বর ছিল ২৫৬৮। হাসি আক্তার ভুল করে আমাদের সুরমার কোড দিয়েছে। সুরমার কোড নম্বর ছিল ৩৬৭১। আমরা যমুনার ওএমআর শিট ভরাট করি। প্রকৃতপক্ষে হবে যমুনার কোড। আমরা পরীক্ষা শেষে অন্য পরীক্ষার্থীর সঙ্গে সেট মিলাতে গিয়ে দেখি হাসি আক্তার প্রতাপ রায়কে ভুল কোড নম্বর দিয়েছেন। প্রতাপ রায় ব্ল্যাক বোর্ডে আমাদের যে কোড লিখে দেয়। আমরাও তাই লিখি। বিষয়টি জানতে পেরে আমরা দ্রুত হাসি ম্যাডামের কাছে গিয়ে জানাই কোড নম্বর ভুল দিয়েছেন। এতে হাসি ম্যাডাম আমাদের উপর রেগে যান। 

পরে কেন্দ্র প্রধান রেড ক্রিসেন্ট বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক আবদুল হাকিম স্যারের কাছে যাই। তিনিও আমাদের কথায় কোন গুরুত্ব দেননি। আমি দ্রুত ব্ল্যাক বোর্ডের ছবি তুলে গণমাধ্যম কর্মিদের দেই। একই সঙ্গে বুয়েটের কোড নম্বর সংগ্রহ করি। আমরা সবাই একত্রিত হয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন দিয়েছি। কিন্তু আইনজীবীদের পরামর্শে আদালতে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

মো. সবুজ মিয়া আরও বলেন, আমার সরকারি চাকরির বয়স এই ২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত। আমরা চাই পরীক্ষা স্থগিত হয়ে আবার সঠিক কোডে পরীক্ষা হোক। 

পরীক্ষার্থী মো. সাইফুল ইসলাম (রোল-৭২১৭১৫৯) বলেন ৭৫ নম্বরের পরীক্ষা দিয়েছি। ৭০ টি সঠিক উত্তর হয়েছে। এখন আমার রেজাল্টই আসবে না। আমি কেন্দ্র পরিদর্শকদের শাস্তি চাই। পুনরায় সঠিক কোডে পরিক্ষা নেওয়া হোক।

৪ নম্বর কক্ষের কেন্দ্র পরিদর্শক প্রতাপ রায় বলেন, হাসি আক্তার নিজ হাতে একটি কাগজে কোড নম্বর লিখে আমাকে দিয়েছেন। তার লেখা দেখে আমি ব্ল্যাক বোর্ডে কোড নম্বর লিখে দেই। ডকুমেন্টস আমার কাছে রয়েছে। 

তিনি বলেন, হাসি আক্তার ভুল করেছেন। আমি কোন ভুল করিনি। হাসি আক্তার দায় স্বীকার করে বলেন, এটি আমার অনিচ্ছাকৃত ভুল। এ বিষয় উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আপনাদের সাথে কথা বলবেন।

কেন্দ্র প্রধান আবদুল হাকিম বলেন, আমার বাসায় অনেক পরীক্ষার্থী এসেছেন। আমি তাদের বলেছি, এটি হাসি আক্তার ভুল করেছেন। তাছাড়া আমি ডেঙ্গুতে আক্রান্ত। পরে কথা বলবো। 

বরগুনা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আবদুল মুকিত মোল্লা বলেন, এ ব্যাপারে আমার কোন তথ্য জানা নেই। তবে সব দায়িত্ব কেন্দ্র প্রধানের। 

আমরা বার বার কেন্দ্র প্রধানকে সতর্ক করে দিয়েছি। তারপরও এমন ভুল কেন করেছেন আমি জানি না। পরীক্ষার খাতা দেখে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। কেন্দ্র প্রধানের নাম ফোন নম্বর আগেই আমরা তাদের নিকট পাঠিয়ে দেই। পরীক্ষার দুই তিন মিনিট আগে বুয়েট থেকে কোড নম্বর কেন্দ্র প্রধানের ফোনে আসে। এ ব্যাপারে এখন করনীয় কিছু নেই।

উল্লেখ্য,বরগুনা জেলায় সহকারী শিক্ষক ২৫০ জন শূন্য পদে আবেদন করেছে ১২ হাজার ৩১৮ জন। শুক্রবার পরীক্ষা দিয়েছেন ৯ হাজার ১৮০ জন। অনুপস্থিত ছিলেন ৩ হাজার ১৩৮ জন।

ইমরান/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়