ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০৪ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২০ ১৪৩১

মুক্তি বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধে হানাদার মুক্ত হয়েছিলো নরসিংদী

হৃদয় এস সরকার, নরসিংদী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১০:৫১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩
মুক্তি বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধে হানাদার মুক্ত হয়েছিলো নরসিংদী

নরসিংদী মুক্ত দিবস আজ। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর সম্মিলিত মুক্তি বাহিনীর প্রবল প্রতিরোধের মুখে পাকবাহিনীর পরাজয় ও আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে নরসিংদী শহরসহ গোটা জেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়। 

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে এ দিনটি নরসিংদীবাসীর কাছে অত্যন্ত গৌরবোজ্জ্বল ও স্মরণীয় দিন। প্রতি বছরই দিবসটিতে বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করে জেলা প্রশাসন ও জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। কিন্তু যারা দেশের জন্য অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিয়েছিলো, স্বাধীনতার ৫২ বছর পর তাদের গণকবরগুলো রয়েছে অযত্ন আর অবহেলায়। কোথাও কোথাও রক্ষার উদ্যোগ নেয়া হলেও দুই একটি ছাড়া থমকে আছে সেই পর্যন্তই। দৃশ্যমান কোনও উন্নয়ন হয়নি এসব স্মৃতি রক্ষায়।

৭১ সালে দীর্ঘ ৯ মাস নরসিংদী জেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়। জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের তালিকায় শহিদের সংখ্যা ২৮৪ জন থাকলেও জেলা প্রশাসনের শহীদ ব্যাধিতে ১১৬ জন বীর সন্তানের নাম রয়েছে। এর মধ্যে নরসিংদী সদরের ২৭ জন, মনোহরদীর ১২ জন, পলাশের ১১, শিবপুরের ১৩, রায়পুরার ৩৭ ও বেলাব উপজেলার ১৬ জন। এ ছাড়া বহু মা-বোনের নীরব আত্মত্যাগের বিনিময়ে নরসিংদী হানাদার মুক্ত হয়।

গণকবরগুলো সংরক্ষণ না করায় অরক্ষিত এসব গণকবরের শেষ চিহৃটুকু মুছে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নরসিংদীর এমন কোনও স্থান নেই, যেখানে ৭১-এ শক্র সেনাদের নিষ্ঠুর ছোবল পড়েনি। জেলা সদরের বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৭ থেকে ২৮ জনকে ধরে নিয়ে পাকসেনাদের ক্যাম্প নরসিংদীর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে আটক রাখা হতো। নির্যাতন শেষে তাদের নিয়ে যাওয়া হতো ঢাকা সিলেট মহাসড়কের পাঁচদোনা মোড় সংলগ্ন তৎকালীন লোহা পুলের নিচে। সেস্থানটি এখনও অসংরক্ষিত পড়ে আছে। সেখানে ৪ থেকে ৫ জনকে বসিয়ে রেখে তাদের সামনে ২০ থেকে ২২ জনকে গুলি করে হত্যা করে পাকবাহিনী। হত্যা শেষে লোহারপুলের নিচে সকলকে একসঙ্গে মাটি চাপা দেওয়া হয়। 

মুক্তিযুদ্ধে নরসিংদী জেলা ছিল ২নং সেক্টরের অধীনে। সেক্টর কমান্ডার ছিলেন তৎকালীন মেজর জেনারেল সফিউল্লাহ। নরসিংদীকে ৩ নম্বর সেক্টরের অধীনে নেওয়া হলে কমান্ডার হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন মো. নূরুজ্জামান। বীর মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের ভয়াবহ কালো রাতের পর ৪ এপ্রিল পাকিস্তানীদের বিমান হামলায় নরসিংদী শহর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিলো। এ হামলায় শহীদ হন আব্দুল হক, নারায়ণ চন্দ্র সাহা, চাঁদ মোহন দাস, জগদীস দাস, নির্মল দাসসহ নাম না জানা আরও ৮ জন। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন নরসিংদীর পাঁচদোনা ব্রিজে বিভিন্ন যানবাহন থেকে যাত্রীদের নামিয়ে পাক সেনা ও তাদের দোসর রাজাকাররা হত্যা করে ব্রিজের নিকট গণকবর দিয়েছিলো। জেলার বিভিন্ন স্থানে শত শত নারী পুরুষকে নির্বিচারে হত্যা করে গণকবর দিয়েছিলো পাকবাহিনী। গণকবরগুলোর বেশিরভাগই চি‎হ্নিত করা হয়েছে। জেলার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের অনেক স্মৃতি এখনো অসংরক্ষিত রয়েছে।

নরসিংদী জেলা ৭১  সেক্টর কমান্ডার মোতালিব পাঠান বলেন, এ জেলায় ৫ হাজার ৮৪ জন মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ২৮৪ জন শহিদ হন। শহিদ মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা জেলা প্রশাসনের কাছে পূর্বে না থাকায় জেলা প্রশাসনের শহিদ ব্যাধিতে ১৩৬ জন শহীদদের নাম স্থান পেয়েছে। বাদপড়া শহিদদের নামের তালিকা শহিদ বেদীতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বহুবার তাগিদ দিলেও তা কাজে আসছে না। 

নরসিংদীর জেলা প্রশাসক ড.বদিউল আলম বলেন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বাস্তবায়নে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে সড়ক নির্মাণ ও বিভিন্ন গণকবরগুলোর সংস্কার কাজ চলছে। ১২ই ডিসেম্বর উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মরণে বিভিন্ন প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে। 

/টিপু/

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়