ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

শেরপুরে চলছে কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি, ফসল উৎপাদন হ্রাসের শঙ্কা

শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২১:১৮, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ২১:৩৫, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩
শেরপুরে চলছে কৃষি জমির টপ সয়েল বিক্রি, ফসল উৎপাদন হ্রাসের শঙ্কা

আর্থিকভাবে সাময়িকভাবে লাভবান হওয়ার আশায় শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার দুই ও তিন ফসলি জমির টপ সয়েল (জমির উপরিভাগের মাটি) কেটে বিক্রি করে দিচ্ছেন অনেক কৃষক বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ফলে ফসল উৎপাদন ব্যাপকহারে হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ। 

কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, মাটির উপরের টপ সয়েল ফসল উৎপাদনের জন্য হাজার হাজার বছর ধরে ধীরে ধীরে উপযোগী হয়। জমির উপরিভাগের এই মাটি খুব উর্বর যা ফসল উৎপাদনের জন্য জরুরি। টপ সয়েল থেকে গাছ তার প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান শিকড়ের মাধ্যমে সংগ্রহ করে। এই মাটি কাটলে ফসলের ক্ষতি হবে এবং এটা আগের অবস্থায় ফিরে আসতে অনেক বছর সময় লাগবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার শ্রীবরদী উপজেলা সম্পূর্ণ কৃষি নির্ভর। এই জেলারকয়েকটি ইউনিয়ন শস্যভান্ডার হিসেবে খ্যাত। এ অঞ্চলের জমি উর্বর পলি মাটি সমৃদ্ধ হওয়ায় বছরের দুই মৌসুমে ধান, সরিষা, রসুন ও শীতকালীন সবজি ব্যাপকভাবে উৎপাদন হয়। কিন্তু, কিছু অসাধু মাটি ব্যবসায়ী কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে এসব জমির টপ সয়েল কিনে নিচ্ছেন। কিছু রাজনৈতিক নেতার ছত্রছায়ায় প্রতি বছরের ডিসেম্বর থেকে শুরু করে মার্চ পর্যন্ত চলে এ ব্যবসা। কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির ১ থেকে ৩ ফুট মাটি কিনে নিয়ে চড়া দামে ইটভাটায় বিক্রি করেন ওই সব ব্যবসায়ীরা। 

সম্প্রতি খড়িয়া কাজিরচর উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশের জমিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় তিন ফুট গভীর করে ভেকু নিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। সেই মাটি ড্রাম ট্রাক দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। 

মাটি ব্যবসায়ী রাজু আহমেদের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমি প্রায় ১৯ বছর ধরে এই ব্যবসা করি। ১৮টি ড্রাম ট্রাক নিয়ে আমার মাটির ব্যবসা। পরিবেশের জন্য হুমকি জেনেও এই ব্যবসা কেন করেন জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

কয়েকজন কৃষক বলেন, আগেরবার অনেকেই মাটি কেটে বিক্রি করেছেন। তাদের জমির চেয়ে আমাদের জমি উঁচু। এবার আমরা মাটি কেটে সমান করলাম। মাটি না কাটলে এবার ফসলের সময় সেচের পানি আটকে রাখা সম্ভব হবে না।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার শ্রীবরদী সদর, কুড়িকাহনিয়া, খড়িয়া কাজিরচর, ভেলুয়া, কাকিলাকুড়া ও রানীশিমূল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে দুই বা তিন ফসলি জমির টপ সয়েল কেটে বিক্রি হচ্ছে। বড় বড় ট্রাকে এসব মাটি পরিবহনের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তাঘাটও। নানা দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষকে চলাচল করতে হচ্ছে এসব রাস্তায়।

খড়িয়া কাজিরচর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. দুলাল মিয়া বলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নির্দেশনা মোতাবেক আমরা মাটি কাটা বন্ধে কয়েকটি ভেকু আটক করেছি। কয়েকটি গাড়ির ব্যাটারিও খুলে এনেছি। তবে, কৃষকরা বাড়তি টাকার জন্য মাটি বিক্রি করলে আমাদের প্রতিরোধ করতে কষ্ট হয়ে যায়।

শ্রীবরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবরিনা আফরিন জানান, অনেকদিন ধরেই জমির টপ সয়েল কাটা হচ্ছে। গত সপ্তাহে শ্রীবরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) টপ সয়েল কাটা বন্ধে স্থানীয় চেয়ারম্যানসহ সবাইকে নির্দেশনা দিয়েছেন। তারপরও গোপনে মাটি বিক্রি করছেন কৃষকরা। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তারিকুল/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়