ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

জাতীয় নির্বাচন: ব্যস্ততা বেড়েছে ছাপাখানায়

অমরেশ দত্ত জয়, চাঁদপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০১, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৩  
জাতীয় নির্বাচন: ব্যস্ততা বেড়েছে ছাপাখানায়

ছবি: রাইজিংবিডি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে চাঁদপুরের প্রার্থীরা প্রচারণায় ব্যস্ত। প্রার্থীরা তাদের ছবি ও প্রতীক-সংবলিত পোস্টার, ব্যানার আর ফেস্টুন টাঙাচ্ছেন জেলাজুড়ে। এদিকে প্রার্থীদের প্রচারণার সরঞ্জাম ছাপাতে ব্যস্ততার ধুম পড়েছে ছাপাখানাগুলোতে।

প্রার্থীদের ১৯ দিনের প্রচারণার কাজ শুরু হওয়ায় ব্যস্ততা বেড়েছে ছাপাখানা এবং মাইকের দোকানগুলোতে। নির্বাচনী আচরণবিধি মাথায় রেখে প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের সাথে সমন্বয় রেখে কাজ করে যাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সকালে শহরের প্রেস, মাইক ও ব্যানারের দোকানগুলোতে ব্যস্ততা দেখা গেছে।

জানা গেছে, চাঁদপুর জেলায় ৬১টি ছাপাখানা রয়েছে। এগুলোর বেশিরভাগই ডিজিটাল ও অফসেট ছাপাখানা। এরমধ্যে চাঁদপুর শহর ও সদরে ১৭, হাজীগঞ্জে ১৩, শাহারাস্তিতে ২, ফরিদগঞ্জে ৪, কচুয়ায় ৭, মতলব দক্ষিণে ৪ এবং মতলব উত্তর ও হাইমচরসহ বিভিন্নস্থানে ছোট- বড় আরও ১৪টি প্রেস রয়েছে।  যদিও মাইক এবং ব্যানারের দোকানের নির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান পাওয়া যায়নি।

চাঁদপুরের ৫টি আসনের সাতশো ভোটকেন্দ্রে ২১ লাখ ৫৬ হাজার ৬০৯ জন ভোটার রয়েছেন। চাঁদপুরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী সংখ্যা ২৯ জন।

চাঁদপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণার কাজ শেষ হবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টায়। এই হিসেবে প্রার্থীরা প্রচারের সময় পাচ্ছেন দুই সপ্তাহেরও বেশি। অর্থাৎ পুরো ১৯ দিন। ’

নির্বাচনী প্রচারণায়  আচরণবিধির মধ্যে রয়েছে, পোস্টার রঙিন করা যাবে না। চারশো বর্গফুটের বেশি বড় কোনো প্যান্ডেল করে এলাকায় প্রচার চালানো যাবে না। কাপড়ের তৈরি ব্যানারে প্রচার চালানো গেলেও ডিজিটাল ডিসপ্লে ব্যবহার করা যাবে না। মাইকের মাধ্যমে প্রচারণা চালালে দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টার মধ্যে শেষ করতে হবে। পোস্টারের সাইজ দৈর্ঘ্যে ৬০ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ৪৫ সেন্টিমিটার এবং ব্যানার কোনোভাবেই তিন মিটারের বেশি করা যাবে না। প্রচারের অংশ হিসেবে যেকোন প্রকার দেয়াল লিখন, পোস্টানো সাঁটানো দণ্ডনীয় অপরাধ। এ ধরনের আরও যেসব আচরণবিধি রয়েছে সেসব নিয়ম মেনেই প্রার্থীরা প্রচারণার কাজ চালাতে পারবেন।

শহরের সায়াবানী এলাকার আর্ট সাইনের পরিচালক মো. কামাল বেপারী বলেন, ‘কাগজের দাম বেড়ে গেছে। তাই পোস্টারে ব্যবহৃত ৬৫ গ্রাম কাগজের দাম রিম প্রতি ৩ হাজার টাকা পড়ছে।

চাঁদপুর অফসেট প্রেসের কর্ণধার মো. মিলন বলেন, ‘ছাপাকাজের কাগজগুলো আমাদেরকে বিভিন্ন কোম্পানির ডিলার ও সাব-ডিলারদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হয়। তবে বর্তমানে কাগজ, কালিসহ অন্য জিনিসের দাম বেড়েছে। দেড় বছরের ব্যবধানে কাগজের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। প্রতি রিম (৫০০ পিস) বড় সাইজের (২৩ ইঞ্চি বাই ৩৬ ইঞ্চি) ৫৫ গ্রাম পুরুত্বের দাম ২ হাজার ৩০০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার ৩০০ টাকা।’

তিনি আরও বলেন, ‘দেড় বছর আগে কোম্পানি ভেদে প্রতি পাউন্ড কালির দাম ছিল ১০০-১৫০ টাকা। এখন তা বেড়ে বিক্রি দাঁড়িয়েছে ৪৫০-৫০০ টাকায়। এগুলো মাথায় রেখেই আমাদের দাম ঠিক করতে হচ্ছে।’ 

চাঁদপুর এস আর কালার ল্যাবের মালিক কাজী মিজানুর রহমান বলেন, ‘ছাপাকাজের জন্য অফসেট মেশিনের এক্সপোজ মেশিন (প্লেট মেশিন), কালি রোল, প্লেট বাধা সিলিন্ডার, ছাপা সিলিন্ডার, কালি ও মবিল স্টোর, পানির স্টোর, হাওয়া সিলিন্ডার, চেইনসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ পরিষ্কার রাখা খুবই জরুরি। সাধারণত কম্পিউটারে ডিজাইন তৈরি করে এক্সপোজ মেশিনের সাহায্যে প্লেটে ডাইস (ছাপ) তৈরি করা হয়। এরপর তা প্লেট সিলিন্ডারে দিয়ে প্রিন্ট করা হয়। আকার ভেদে একটি মেশিনে প্রতি মিনিটে ৭০ থেকে ১২০ পিস পোস্টার প্রিন্ট দেওয়া সম্ভব। এক হাজার পোস্টার ছাপালে গড়ে ৩০০ টাকা লাভ থাকে। আমরা দুই হাজারের কম পোস্টার ছাপাই না।’

শহরের মাইক ব্যবসায়ী কালু বলেন, ‘পুরোদমে মাইকিং করতে কিছু মৌসুমী ঘোষককে আমরা প্রচারকাজে নিয়োজিত করছি।’ 

তিনি আরও বলেন, সব দল নির্বাচনে এলে আমরা আরও বেশি কাজ পেতাম।’ 

কার মাইকেল প্রেসের পরিচালক বিনয় ভূষণ মজুমদার বলেন, ‘ছাপাখানায় আগের মতো ব্যস্ততা নেই। প্রার্থী এবং তার কর্মী সমর্থকরা এখন সোশ্যাল মিডিয়াকে প্রচার মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগাচ্ছে।’

চাঁদপুর প্রেস মালিক সমিতির সভাপতি ও বন্ধু মুদ্রায়নের কর্ণধার দুলাল পাটোয়ারী বলেন, ‘অনেকেই বিল বকেয়া রাখতে চায়। পরে সে টাকা তুলতে সমস্যা হয়ে যায় আমাদের। তার মধ্যে এবার আসনগুলোতে যেহেতু প্রতিযোগী কম। তাই কাজে ধীরগতি রয়েছে। তবে বছর শেষ হওয়ায় নতুন বছরের ক্যালেন্ডার ও প্যাড তৈরির কাজ পাচ্ছি।’ 

চাঁদপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান বলেন, ‘কোনো প্রার্থী বা দল আইনে নির্ধারিত সকল নির্দেশনার বাইরে কাজ করলে ছয় মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। আমরা সব বিষয় নজরদারিতে রেখেছি।’ 

/স্বরলিপি/

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়