ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

‘ঝামেলা’ মনে করে পোস্টাল ব্যালটে ভোটে অনাগ্রহী কয়েক লাখ প্রবাসী ভোটার

অমরেশ দত্ত জয়, চাঁদপুর  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৯, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৩:৫৮, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩
‘ঝামেলা’ মনে করে পোস্টাল ব্যালটে ভোটে অনাগ্রহী কয়েক লাখ প্রবাসী ভোটার

পোস্টাল ব্যালটে ভোটের সুযোগ থাকলেও শুধু ‘ঝামেলা’ মনে করে ভোটবঞ্চিত চাঁদপুর জেলার প্রবাসী কয়েক লাখ ভোটার। বছরের পর বছর তারা প্রবাস জীবন কাটালেও দেশে সংসদ নির্বাচনে ভোটযুদ্ধে অংশ নিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। সরকারি-বেসরকারি উদ্বুদ্ধকরণ প্রচারণার মাধ্যমে পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোট প্রদানে আগ্রহী করা যেতে পারে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি রপ্তানি কার্যালয়ের এক তথ্য পর্যালোচনায় পোস্টাল ব্যালটে প্রবাসীদের ভোটে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি উঠে আসে।

তথ্য মতে, ২০০৫ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের নভেম্বর পর্যন্ত চাঁদপুর জেলা থেকে নানা কারণে প্রবাসে পাড়ি জমিয়েছেন ৪ লাখ ৮১ হাজার ৩০৯ জন। এর মধ্যে শুধু চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত ৪৮ হাজার ৩৮৯ জন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছেন। এসব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের ভোটে অংশ নিতে নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করতে হলেও কেউ এখনো আবেদন করেননি।

চাঁদপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, চাঁদপুরে বর্তমানে ভোটার রয়েছেন ২১ লাখ ৫৬ হাজার ৬০৯জন। জেলার মোট ভোটারের প্রায় ২৫ শতাংশ ভোটারই প্রবাসী। যারা জেলার ৫টি সংসদীয় এলাকায় এবারের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত থাকছেন।

চাঁদপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে কোন প্রবাসীর কাছ থেকেই পোস্টাল ব্যালট পেপারে ভোটের আবেদন এখনো আসেনি। এমনকি একাদশ সংসদ নির্বাচনেও এ জেলার কোনো ভোটার প্রবাস থেকে ভোট দেওয়ার ইচ্ছে পোষণ করে আবেদন করেননি। যদি আবেদন করতেন তাহলে অনতিবিলম্বে ওই ভোটারের কাছে ডাকযোগে একটি পোস্টাল ব্যালট পেপার এবং একটি খাম পাঠিয়ে দিতাম। ভোটার পোস্টাল ব্যালটে ভোট দেওয়ার জন্য ব্যালট পেপার পাওয়ার পর নির্ধারিত পদ্ধতিতে ভোট দিয়ে ব্যালট পেপারটি পুনরায় আমাদের কাছে খামে ডাকযোগে পাঠাতো। বিষয়টি জটিল এবং অনেকে না জানার কারণে লাখ লাখ ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত থাকছেন।

দুবাই প্রবাসী চাঁদপুরের ভোটার বাবু বলেন, টাকা কামাইতে ব্যস্ত সময় পার করছি। এতো নিয়ম মেনে ভোট দিতে যে সময় প্রয়োজন তা বের করাই কষ্ট। তাই এতো ঝামেলার মধ্যে ভোট দেই না। তাছাড়া এখানে ভোট দিতে অন্য প্রবাসীদেরও কোনো উৎসাহ বা মাথাব্যাথা দেখছি না।

চাঁদপুর জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শফিকুর রহমান বলেন, ভোটার তালিকায় নাম আছে এমন ব্যক্তিদের মধ্যে দেশের জেলখানায় বা অন্য আইনগত হেফাজতে থাকা ব্যক্তি কিংবা নিজের এলাকার বাইরে অন্য ভোটকেন্দ্রে নির্বাচন সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনে থাকা ব্যক্তি এবং প্রবাসীরা পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে ভোট দিতে পারবেন। অথচ বিষয়টি অনেকে জানেনই না। পোস্টাল ব্যালট কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানোকে অধিকাংশ প্রবাসী ঝামেলা মনে করেন এবং অনেকে না জানার জন্যই সংসদ নির্বাচনে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

মোহাম্মদ শফিকুর রহমান আরও বলেন, অনেকে পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিষয়টি শুনলেও না বুঝেই এটি জটিল মনে করছেন। আমার মতে বিষয়টিকে সহজভাবে নিয়ে শত ব্যস্ততার মধ্যেও দেশ সেবার অংশ হিসেবে নির্বাচনে একটু সময় বের করে হলেও ভোটাধিকার প্রয়োগ করা উচিত।

এদিকে সচেতন মহল মনে করছেন, প্রবাসীদের ভোট নিশ্চিতে সরকারি বেসরকারিভাবে সোশ্যাল মিডিয়াসহ সর্বত্র প্রচারণা চালানো এখন সময়ের দাবি। এতে পোস্টাল ব্যালটের বিষয়টি সম্পর্কে প্রবাসীরা অবগত হবে এবং এ পদ্ধতিতে ভোটবঞ্চিত লাখ লাখ ভোটার ভোটে অংশ নিতে উদ্বুদ্ধ হবে।

টিপু/তারা

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়