ঢাকা     মঙ্গলবার   ০২ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৮ ১৪৩১

শেরপুরে মোগল আমলের মসজিদের মূল্যবান কষ্টি পাথরের ফলক চুরি

শেরপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:২৮, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩  
শেরপুরে মোগল আমলের মসজিদের মূল্যবান কষ্টি পাথরের ফলক চুরি

ঘাগড়া খান বাড়ি মসজিদ

শেরপুরের প্রাচীন মোগল স্থাপত্য ঘাগড়া খান বাড়ি জামে মসজিদের মূল্যবান কষ্টি পাথরের খোদাই করে লেখা ফলকটি চুরি হয়ে গেছে।
১৮ ডিসেম্বর রাতের কোন এক সময় এই ঘটনা হয়েছে।

এই চুরির ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ। ঘটনার পাঁচদিন পরেও চোর চক্রের কোন হদিস মেলেনি।
এদিকে মসজিদের ওই মূল্যবান কষ্টি পাথরের ফলকটি চুরির ঘটনায় গ্রামবাসীর মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

জানা যায়, মোগল শাসন আমলের ১৬০৪ খ্রিস্টাব্দে শেরপুর জেলা সদর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে ঝিনাইগাতী উপজেলার হাতীবান্ধা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্কর গ্রামে মোগল স্থাপত্যকলার অনুপম নিদর্শন ঐতিহাসিক ‘খান বাড়ী’ মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। মসজিদের গায়ে বর্তমানে যেসব নির্দশন পাওয়া গেছে সে অনুসারে ধারণা করা হয়, বক্সার বিদ্রোহীদের নেতা হিরোঙ্গি খাঁর বিদ্রোহের সময় মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল। আজিমোল্লাহ খান ৫৮ শতক জায়গার উপর মসজিদটি প্রতিষ্ঠা করে ওয়াকফ করে দেন।

এরপর হেরিটেজ স্থাপত্য হিসেবে মসজিদটি দেখভালের জন্য ২০০৫ সালে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ দায়িত্ব নেন। কিন্তু স্থায়ীভাবে মসজিদটিতে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কোনো লোক ছিল না। ময়মনসিংহ আঞ্চলিক অফিস থেকে মাঝেমধ্যে লোক এসে মসজিদের খোঁজ-খবর নিতেন। এছাড়া মসজিদের খাদেম ও ইমাম সাহেব থাকতেন মসজিদের বাইরে। ফলে ১৮ ডিসেম্বর রাতের কোন এক সময় কে বা কারা মসজিদের দরজার উপরে বাধাই করা ওই মূল্যবান কষ্টিপাথরের ফলকটি খুলে নিয়ে যায়।

মসজিদটির দরজার উপর মূল্যবান কষ্টি পাথরের উপর খোদাই করে আরবি ভাষায় এর প্রতিষ্ঠাকাল এবং অনেক গুরুত্বপূর্ণ লেখা উল্লেখ করা রয়েছে। খান বাড়ির উত্তরাধিকারীরাই মসজিদের পরিচালনার দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায় ১৯ ডিসেম্বর ভোরে ফজরের সময় নামাজ পড়তে এসে মুসল্লিরা দেখে কষ্টিপাথরের ফলকটি নেই। নিচে সিমেন্ট পড়ে আছে। স্থানীয়দের দাবি দ্রুত এ ঘটনার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার এবং মূল্যবান হেরিটেজ ওই কষ্টিপাথরের ফলকটি উদ্ধার করা।

চুরির ঘটনাটা জানার পরপরই ১৯ তারিখ সকালে মসজিদ কমিটির কোষাধ্যক্ষ মো. নজরুল ইসলাম ময়মনসিংহের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগকে জানায়। পরবর্তীতে ময়মনসিংহ থেকে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ফিল্ড অফিসার সাবিনা ইয়াসমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসেন এবং ঝিনাইগাতী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন বলেন, কষ্টি পাথরের এই ফলকটি অনেক দামি। ৪০০ বছরের পুরনো এই মসজিদে চুরির ঘটনায় গ্রামবাসী হতবাক। চোর চক্রকে চিহ্নিত এবং ফলকটি উদ্ধার করে আবার যথাস্থানে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই সরকার এবং প্রশাসনের কাছে।

ঝিনাইগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল বলেন, খান বাড়ি মসজিদের নাম ফলক চুরির বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। দেখি আমরা কি করতে পারি।

তারিকুল/ফয়সাল

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়