আসামিকে মারধরে ৭ পুলিশের নামে মামলা, এসপিকে তদন্তের নির্দেশ
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি || রাইজিংবিডি.কম
লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে আটকের পর আব্দুর রহিম রনি নামে এক আসামিকে মারধরের অভিযোগে ৭ পুলিশ সদস্যের নামে দায়েরকৃত মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আদেশ প্রাপ্তির তিন কার্যদিবসের মধ্যে জেলা পুলিশ সুপারকে (এসপি) তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি অঞ্চল রায়পুর আদালতের বিচারক মো. বেলায়েত হোসেন এ আদেশ দেন।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে আদালতের পেশকার নুরুল আলম রাইজিংবিডিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, রিনা আক্তার নামের এক নারী তার স্বামীকে আটক করে মারধরের অভিযোগে ৭ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য জেলা পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক। শিগগিরই আদেশের কপি পুলিশ সুপারের কাছে পাঠানো হবে।
অভিযুক্তরা হলেন- রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. আবু হানিফ, নুরুল ইসলাম, মো. আবু হানিফ, সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সফিক মিয়া, সাখাওয়াত হোসেন, কনস্টেবল আতিক উল্লা ও ইউসুফ ঢালি।
মামলার বাদী রিনা রায়পুর উপজেলার পূর্ব চরপাতা গ্রামের আব্দুর রহিম রনির স্ত্রী। এদিকে, পুলিশের দায়ের করা তিন মামলায় রিনার স্বামী রনি বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছেন। রনি পূর্ব চরপাতা গ্রামের মো. শহীদুল্লাহর ছেলে।
বাদীর আইনজীবী আবদুল আহাদ শাকিল পাটোয়ারি বলেন, রনিকে আটকের সময় তার কাছে কোনও ধরনের অস্ত্র বা মাদক পাওয়া যায়নি। তাকে থানা হাজতেও রাখেনি অভিযুক্তরা। একটি গোপন কক্ষে রেখে তাকে মারধর করা হয়। এ ঘটনায় রনির স্ত্রী রিনা আদালতে মামলা করেছেন। মামলাটি আমলে নিয়ে বিচারক তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ ডিসেম্বর দুপুরে উপজেলার চরপাতা ইউনিয়নের বর্ডার বাজার রায়পুর-চাঁদপুর সড়ক থেকে অভিযুক্তরা রনিকে আটক করেন। তখন তার সঙ্গে গরু বিক্রির ৯০ হাজার টাকা ছিল। ওই টাকা অভিযুক্তরা নিয়ে গেছেন। পরে তাকে নিয়ে এসে মারধর করে এবং উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। আটকের খবর পেয়ে রনির স্ত্রী রায়পুর থানায় গেলেও স্বামীর সন্ধান পাননি। পরে তিনি সদর থানা, গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয় ও জেলা কারাগারেও খোঁজ নিয়ে স্বামীর সন্ধান পাননি। ফের রায়পুর থানায় গেলে সেখানে রনির মোটরসাইকেল দেখতে পান তিনি। এসময় স্বামীর সন্ধান চাইলে বিভিন্ন কথা শুনতে হয় তাকে। পরে তিনি এসআই হানিফকে কল দিয়ে স্বামীর সন্ধান চান। হানিফ তার স্বামীকে ছাড়তে ২ লাখ টাকা দাবি করেন। এতো টাকা নেই জানালে রনিকে বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ১৮ ডিসেম্বর ডাকাতির প্রস্তুতিকালে রনিসহ দুজনকে একনলা বন্দুক, দুই রাউন্ড কার্তুজ, দেশীয় অস্ত্র, ১৮০ পিস ইয়াবা ও ২০০ গ্রাম গাঁজাসহ আটক করা হয়। পরে পুলিশ বাদী হয়ে ডাকাতির প্রস্তুতি, অস্ত্র আইন ও মাদকদ্রব্য আইনে মামলা দায়ের করে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠায়।
বাদী রিনা আক্তার বলেন, অভিযুক্তরা আমার স্বামীকে আটক করে মারধর করে। বার বার থানায় গেলেও তারা স্বামীকে দেখায়নি। পরদিন রাতে তারা আমার স্বামীকে ৩টি মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে।
মামলায় প্রধান অভিযুক্ত রায়পুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু হানিফ বলেন, মামলার বিষয়টি জানা নেই। ডাকাতির প্রস্তুতির সময়ে অভিযান চালিয়ে আমরা রনিকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করি। পরে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, মামলা তারা (রিনা) করতেই পারেন। তবে, আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য নয়। রনির বিরুদ্ধে এর আগেও কয়েকটি মামলা রয়েছে।
রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক মজুমদার বলেন, অস্ত্র, মাদক ও ডাকাতির প্রস্তুতি মামলায় রনিকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে, তার স্ত্রীর আনা অভিযোগগুলোর বিষয়ে জানা নেই। আসামির স্ত্রী আমার কাছে কোনও অভিযোগ করেননি।
লিটন/কেআই