ঢাকা     শনিবার   ২১ ডিসেম্বর ২০২৪ ||  পৌষ ৭ ১৪৩১

পাবনা-৩

ট্রাক নিয়ে অস্বস্তিতে নৌকা

শাহীন রহমান, পাবনা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:০০, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩   আপডেট: ১৫:০৩, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩
ট্রাক নিয়ে অস্বস্তিতে নৌকা

মকবুল হোসেন ও আব্দুল হামিদ মাস্টার

পাবনার ৫টি আসনের মধ্যে সবার নজর পাবনা-৩ (চাটমোহর-ভাঙ্গুড়া-ফরিদপুর) আসনে। কারণ একমাত্র এই আসনেই হবে নৌকা আর ট্রাক প্রতীকের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। অন্য আসনগুলোতে অনেকটাই নির্ভার নৌকার প্রার্থীরা। কিন্তু পাবনা-৩ এর নৌকার প্রার্থী ট্রাক প্রতীক নিয়ে আছেন বেশ অস্বস্তিতে।

ইতোমধ্যে ট্রাক প্রতীকের অফিসে কয়েক দফা হামলা, ভাঙচুর, প্রকাশ্যে হুমকি ধামকি ও উস্কানিমূলক বক্তব্য, সমর্থকদের মারধর, নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ উঠেছে। এসব নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন এলাকায় উত্তেজনাও চলছে। 

এই আসনে নৌকা নিয়ে লড়ছেন তিনবারের সাংসদ ও পঞ্চমবারের মতো দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মকবুল হোসেন। মকবুল হোসেনের বয়স হয়ে গেছে এবং শারীরিকভাবে অসুস্থ- এটাই জীবনের শেষ নির্বাচন বলে জানিয়েছেন।

আর তার সাথে ট্রাক প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও চাটমোহর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হামিদ মাস্টার। সংসদ সদস্য প্রাথী হিসেবে এটাই তার প্রথম নির্বাচন।

মকবুল হোসেনের বাড়ি ভাঙ্গুড়া উপজেলায় এবং আব্দুল হামিদ মাস্টারের বাড়ি চাটমোহর উপজেলায়। দুইজনেরই রয়েছে আলাদা ভোট ব্যাংক।

এ নিয়ে চলছে চুলচেরা নানা বিশ্লেষণ। এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন ১৮ জন আওয়ামীলীগ নেতা। কিন্তু সব জল্পনা কল্পনাকে পাশ কাটিয়ে টানা তিনবারের এমপি মকবুলকেই আবার মনোনয়ন দিয়েছে দল। তাকে নিয়ে পাবনা-৩ আসনের চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলায় স্থানীয় আওয়ামী লীগে গ্রুপিং রয়েছে। একটি গ্রুপের সাথে সম্পর্ক রেখেছেন মকবুল হোসেন। অন্য গ্রুপ রয়েছে উপেক্ষিত। এসব নিয়ে অনেক নেতাকর্মীর চাপা ক্ষোভ রয়েছে মকবুলের উপর। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটতে পারে নির্বাচনে। এক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হামিদ মাস্টার। কারণ বঞ্চিত, উপেক্ষিত আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ মাঠে নেমেছে তার পক্ষে। ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এখন দুই ভাগ হয়ে দুই প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন।

পাবনা-৩ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫৫ হাজার ৬১৭ জন। এর মধ্যে চাটমোহর উপজেলায় ২ লাখ ৪৪ হাজার ১৬৫ জন, ভাঙ্গুড়া উপজেলায় ১ লাখ ১ হাজার জন এবং ফরিদপুর উপজেলায় ১ লাখ ১০ হাজার ৪৫২ জন ভোটার রয়েছে। অর্থাৎ ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর দুই উপজেলা মিলিয়ে যে মোট ভোট তার চেয়ে ৩৩ হাজার ভোট বেশি চাটমোহর উপজেলায়।

জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য ও বিএমএ পাবনা জেলা শাখার সভাপতি ডা. গোলজার হোসেন বলেন, গত ১৫ বছর টানা তিনবার মকবুল হোসেন এমপি থাকাকালে আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। তার নিজ এলাকা ভাঙ্গুড়া ছাড়া বাকি দুই উপজেলা চাটমোহর ও ফরিদপুরে উন্নয়নে পিছিয়ে রয়েছে। তাছাড়া মকবুল হোসেন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। নতুন লোক আসা দরকার।'

দীর্ঘদিন ধরে চাটমোহর থেকে কোনো এমপি পায়নি এখানকার দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ। তাছাড়া ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলার মোট ভোটারের চাইতে চাটমোহর এক উপজেলায় ভোট বেশি। তাই আঞ্চলিকতার টানে এগিয়ে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হামিদ। জানালেন চাটমোহর পৌর সদরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী হেলালুর রহমান জুয়েল।

অন্যদিকে ফরিদপুর উপজেলার ভোটাররাও জয় পরাজয়ে একটা ফ্যাক্টর হতে পারে। তাই চাটমোহর ও ফরিদপুর উপজেলার ভোটারদের মন যিনি বেশি জয় করতে পারবেন তিনি সহজে জয় বের করে আনতে পারবেন বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ। 

মকবুল হোসেনের সমর্থকদের মতে, তিনি এমপি থাকাকালে বেশকিছু উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করেছেন। তার কাছে গিয়ে কেউ নিরাশ হয়নি। তাই তিনি এবারও নির্বাচিত হবেন বলে মনে করেন তারা। আবার তার পক্ষে প্রতিদিনই জেলা আওয়ামী লীগের কিছু নেতা নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। 

এ বিষয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হামিদ মাস্টার বলেন, বর্তমান এমপি তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। উন্নয়ন বঞ্ছিত মানুষ আমাকে চাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। ভোটাররা একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায়। আর সুষ্ঠু ভোট হলে আমি বিপুল ভোটে জয়ী হবো। কিন্তু প্রতিদিনই আমার নেতাকর্মী সমর্থকদের নানাভাবে হুমকি ধামকি দিচ্ছে নৌকার লোকজন। শহর থেকে নেতারা এসে উস্কানিমূলক ও মানহানিমুলক বক্তব্য দিচ্ছেন। নৌকার লোকজন আমার নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর করছে, পোস্টার ছিঁড়ে ফেলছে। তাই নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে অনুরোধ করবো যেন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়। তা না হলে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে।'

বর্তমান সাংসদ ও নৌকার প্রার্থী মকবুল হোসেন বলেন, আমরা যতজনই প্রার্থী হয়েছি সবাই মিলে একটি সুন্দর নির্বাচন দেশকে উপহার দেবো। দলীয় নেতাকর্মী সবাইকে নির্বাচনী আচরণ বিধিমালা মেনে চলতে অনুরোধ করছি। নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামুলক হবে বলে আশা করি। বিগত সময়গুলোতে পাবনা-৩ আসনে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছি। নির্বাচিত হলে অমার অসমাপ্ত কাজগুলো শেষ করবো। এটাই আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। আমার নেতাকর্মী কাউকে হুমকি ধামকি দিচ্ছে না। 

পাবনা-৩ আসনে এবার প্রার্থী ৭ জন। তারা হলেন, আলহাজ্ব মকবুল হোসেন (আওয়ামী লীগ), আব্দুল হামিদ মাস্টার (স্বতন্ত্র), মীর নাদিম মোহাম্মদ ডাবলু (জাতীয় পার্টি), মাহবুবুর রহমান জয় চৌধুরী (বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি-বিএসপি), বেলাল মোল্লা (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), আবুল বাশার শেখ (জাসদ) ও আজিজুল হক (বাংলাদেশ কংগ্রেস)।

/টিপু/


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়