ঢাকা     মঙ্গলবার   ০৯ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২৫ ১৪৩১

বগুড়া

বিএনপির সাবেক নেতাদের জেতাতে মাঠে আ.লীগ

এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৭, ১ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৪:২১, ১ জানুয়ারি ২০২৪
বিএনপির সাবেক নেতাদের জেতাতে মাঠে আ.লীগ

জিয়াউল হক মোল্লা, শোকরানা, সরকার বাদল ও বিউটি বেগম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়ার ৪টি আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বিএনপির সাবেক চার নেতা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও বগুড়ায় এই চার নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মী এবং সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই চার আসনের মধ্যে দুটি শরিকদের ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে, শরিক দলের প্রার্থীরা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে না স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। উল্টো তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনে কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ শোকরানা। বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন জেলা বিএনপির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম।

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনে ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য ও চার বারের সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা এবং বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও শাজাহানপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সরকার বাদল।

জানা যায়, বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে এবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন শিবগঞ্জের পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান মানিক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে গিয়ে তিনি মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে, জোটের শরিক দল জাপার কাছে আওয়ামী লীগ আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে যেতে হয়েছে মানিককে। এজন্য মানিকসহ তার অনুসারীদের মধ্যে মনঃকষ্ট বিরাজ করছে।

এছাড়া, জাপা প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দূরত্ব আগে থেকেই। যে কারণে আওয়ামী লীগ থেকে লাঙ্গল প্রার্থীকে কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না। উল্টো ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করতে দেখা গেছে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীদের।

অন্যদিকে, বগুড়া-৪ আসনটিও ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আসনে মহাজোটের শরিক দল জাসদ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ না রাখার কারণে জাসদের নেতাকর্মীরাই তানসেনের পক্ষে কাজ করতে নারাজ।

এছাড়া, গত উপনির্বাচনে তানসেনের জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রাখা নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ এবার তানসেনের পাশে নেই। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর (ঈগল) পক্ষে কাজ করছেন।

এমনকি, স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এছাড়া, তানসেনের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় নন্দীগ্রাম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তার হোসেন বকুল ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

মুক্তার হোসেন বকুল এই প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের কেউ মহাজোট প্রার্থীর (নৌকা) পক্ষে কাজ করছে না। তারা বিএনপির সাবেক এমপির পক্ষে কাজ করছে। আমি ঈগল মার্কার বিপক্ষে থাকায় আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

অভিযোগের বিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ফিরোজ কামাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের কার্যক্রমে অনুপস্থিত, নিষ্ক্রিয় থাকা এবং সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে দুইজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান বলেন, জাসদের এই প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি কখন আসেন, কখন যান ঠিক নেই।

পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ দুইজনকে অব্যাহতি দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নৌকার পক্ষে তিনি (মুক্তার হোসেন বকুল) কোনদিন ভোট করেননি। আর তিনি বলছেন, নৌকার পক্ষে নির্বাচন করায় পদ হারিয়েছেন, এটা হাস্যকর বিষয়।

স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাজ করার বিষয়ে আনিছুর রহমান বলেন, এরকম তথ্য আমার জানা নেই। তবে বিচ্ছিন্নভাবে যদি কোনো কর্মী-সমর্থক নির্বাচনি অফিসে গিয়ে চা খায়, তাহলে সেটা তার পক্ষের হয়ে যাবে? প্রশ্ন রাখেন তিনি। বলেন, আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, আমার কাছে যদি হিরো আলম এসে ভোট চায় আর সেই ছবি ফেসবুকে দিলেই কি আমি হিরো আলমের লোক হয়ে যাব?

বগুড়া-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে মান অভিমান চলছে। এটা কেটে যাবে। তখন তারা আমার পক্ষে আসবে। তবে, প্রকাশ্যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে না।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা বলেন, দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত মেনে আমরা ইচ্ছেমত প্রার্থীকে ভোট দেব।

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক) ও সাবেক বিএনপি নেত্রী বিউটি বেগম বলেন, জনগণের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সরকারেরও একটা সময় আসছে, যে আর রাতে ভোট হবে না। আর কেউ সিল মেরে নিতে পারবে না।

তিনি বলেন, আমাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে, কেন দাড়াইছেন? ওরা তো রাতেই ভোট দিয়ে দিবে। তাদের বলছি, সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট হবে। যখন শুনতে পারবেন, নিজের ভোট নিজে দেওয়া যাচ্ছে তখন আপনারা কেন্দ্রে যাবেন। ভোটারদের আশ্বস্ত করার পর তারা বলেছে, ভোট সুষ্ঠু হচ্ছে জানতে পারলে তোমাকে এদিকে আসতে হবে না। আমরা নিজেরা গিয়ে তোমাকে সিল মেরে চলে আসব।

বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (কেটলি) ও সাবেক বিএনপি নেতা মো. শোকরানা বলেন, ভোটের প্রচারণায় এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি। সাধারণ মানুষের প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। যখন আমি বলি কেটলি, তখন জনগণ বলে আলহামদুলিল্লাহ।

তিনি আরও বলেন, জনগণের মাঝে সন্দেহ ছিল, ভোট কেন্দ্রে যাওয়া যাবে কিনা। গেলে কি হবে। আস্তে আস্তে মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, ভোট কেন্দ্রে যাওয়া যাবে এবং সুষ্ঠু ভোট হবে।

বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) ও সাবেক বিএনপি নেতা জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, শুরুতে আমাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। এরপর আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। কিন্তু আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি এবং জনগণ আমার সঙ্গে আছে। ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। এখানে দলমত নির্বিশেষে সবাই চায়, আমি এখানকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। ব্যক্তি ইমেজ আছে বলেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সাহস করেছি। বিএনপির নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে কাজ করতে আসছে। কেউ প্রকাশ্যে আসছে। কেউ অপ্রকাশ্যে আসছে। যারা প্রকাশ্যে এসেছে তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আনের স্বতন্ত্র প্রার্থী (ঈগল) ও সাবেক বিএনপি নেতা মো. সরকার বাদল বলেন, শাজাহানপুর-গাবতলীর মানুষ আমার সঙ্গে আছে। এর কারণ হলো শাজাহানপুর উপজেলা বাস্তবায়ন আন্দোলন করেছি। বগুড়ার অনেক উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে ছিলাম। বিশেষ করে তারেক রহমানের সময় এই উপজেলা আমি বাস্তবায়ন করেছি। বগুড়ার রাস্তাঘাট প্রশস্ত করণে ভূমিকা রেখেছি। আমি এক সময় বিএনপির নেতাও ছিলাম। এখনও নেই তাও বলবো না। যেহেতু আমি কোন পদে নেই তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। তবে আমার ভালোবাসা আছে তাদের প্রতি। সেই ভালোবাসার খাতিরে অবশ্যই বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত শাজাহানপুর-গাবতলীর মানুষ আমাকে ভোট দেবে এটা আমি বিশ্বাস করি। আমি যে কাজ করেছি। সেই কাজের জন্য মৃত্যুর ১০০ বছর পরেও মানুষ আমাকে মনে রাখবে। আমি প্রচারণায় আমার সাথেও কাউকে নিতে চাই না। আমি মনে করি, একা একা কথা বলে মানুষের সাথে আন্তরিকতা বাড়ে। তারা মন খুলে কথা বলতে পারে, তাদের চাহিদার কথা বলতে পারে। আমি একাই প্রচারণা করছি। সঠিকভাবে ভোট হলে আমি জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। কারণ স্বতন্ত্র হিসেবে এর আগেও ভোট করেছি। সে সময়ও অনেক ভোট পেয়েছি। এবারও সবার চেয়ে বেশি ভোট পাবো আশা করি।

কেআই

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়