ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

গাজীপুর-৩, ৪, ৫

ঘরের শত্রুতে ‘কাবু’ নৌকা, তবু পালে লাগতে শুরু করেছে হাওয়া

রফিক সরকার, গাজীপুর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:৩১, ৪ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২২:৩৪, ৪ জানুয়ারি ২০২৪
ঘরের শত্রুতে ‘কাবু’ নৌকা, তবু পালে লাগতে শুরু করেছে হাওয়া

ভোটের প্রচারণায় মেহের আফরোজ চুমকি

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৩ নির্বাচনি আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপক রুমানা আলী টুসি। তার সাথে সবচেয়ে বেশি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্য স্বতন্ত্রের ইকবাল হোসেন সবুজের। গাজীপুর-৪ নির্বাচনি আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন হোসেন রিমি। এ আসনে আ.লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা আলম আহমেদ। আর গাজীপুর-৫ নির্বাচনি আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি। এ আসনের তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক এমপি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি আখতারউজ্জামান।   

শিল্প অধ্যুষিত গাজীপুরকে বলা হয় বাংলাদেশের ‘দ্বিতীয় গোপালগঞ্জ’। বিএনপি ভোটের মাঠে না থাকায় ‘এক প্রকার নিশ্চিত’, আসনগুলোতে প্রকারান্তে আওয়ামী লীগের জয় হবে। কারণ, আসনগুলোতে লড়াই হবে মূলত আ.লীগ প্রার্থীর সঙ্গে বঞ্চিত আ.লীগ প্রার্থীর (স্বতন্ত্র)। ঢাকার পাশের জেলা গাজীপুরের আসনগুলো ঘিরে তাই নির্বাচনি উত্তাপ পৌঁছেছে চরমে। নির্বাচনি প্রচারে নৌকার প্রার্থীরা আটঘাট বেঁধে নেমেছেন। অন্যদিকে, স্বতন্ত্রের প্রার্থীরাও পিছিয়ে নেই। তবে, শুরু দিকে স্থানীয় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সাথে নৌকা প্রতীকের পার্থক্যটা বেশি থাকলেও দিনরাত সভা-সমাবেশ করে শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করেছেন নৌকার প্রার্থীরা। গত কয়েক দিনের ব্যাপক প্রচারে গাজীপুর-৩, ৪ ও ৫ আসনে আ.লীগের নৌকার প্রার্থীদের কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের গতি অনেকটা ঝিমিয়ে পড়েছে। ফলে বলা যায়, গাজীপুরের এই ৩ আসনে শুরুতে ঘরের শত্রুতে কাবু হলেও এখন হাওয়া লাগতে শুরু করেছে নৌকার পালে।

গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর আসন)

এটি জাতীয় সংসদের ১৯৬ নম্বর আসন। জেলার শ্রীপুর ও গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়াল গড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এ আসনে অনুষ্ঠিত বিগত ১০টি সংসদ নির্বাচনের ছয়টিতেই জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ। বাকি দুই বার বিএনপি ও দুই বার জাতীয় পার্টি। আগে এ আসনটি শ্রীপুর ও কালিয়াকৈর উপজেলা নিয়ে গঠিত ছিল। ২০০৮ সালে আসন বিন্যাস ও সীমানা পূর্ণগঠনে বাদ পড়ে কালিয়াকৈর উপজেলা। সংসদীয় এ আসনে শ্রীপুর উপজেলার সঙ্গে যুক্ত হয় গাজীপুর সদর উপজেলার মির্জাপুর, ভাওয়াল গড় ও পিরুজালী ইউনিয়ন। এ আসনে জয়-পরাজয়ের হিসাব করতে গেলে ২০০৮ সালের পর গাজীপুর-৩ আসন আওয়ামী লীগের দখলেই ছিল। প্রয়াত রহমত আলী আওয়ামী লীগের হয়ে ২০০৮ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এমপি হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নে এমপি হয়েছেন গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ইকবাল হোসেন সবুজ।

এ আসনে বর্তমানে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সবচেয়ে বেশি আলোচিত প্রার্থী আওয়ামী লীগের রুমানা আলী টুসি ও স্বতন্ত্রের ইকবাল হোসেন সবুজ। তারা দুজনেই নির্বাচনি প্রচারণায় বেশ তৎপর। এ ছাড়াও, জাতীয় পার্টির এফএম সাইফুল ইসলাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মো. আব্দুর রহমান, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের মো. জয়নাল আবেদীন, জাসদের (ইনু) মো. জহিরুল হত মণ্ডল বাচ্চু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সাখাওয়াত হোসেন খাঁনসহ মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন, আমি দলকে সংগঠিত করেছি। গত নির্বাচনের আগে এলাকায় উঠান বৈঠক করে সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। এমপি হওয়ার পর এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছি। তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত সব নেতাকর্মী একটি পরিবারের মতো আছি। আশা করছি, আমার ট্রাক প্রতীকে ভোট দিয়ে স্থানীয়রা আমার পক্ষে রায় দেবেন।

অন্যদিকে রুমানা আলী টুসি বলেন, আমাদের বেড়ে উঠা রাজনীতি পরিবারে, রক্তের সঙ্গে মিশে রয়েছে আওয়ামী লীগের রাজনীতি। বাবার মৃত্যুর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই আমাদের একমাত্র অভিভাবক। হতাশার খবর হলো নির্বাচনে দেশবিরোধী নানা চক্রান্ত হচ্ছে। এসব চক্রান্ত মোকাবিলায় তিনি বিপুল সংখ্যক কর্মী সমর্থক ও এলাকার তরুণ সম্প্রদায়কে সংগঠিত করে জবাব দিতে প্রস্তুত আছেন বলেও জানান। পাশাপাশি তিনি নৌকার জয়ে প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাসী।

গাজীপুর-৩ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৪৩২। কেন্দ্র সংখ্যা ১৮০টি, বুথ সংখ্যা ১০৬৮। এখানে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪৫ হাজার ৪৩৪, মহিলা ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৪৮ হাজার ৯৮৮ ও হিজড়া ভোটার ৫ জন।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৯৪৪ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের রহমত আলী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এমএ মান্নান। তিনি পান ১ লাখ ৮ হাজার ৯১৫ ভোট। এরপর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান রহমত আলী। সেবার তিনি এই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। তবে, ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান ইকবাল হোসেন সবুজ। ওই নির্বাচনে তিনি ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩২০ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইকবাল সিদ্দিকী পান ৩৭ হাজার ৭৮৬ ভোট।

গাজীপুর-৪ (কাপাসিয়া আসন)

এটি জাতীয় সংসদের ১৯৬ নম্বর আসন। রাজধানীর কোলঘেঁষা শিল্পনগরী গাজীপুরের গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন গাজীপুর-৪। স্বাধীনতার আগ থেকে এই আসনটি আওয়ামী লীগের নিরাপদ ঘাঁটি। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের জন্মভূমি এই আসনে। স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ছয় বার জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ। আসনটি আওয়ামী লীগের অনেকটা নিরাপদ ও শক্ত ঘাঁটি। 

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে এই আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের আফসার উদ্দীন খান। এরপর ২০০১ ও ২০০৮ সালে এমপি হন তাজউদ্দীনপুত্র আওয়ামী লীগের তানজীম আহমদ সোহেল তাজ। পরবর্তীতে ২০১২ সালে উপ-নির্বাচন, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে এমপি হন তাজউদ্দীনকন্যা আওয়ামী লীগের সিমিন হোসেন রিমি। বর্তমানে এই আসনের সংসদ সদস্য বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন কন্যা সিমিন হোসেন হোসেন রিমি এবারও আওয়ামী লীগ থেকে পেয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী। তিনি হেভিওয়েট প্রার্থী। সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ হিসেবে এলাকায় তার রয়েছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা।

তবে, এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের ভাগ্নে কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা শিল্পপতি আলম আহমেদ। মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন কেন্দ্রীয় এ কৃষক লীগ নেতা। এ আসনের সাধারণ ভোটারের কাছে তার একটি সুপরিচিতি রয়েছে। দলীয় কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কাজে তার সম্পৃক্ততা রয়েছে।

জানা গেছে, মনোনয়নপত্র বাছাইকালে ঋণ খেলাপির অভিযোগে এই আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আলম আহমেদের প্রার্থিতা বাতিল করে দেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। পরে তিনি এর বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করলে, ১৩ ডিসেম্বর কমিশন আবেদন খারিজ করে দেয়। পরে আলম তার বৈধতা ও প্রার্থিতা ফিরে পেতে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট রিটটি সরাসরি খারিজ করে দেন। পরে আলম আহমেদ এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেন। ১৯ ডিসেম্বর চেম্বার আদালত স্বতন্ত্র প্রার্থী আলমের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে তাকে প্রতীক বরাদ্দ দিতে ইসিকে নির্দেশ দেন। এই আদেশের ফলে আলম আহমেদ ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনি মাঠে প্রচার চালাচ্ছেন। অপরদিকে, আলম আহমেদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও প্রতীক বরাদ্দ দেওয়ার আদেশ প্রত্যাহার চেয়ে গত মঙ্গলবার চেম্বার আদালতে আবেদন করেন রিমি। বুধবার চেম্বার আদালত তা মঞ্জুর করে আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য ২ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হলে আদালত আলম আহমেদ পক্ষে রায় দেয়।

আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি ও স্বতন্ত্রের আলম আহমেদ ছাড়াও এ আসনে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের (বিএনএফ) মোহাম্মদ সারোয়ার-ই-কায়নাত, বাংলাদেশ কংগ্রেসের আব্দুর রউফ খান, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির মাসুদ চৌধুরী এবং স্বতন্ত্রের সামসুল হকসহ মোট ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৬ জন থাকলেও এরই মধ্যে জাতীয় পার্টির মো. সামসুদ্দিন খান নিজের ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।    

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকেই জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে।

আলম আহমেদ বলেন, উপজেলার ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে শীতলক্ষ্যা নদীর উত্তরপাড়ের ৮টি ইউনিয়নে ৯০ ভাগ ভোট পাব। যে কোনো প্রতিকূলতায় জয় আমারই হবে।

সিমিন হোসেন রিমি বলেন, আমি আশাবাদী, এবারও স্থানীয় জনসাধারণ মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি নৌকা প্রতীকের পক্ষে রায় দেবে। কারণ, আমি জনগণের জন্য কাজে করেছি।

গাজীপুর-৪ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪৭ জন, কেন্দ্র সংখ্যা ১২২টি, বুথ সংখ্যা হলো ৬০৪টি। এখানে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮৭১ ও নারী ভোটার ১ লাখ ৫৫ হাজার ৮৭৬ জন।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ১ লাখ ১০ হাজার ৬৮২ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের তানজীম আহমেদ সোহেল তাজ। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আব্দুল মজিদ মিনু। তিনি পান ৬৪ হাজার ৪৬৬ ভোট। এরপর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান সিমিন হোসেন রিমি। ওই নির্বাচনে তিনি ১ লাখ ১২ হাজার ৮৮৭ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির এম এম আনোয়ার হোসেন পান ৭ হাজার ৮৩৩ ভোট। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান তাজকন্যা সিমিন হোসেন রিমি। ওই নির্বাচনে তিনি ২ লাখ ৩ হাজার ২৫৮ ভোট পেয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহ রিয়াজুল হান্নান পান ১৮ হাজার ৫৮২ ভোট।

গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ আসন)

এটি জাতীয় সংসদের ১৯৮ নম্বর আসন। কালীগঞ্জ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৭টি ইউনিয়ন, গাজীপুর সিটির ৩টি ওয়ার্ড এবং গাজীপুর সদর উপজেলার বাড়িয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও বর্তমান সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুইবারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকির বাবা শহীদ ময়েজউদ্দিন আহমেদের জন্মস্থান এটি। এ আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে জেলায় পরিচিত রয়েছে। এ আসনে মেহের আফরোজ চুমকি আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য। বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এ নির্বাচনি এলাকার ব্যাপক উন্নয়নও করছেন। এবারও তিনি দলের কাছে মনোনয়ন চেয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী হয়েছেন। অন্যদিকে, এ আসনে আওয়ামী লীগের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী সাবেক এমপি, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামান। আর চুমকির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীই হচ্ছেন স্বতন্ত্রের আখতারউজ্জামান।

স্থানীয় আ.লীগ নেতৃবৃন্দ বলছেন চতুর্থ বারের মত নৌকার মাঝি হবেন চুমকি। অন্যদিকে, স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থকরা বলছেন আখতারউজ্জমানই হবেন এবারের এমপি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামান বলেন, বিগত ১১টি বছর আমি জেলা পরিষদে বসে কালীগঞ্জে এমন কোন স্থান নেই যেখানে আমার দেওয়া সহযোগিতায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। তাছাড়া সম্ভাবনার কালীগঞ্জে উন্নয়ন করার অনেক কিছু বাকি আছে, তাই সুযোগ পেলে তা করতে চাই।  

মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে ভালোবেসে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নের সর্বোচ্চ স্থানে নিয়ে গেছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। আগামীতে স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার পথে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে সবাই নিরাপদ, শান্তি ও স্বস্তিতে থাকে, দেশও এগিয়ে যায়। তাই শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে চতুর্থ বারের মতো নৌকায় ভোট দেওয়ার আহ্বান করেন এই নারী নেত্রী। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ জনপদে নৌকার মাঝি হিসেবে স্থানীয়দের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভোটে নির্বাচিত হয়ে উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখবেন বলেও তিনি আশা করেন।

এ আসনে আওয়ামী লীগের মেহের আফরোজ চুমকি ও স্বতন্ত্রের আখতারউজ্জামান ছাড়াও গণফোরামের মো. সোহেল মিয়া, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের মোহাম্মদ তারিকুল ইসলাম, সুপ্রিম পার্টির উর্মি ভাণ্ডারী ও ইসলামী ফ্রন্টের মো. আল আমিন দেওয়ানও স্বতন্ত্রের মোহাম্মদ আমজাদ হোসেন স্বপনসহ মোট ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৭ জন থাকলেও এরই মধ্যে জাতীয় পার্টির ‘লাঙ্গল’ প্রতীকের প্রার্থী এমএম নিয়াজ উদ্দিন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।    

এ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৬১৫ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৬৯ হাজার ৭২, নারী ভোটার সংখ্যা হলো ১ লাখ ৬৪ হাজার ৫৩৯ ও হিজড়া ভোটার ২ জন।

উল্লেখ্য, ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ১ লাখ ২৬ হাজার ২৯৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের মেহের আফরোজ চুমকি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এ কে এম ফজলুল হক মিলন। তিনি পান ৭৫ হাজার ১১৮ ভোট। এরপর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান চুমকি। ওইবার তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান চুমকি। ওই নির্বাচনে তিনি ২ লাখ ৭ হাজার ৬৯৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির এ কে এম ফজলুল হক মিলন পান ২৭ হাজার ৯৭৬ ভোট।

ঢাকা/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়