ঢাকা     শনিবার   ০৬ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ২২ ১৪৩১

কুষ্টিয়ায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় অভিযুক্ত ১৭ জন গ্রেপ্তার 

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৫৫, ১১ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১০:১১, ১১ জানুয়ারি ২০২৪
কুষ্টিয়ায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় অভিযুক্ত ১৭ জন গ্রেপ্তার 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কুষ্টিয়ার চারটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং একটি আসনে নৌকার প্রার্থী বিজয়ী হয়েছেন। ভোটের ফলাফল ঘোষণার পর এ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যাপক সহিংসতা ঘটে। 

চারটি সংসদীয় আসনেই পরাজিত প্রার্থীর সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর, হামলা, মারপিট, অগ্নিসংযোগ ও হুমকি-ধামকির ঘটনা ঘটেছে। হামলা করে প্রায় ১৬ জনকে খম করা হয়েছে। এসব সহিংসতার ঘটনায় বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে। বিভিন্ন উপজেলায় অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামের মৃত জসিম উদ্দিনের ছেলে আব্দুর রশিদ (৫০), একই গ্রামের মৃত আমোদ মন্ডলের ছেলে ছাবেদ আলী মন্ডল (৪৫), শহিদুল বিশ্বাসের ছেলে রিংকু বিশ্বাস (২৫)।

কুমারখালী উপজেলার বাঁশগ্রাম পূর্বপাড়ার মৃত জহির উদ্দিনের ওলিদুর রহমান জোয়ার্দ্দার (৪৪), একই উপজেলার পিতম্বরবশী গ্রামের মৃত আজাহার উদ্দিন শেখের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন (৫০) ও মনিরুজ্জামান (৪৫), আদাবাড়িয়া গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলীর ছেলে আক্তারজ্জামান (৪০), রামদিয়া কাঁঠাল বাগান এলাকার ইলিয়াস মোল্লার ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (১৯), পান্টি গোরস্থানপাড়ার আব্দুল আওয়ালের ছেলে রায়হান (২৫), দক্ষিণ ভবানীপুর গ্রামের মোকাদ্দেস মোল্লার ছেলে আলামত মোল্লা (৩৬), চাপড়া পূর্বপাড়ার এস এম রাশেদুল ফরহাদের ছেলে রাজিব হোসেন (২৭) ও দক্ষিণ মনোহরপুর কালুপাড়া গ্রামের মৃত মনছুর আলী বিশ্বাসের ছেলে আলাউদ্দিন বিশ্বাস (৬০)।

খোকসা উপজেলার উথলী গ্রামের ইউনুছ আলীর ছেলে রুহুল ইসলাম (২৫), পূর্ব গোপালপুর গ্রামের মৃত আকবর আলী সরদারের ছেলে আইয়ুব আলী (৫৮), একই গ্রামের চতুর আলীর ছেলে সবুজ (৩০), চতুর প্রামানিক (৫৫) ও বানাত আলী সরদারের ছেলে হাবিল হোসেন (৩০)।

জানা গেছে, কুষ্টিয়া-৪ আসনে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর কুমারখালী উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ মনোহরপুর উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরার পথে নৌকার সমর্থকরা ট্রাক মার্কার পোলিং এজেন্ট অহিদুল ও সমর্থক তেফাজ্জেল বিশ্বাস, মানিক বিশ্বাস, শুভ ও আব্দুল মজিদসহ বেশ কয়েকজন সমর্থকদের ওপর দেশীয় অস্ত্র দিয়ে হামলা চালায়। এতে গুরুতর আহত হন তারা। তাদের ৫ জনকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় কুমারখালী থানায় মামলা হয়েছে। 

অপরদিকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর জয়ী প্রার্থী আব্দুর রউফের সমর্থকরা নৌকার সমর্থক রাজ্জাক হোসেন (চুকা), উম্মত আলী, জয়নাল, আজিজ, হাফিজের বাড়িতে ও দোকানে হামলা করে। 

রাতে ট্রাকের সমর্থক যদুবয়রা ইউনিয়নের ছাতিয়ান গ্রামের ইসরাইল শেখের প্রায় ৭ শতাংশ জমির পেঁয়াজের চারা কেটে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এছাড়া চাঁদপুর ও চর সাদিপুর ইউনিয়নে ট্রাক ও নৌকা উভয়পক্ষের বেশ কিছু ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। 

কুষ্টিয়া-১ আসনে নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় প্রায় ১০ জন আহত হয়েছেন। এসময় বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন, নির্বাচনী অফিস ও দোকানপাট ভাঙচুর হয়েছে। পরাজিত ঈগল প্রতীকের প্রার্থী নাজমুল হুদা পটলের সমর্থক জগন্নাথপুর গ্রামের আবু হানিফের বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও আগুন দেওয়া হয়। 

ভোটের পরদিন সোমবার সকাল ১০টার দিকে দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দৌলতপুর থানায় মামলা হয়েছে।

এদিকে সোমবার সকালে রেজাউলের সমর্থক একই এলাকার আবু হানিফের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। খবর পেয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা ও পুলিশ সুপার আব্দুর রাকিবসহ প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে যান। এ ব্যাপারে আবু হানিফের ভাই আব্দুর রহিম বাদী হয়ে দৌলতপুর থানায় একটি মামলা করেন।

সোমবার সকালে দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের জগন্নাথপুর মধ্যপাড়ায় পরাজিত নৌকার প্রার্থী সরোয়ার জাহান বাদশার সমর্থক আব্দুল রহিম ফকিরের বসতবাড়িতে হামলা চালায় ও আগুন দেয় নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যের কর্মী-সমর্থকরা। এতে অন্তত ৩ জন রক্তাক্ত জখম হন। গুরুতর আহতাবস্থায় তাদেরকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তুফান ফকিরের অবস্থা অবনতি হলে তাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়।

একই সময় উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিশ্ববাত বাজার এলাকায় নৌকা প্রার্থীর নির্বাচনি অফিস ভাঙচুর করা হয়। 

উপজেলার সোনাইকুন্ডি এলাকায় নৌকার কর্মী শ্রমিকলীগ নেতা মাহি বিশ্বাসের সোনাইকুন্ডি বসতবাড়িতে ইট পাটকেল ছোঁড়া ও নিরাপত্তা প্রাচীর ভাঙচুরের অভিযোগ রয়েছে ট্রাক মার্কার কর্মীদের বিরুদ্ধে।

এদিকে একই উপজেলার ফিলিপনগর ইউনিয়নের শাদীপুরে বাজার এলাকাতেও অন্তত ১০টি দোকানঘরে ভাঙচুর করে নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য রেজাউল হক চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকরা। 

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এ এইচ এম আবদুর রকিব জানান, নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ঘটনায় জড়িত ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।

কাঞ্চন/টিপু

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়