ঢাকা     সোমবার   ০১ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৭ ১৪৩১

যে কারণে হেরেছেন তিনবারের এমপি ইনু

কাঞ্চন কুমার, কুষ্টিয়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৪০, ১২ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৪:৩৪, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪
যে কারণে হেরেছেন তিনবারের এমপি ইনু

হাসানুল হক ইনু। ফাইল ফটো

কুষ্টিয়া-২ (মিরপুর ভেড়ামারা) আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু। তবে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে হেরেছেন তিনি। তার এই পরাজয় নানা মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। 

কুষ্টিয়া-২ আসনে হাসানুল হক ইনুকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কামারুল আরেফিন। ট্রাক প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে তিনি ১ লাখ ১৫ হাজার ৭৯৯ ভোট পেয়েছেন। ইনু নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৯২ হাজার ৪৪৫ ভোট।

পরাজয়ের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলেছেন। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর রাখেন না ইনু। উল্টো নির্যাতন, নিপীড়ন, অপমান, অবহেলা ও সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেন। ফলে দল থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের সুযোগ দিলে হাওয়া ঘুরে যায়। মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বড় একটি অংশ মিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামারুল আরেফিনকে স্বতন্ত্র প্রার্থী করেন।

মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হালিম বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। গত ১৫ বছরে আমরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হয়েছি। সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছি। গত পাঁচ বছরে ৫ বারও আমার খোঁজ নেননি ইনু। তার সঙ্গে আমার কথাও হয়নি। আমি যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের সভাপতি হয়েছি, সেখানে অনুদান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

এসব কারণেই মিরপুর ও ভেড়ামারা উপজেলার নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগ থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কামারুল আরেফিনকে নির্বাচনে দাঁড় করানোর সিদ্ধান্ত নেয় বলে জানান তিনি। ইনুর ১৫ বছরের নির্যাতন-নিপীড়নের ফসল হিসেবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয় বলেও দাবি করেন আবদুল হালিম।

তিনি আরো বলেন, উনি (ইনু) শুধু নৌকা প্রতীক নিয়ে এসে এমপি হন, পরবর্তীতে জাসদ হয়ে যান। এ কারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও এলাকার মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। সেই ক্ষোভের প্রতিফলন ঘটেছে এই নির্বাচনে। নৌকার বৈঠা মারি আমরা, মিরপুর ও ভেড়ামারায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব আছে। সেটা আমরা দেখিয়ে দিয়েছি। 

আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা জানান, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভোটে ইনু তিনবার এমপি হয়েছেন। এমপি হওয়ার পর তিনি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভুলে যান। নির্যাতন ও অবহেলা করেন। সেই ক্ষোভে ভেড়ামারা-মিরপুরের আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা একাট্টা হয়ে কামারুলের ট্রাক প্রতীকের পক্ষে নির্বািচন করেছেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কামারুলের সঙ্গে মিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হালিম, ভেড়ামার‌া উপ‌জেলা আওয়ামী লী‌গের সভাপ‌তি র‌ফিকুল আলম চুন্নু, সাধারণ সম্পাদক সামিউল ইসলাম সানা ও উপজেলা চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মিঠুর মতো শীর্ষ নেতারা ছিলেন। 

এ বিষয়ে জানতে কুষ্টিয়া জেলা জাসদের সভাপতি গোলাম মহসিন, মিরপুর উপজেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক আহম্মদ আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক আফতাব উদ্দিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেননি।

হাসানুল হক ইনু বলেন, আমি ১৫ বছর এই অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে হাঁটছি-চলছি। আমি আমার সাধ্যমতো এই এলাকার মানুষের পাশে থেকে উন্নয়ন করেছি, শান্তির পথ তৈরি করেছি। সবাই খুশি হবে আমি তা মনে করি না।

গত ১৫ বছরে অনিয়ম, দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, ঘুষ বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য করেননি বলে দাবি করেন জাসদ সভাপতি।   

উল্লেখ্য এ আসনে হাসানুল হক ইনু ১৯৯১-২০০১ সাল পর্যন্ত জাসদের দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পরাজিত হন। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে আওয়ামী লীগের শরিক হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে জয়ী হন। কিন্তু এবার ইনুকে চ্যালেঞ্জ করে মিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পদ থেকে কামারুল আরেফিন গত ২৮ নভেম্বর পদত্যাগ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেন। দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করেন এবং এমপি নির্বাচিত হন।

কেআই

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়