ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

দুই ভারতীয়র লাশ নিয়ে বিপাকে হাসপাতাল 

শরীয়তপুর সংবাদদাতা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১২ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ২১:৩২, ১২ জানুয়ারি ২০২৪
দুই ভারতীয়র লাশ নিয়ে বিপাকে হাসপাতাল 

দীর্ঘদিন ধরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ফ্রিজে সংরক্ষিত আছে ভারতের দুই নাগরিকের লাশ। লাশগুলো হস্তান্তর করতে না পেরে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

অনুপ্রবেশের অভিযোগে পদ্মা সেতু এলাকা থেকে আটকের পর শরীয়তপুর জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন ওই দুই ভারতীয়। তাদের মধ্যে একজন গত বছরের ১৮ জানুয়ারি এবং আরেকজন ১৫ এপ্রিল রাতে মারা যান। লাশ হস্তান্তর ও সৎকার না করতে পারায় দীর্ঘ ১০ মাসে হাসপাতালের ফ্রিজিং বিল এসেছে প্রায় ১০ লাখ টাকা। বিল পেতে জেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

গত বছরের জানুয়ারিতে অনুপ্রবেশের অভিযোগে থানায় করা মামলায় ৪৬ জন ভারতীয় নাগরিক শরীয়তপুর জেলা কারাগারে বন্দি ছিলেন। তাদের মধ্যে সত্যেন্দ্র কুমার গত ১৮ জানুয়ারি কারাগারে মারা যান। ১৫ এপ্রিল রাতে বাবুল সিং আরেক বন্দি অসুস্থ হয়ে পড়েন। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর পর থেকেই তাদের লাশ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ফ্রিজে রাখা হয়েছে। ওই হাসপাতালে হিমঘর নেই। হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় একটি কক্ষে ফ্রিজে চারটি লাশ রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাতে ভারতের দুই নাগরিকের লাশও রাখা হয়েছে। সক্ষমতা কম হওয়ায় ফ্রিজটিতে জেনারেটরের সংযোগ দেওয়া যায়নি। তাই, লোডশেডিংয়ের কারণে লাশে পচন ধরার আশঙ্কা আছে। লাশগুলো দেখভালের জন্য তিনজন কারারক্ষী দিন-রাত পাহারায় থাকেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে মরদেহ দুটি ভারতের হাইকমিশনের মাধ্যমে হস্তান্তর অথবা সৎকারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

শরীয়তপুর জেলা কারাগারে বর্তমানে ১৭ জন ভারতীয় নাগরিক আছেন। তাদের সবাইকে বিভিন্ন সময়ে পদ্মা সেতু এলাকা থেকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৯ জনের মামলা বিচারাধীন। বাকি আটজন কারাভোগ শেষে স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষায় আছেন।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ডোম নুরুল ইসলাম বলেছেন, আমাদের সময় নষ্ট হয়। ডিউটি থাকলেও অসময়ে এসে দেখতে হয়। পচা লাশের সাথে কেউ লাশ রাখতে চায় না।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চারটি লাশ ফ্রিজিং করে রাখার ব্যবস্থা আছে। তার মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দুই ভারতীয়র লাশ এখানে রাখা হয়েছে। আমাদের দেশের অর্থ ব্যয় করে লাশ দুটো রাখা হয়েছে। এর ফলে স্থানীয়রা লাশ সংরক্ষণের সুবিধা নিতে পারছেন না। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন, দ্রুত লাশ দুটি সৎকার বা হস্তান্তর করা হোক।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, দুটি লাশ দীর্ঘদিন ধরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে আছে। এর জন্য প্রচুর বিদ্যুৎ খরচ হয়। এ দুটো লাশ থাকার কারণে অন্যরা এখানে লাশ রাখতে চায় না। জরুরি প্রয়োজন হলেও এখানে লাশ রাখা যায় না। লাশ দুটি রাখার জন্য রুমের ভাড়া দিতে হয়। এ রুমের ভাড়া বহন করে কারা কর্তৃপক্ষ। দেখা গেছে, তাদের বরাদ্দ থাকে না। অনেক সময় ভাড়া বকেয়া পড়ে। লাশ দুটি দ্রুত অপসারণ করলে আমাদের হাসপাতালের জন্য মঙ্গলজনক হবে।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার মো. নেছার আলম বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত সরকার থেকে লাশ ডিসপোজালের নির্দেশ না পাবো, ততদিন ফ্রিজিং করেই রাখতে হবে। সরকারি যত প্রক্রিয়া আছে, সব শেষ করেই বিদেশিদের লাশ হস্তান্তর করতে হবে। এর বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। সরকারি বিধি-বিধান মেনে ফ্রিজিংয়ের খরচ আমাদের বহন করতে হবে। যেখানে লাশ দুটি আছে, সেটা সরকারি হাসপাতাল। সরকার কীভাবে প্রক্রিয়া  সম্পন্ন করবে, তা বলে দেবে। আমরা সেভাবেই করব। তবুও আমরা চেষ্টা করছি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ অথবা  ঢাকার কোনো হাসপাতালে লাশ রাখার ব্যবস্থা করার। এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরে মাধ্যমে আমরা চিঠি লিখেছি, যাতে ঢাকা মেডিকেল অথবা ঢাকার কোনো হাসপাতালে লাশ দুটি রাখা যায়।

সাইফুল/রফিক

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়