ঢাকা     বুধবার   ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১০ ১৪৩১

স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতিকেই নদভীর হারের কারণ বলছেন নেতাকর্মীরা

রেজাউল করিম, চট্টগ্রাম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৬, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৪:১৪, ১৩ জানুয়ারি ২০২৪
স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতিকেই নদভীর হারের কারণ বলছেন নেতাকর্মীরা

আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী। ফাইল ফটো

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া, লোহাগাড়া) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভীকে বিপুল ভোটে হারিয়ে জয়ী হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেব।

নদভীর হারের কারণ অনুসন্ধানে স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা অভিযোগ করে বলেন, নদভী হেরেছেন স্বজনপ্রীতি আর নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে। তিনি কখনো আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আপন করে নিতে পারেননি। ফলে সুযোগ পেয়ে নেতাকর্মীরাও তাকে প্রত্যাখ্যান করেছে বলে তারা দাবি করেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেবের প্রধান নির্বাচন সমন্বয়কারী ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ডা. আ ম ম মিনহাজ উদ্দিন বলেন, ‘নদভী এই আসন থেকে দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু তিনি কখনো স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আপন করে নিতে পারেননি।’

আরো পড়ুন:

তিনি বলেন, ‘গত দশ বছরে নদভী, তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা মিলে নানা অপকর্ম করেছে। এর মধ্যে, সাতকানিয়া-লোহাগাড়া অবৈধ বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, বিভিন্ন বণিক সমিতির চাঁদা, অবৈধ দখল বাণিজ্য উল্লেখযোগ্য। এছাড়া, সিএনজি ও বাস স্টেশনসহ প্রত্যেক সেক্টরে তার অনুসারীরা চাঁদাবাজি করেছে।’

স্থানীয় এই আওয়ামী লীগ নেতা অভিযোগ করে বলেন, ‘নদভীর কাছে এসব ব্যাপারে অভিযোগ নিয়ে গেলেও কখনো ভুক্তভোগীরা সুবিচার পায়নি। ফলে, দিনের পর দিন ভুগতে থাকা মানুষ নদভীকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’

লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খোরশেদ আলম চৌধুরী বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে এই আসনের সংসদ সদস্য নদভী হলেও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক ছিল না। তিনি সুবিধাবাদী নেতাকর্মীদের নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতেন।’

‘নদভী সংসদ সদস্য থাকাকালীন সরকারি টিআর, কাবিখা, সৌর বিদ্যুৎ ও গভীর নলকূপ প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। এই আসনে সকল উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধাভোগী হয়েছেন তার স্বজনরা। তাই নৌকার প্রার্থী হলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নদভীর পক্ষে কাজ করেনি। তারা ছিলো দলের ত্যাগী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেবের পক্ষে। ফলে নদভীর হার ছিল অনিবার্য।’ বলেন খোরশেদ আলম চৌধুরী। 

সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুবউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘নদভী একজন দাম্ভিক ও অহংকারী মানুষ। তার অনুসারীরা দিনের পর দিন সাতকানিয়ায় নানা অপকর্ম করেছে। দুর্নীতি ও লুটপাট করেছে। কিন্তু নদভী এসব ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ফলে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও ভুক্তভোগী সাধারণ মানুষ নদভীকে প্রত্যাখ্যান করেছে।’ 

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বিরোধিতা প্রসঙ্গে নদভীর স্ত্রী ও তার প্রধান নির্বাচন সমন্বয়ক রিজিয়া রেজা চৌধুরী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক পোস্টে লেখেন : ‘গত ১০ বছর নৌকাকে সাধারণ মানুষের প্রতীকে পরিণত করার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন নদভী। কিন্তু ভোটকেন্দ্রে অবৈধ অস্ত্র, কালো টাকা এবং সন্ত্রাসের কারণেই মূলত নৌকার বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনে হারার পরপরই নদভী সস্ত্রীক কাতার চলে গেছেন। তবে, তিনি কী কারণে কাতার গেছেন এ ব্যাপারে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতকানিয়া লোহাগাড়া আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ মোতালেব ৮৫ হাজার ৬২৮ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন। নৌকার প্রার্থী আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী পেয়েছেন ৩৯ হাজার ২৫২ ভোট।

কেআই


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়