ঢাকা     বুধবার   ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ||  আশ্বিন ১০ ১৪৩১

বগুড়ায় জেঁকে বসেছে শীত, উষ্ণতার জন্য গরম পোশাকের দোকানে মানুষ

এনাম আহমেদ, বগুড়া || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:১১, ১৪ জানুয়ারি ২০২৪  
বগুড়ায় জেঁকে বসেছে শীত, উষ্ণতার জন্য গরম পোশাকের দোকানে মানুষ

বগুড়ায় কয়েকদিন ধরে জেঁকে বসেছে শীত। হিমেল বাতাস আর কুয়াশায় জনজীবন অনেকটাই থমকে গেছে। এমন অবস্থায় ঠান্ডা থেকে বাঁচতে উষ্ণতার জন্য গরম পোশাকের দিকে ছুটছে মানুষ। গত কয়দিন ধরেই বগুড়া শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে সব ধরনের শীতের পোশাকের দোকানে মানুষে গিজ গিজ করছে। সরেজমিনে শহর ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।  

বগুড়া শহরের হকার্স মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দোকানে কম দামে বিভিন্ন ধরনের শীতবস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে জ্যাকেট, সোয়েটার, পারকার, চাদর বেশি বিক্রি করছেন তারা। যে কারণে ক্রেতার সংখ্যা বেশি। শীতের পোশাকগুলো বিদেশ থেকে বেল আকারে আসে। আবার দেশের অনেক গার্মেন্টস থেকে স্বল্পমূল্যে গরম পোশাক নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। স্বল্পমূল্য হওয়ায় নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চমধ্যবিত্ত ক্রেতাদের চাহিদা থাকে এসব কাপড়ের প্রতি।

শহরের সাতমাথায় ফুটপাতের ধারে জ্যাকেট নিয়ে বসেছেন তরুণ ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম। নারায়ণগঞ্জ থেকে শীতের পোশাক এনেছেন তিনি। প্রতি পিস ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। প্রতিদিন ১০০ পিসের বেশি বিক্রি হচ্ছে তার। আব্দুর রহিমের মতো আরও অন্তত ৩০ জন শীতের জ্যাকেট, টুপি, সোয়েটার নিয়ে ব্যবসা করছেন সাতমাথা এলাকায়।

আরো পড়ুন:

শীত পোশাকের ব্যবসায়ী নওশের আলী বলেন, সৈয়দপুর থেকে পোশাক নিয়ে আসা হয়েছে। প্রতি পিস ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিসে ১০ থেকে ২০ টাকা লাভে পণ্য ছেড়ে দেন। এতে দিনে ১০০ থেকে ১৫০ পিস করে বিক্রি হয়।

গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর থেকে বগুড়ায় আসা শামসুল ইসলাম বলেন, তিনি ব্যবসায়িক কাজে বগুড়া এসেছিলেন। এই সুযোগে প্রয়োজনীয় কেনাকাটাও করে নিয়েছেন তিনি। ভাতিজার জন্য দুটো সোয়েটার কিনেছেন তিনি।

রেলওয়ে হকার্স মার্কেটে শীতের পোশাক কিনছিলেন বিউটি আকতার। তিনি বলেন, শীতের পোশাক তো পর্যাপ্ত আছে। তবে এখন কুয়াশা পড়েছে তাই। মাথায় বাধার জন্য কিছু পাই কিনা দেখতে এসেছিলাম। পেয়েছি। মেয়ের জন্য শুধু নিয়েছি।

গাবতলী উপজেলা থেকে আসা অতীন্দ্র রায় বর্মন বলেন, এবার তো শীত অনেক বেশি। মোটা কাপড় ছাড়া হবে না। এ মার্কেটগুলোয় একটু কম দামে পাওয়া যায় বলে আসা। বাচ্চার জন্য কাপড় নেওয়া হয়েছে। নিজেদের জন্য এখনো শীতের পোশাক নেওয়া হয়নি।

মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, এখন বিদেশ থেকে আসা কাপড়ের বেলের দাম বেড়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার প্রতি বেলে তাদের ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা বাড়তি খরচ করতে হয়েছে। কিন্তু কাপড়ের দাম বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে শীত দীর্ঘস্থায়ী হলে নিজেদের খরচ পুষিয়ে নিতে পারবেন বলে আশাবাদী তারা।

মার্কেটের ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বিদ্যুৎ বলেন, এবার খুব কম টাকা বিনিয়োগ করা হয়েছে। কারণ শীত এখন বেশি থাকে না। আগে রেল লাইনের ওপর ব্যবসায়ীরা বসতো। তখন জমজমাট অবস্থা ছিল এখন সেটি বন্ধ হয়ে হকার্স মার্কেট ছড়িয়ে পড়েছে। এ জন্য ক্রেতারও কিছুটা সংকট থাকে।

বগুড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাসেন আলী রেলওয়ে (কর্মচারী) কল্যাণ ট্রাস্ট সুপার মার্কেটের গার্মেন্ট পল্লী ব্যবসায়ী মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রফিকুল ইসলাম বলেন, মার্কেটে অন্তত ২০০টি শীতের পোশাকের দোকান রয়েছে। দোকানগুলোয় প্রতিদিন গড়ে দেড় কোটি টাকার বেচাকেনা করছেন ব্যবসায়ীরা। শীতের জন্য ব্যবসায়ীরা যা মাল উঠিয়েছিলেন তার মধ্যে অধিকাংশদের মাল প্রায় শেষ। 

তিনি আরও বলেন, আমার নিজের প্রায় এক কোটি টাকার মাল বিক্রি হয়ে গেছে। এখন নতুন মাল তোলা হয়েছে।

গরম পোশাকের ব্যবসার পরিস্থিতি নিয়ে রফিকুল ইসলাম বলেন, মার্কেটের নতুন কাপড়গুলো খুব স্বল্প লাভে আমরা বিক্রি করছি। আর সেকেন্ডহ্যান্ড কাপড় যেগুলো বিদেশ থেকে আসছে, সেই বেলগুলোয় ২ থেকে ৫ হাজার টাকা দাম বেড়েছে। ডলারের দাম বাড়ায় এই বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের। তবে, বর্তমান অবস্থায় মার্কেটের প্রতি ব্যবসায়ী দিনে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকার গরম পোশাক বিক্রি করছেন।

বগুড়া আবহাওয়া দপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানিয়েছেন, আজ রোববার বগুড়ার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল ছিল ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী কয়েকদিন এই হারে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়বে। কিন্তু বুধবার-বৃহস্পতিবার একটু বৃষ্টির আভাস রয়েছে। বৃষ্টিপাত হলে আগামী সপ্তাহে তাপমাত্রা আরও কমে আসবে।

এনাম/মাসুদ

সম্পর্কিত বিষয়:


সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়