ঢাকা     বুধবার   ০৩ জুলাই ২০২৪ ||  আষাঢ় ১৯ ১৪৩১

গৃহবধূর মৃত্যু, স্বজনদের দাবি ‘হত্যা’

সাভার (ঢাকা) প্রতিনিধি  || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৫৫, ১৫ জানুয়ারি ২০২৪   আপডেট: ১৬:০৪, ১৭ জানুয়ারি ২০২৪
গৃহবধূর মৃত্যু, স্বজনদের দাবি ‘হত্যা’

ঢাকার নবাবগঞ্জে নাদিয়া ইসলাম (২৮) নামে এক গৃহবধূ গলায় ফাঁস নিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন বলে জানিয়েছেন তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন। তবে মৃতের স্বজনদের দাবি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ বলছে, শ্বশুরবাড়ির লোকজন ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার কথা জানিয়েছে। তবে পুলিশ যাওয়ার আগেই তারা নিজেরাই মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামিয়ে আনেন।

রোববার (১৪ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার জয়কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের ঘোষাইল গ্রাম এলাকা থেকে নাদিয়ার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওইদিন ভোররাতে তিনি মারা যান বলে জানিয়েছেন শ্বশুরবাড়ির লোকজন।

মৃত নাদিয়া ইসলাম ওই এলাকার মো. আলী খানের স্ত্রী। তার বাবার বাড়ি ঢাকার সাভারে। তিনি দুই সন্তানের জননী ছিলেন।

মৃতের ভাই ফাহাদ হায়দার বলেন, শনিবার ভোররাত সাড়ে ৪টার দিকে ভগ্নিপতি মো. আলী খান ফোন করে জানান, আমার বোন ঘোষাইল গ্রামের বাড়িতে ফাঁস নিয়ে মারা গেছেন। ঘটনার সময় ভগ্নিপতি ঢাকায় ছিলেন বলে দাবি করেছেন। আমরা তৎক্ষণাৎ বোনের শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশে রওনা দিই। সকালে সাড়ে ৭টার দিকে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখি, ভগ্নিপতি আগে থেকেই সেখানে উপস্থিত। তখন দেখি বোনের লাশ বিছানায় শোয়ানো, পা দুটো ঝুলে আছে। পাশে একটি ছেড়া ওড়না ছিল।

এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে মৃতের পরিবার।

মৃতের ভাসুর বাচ্চু খান বলেন, ওর মনে মনে কী ছিল আমরা বলতে পারব না। তিন-চার দিন আগে আমার স্ত্রীকে বলছে, ‘ভাবি আমার কিছু হয়ে গেলে ছেলে-মেয়েকে আপনি দেইখেন।’ সে একটু গম্ভীর মনের মানুষ ছিল। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কও খারাপ ছিল না। ঘটনার সময় আমার ভাই ঢাকায় ছিল। আগের দিন বাড়ি থেকে গেছে।

তিনি আরও বলেন, ঘরে আলো জ্বালানো ছিল। আমার ভাতিজা ঘুম ভেঙে উঠে মা-কে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে চিৎকার দেয়। সে-ই (মৃতের ছেলে) দরজা খুলে দেয়। তখন আমরা তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পাই। দ্রুত একটা কাস্তে এনে ওড়নার ফাঁস কেটে তাকে নামিয়ে আনি। ডাক্তারও কল করি। ডাক্তার এসে জানায়, মারা গেছে। আমরা ভেবেছি, কেবলই হয়ত ফাঁস নিয়েছে, তাই দ্রুত নামাই।

নাদিয়ার স্বামী মো. আলী ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তার ভাষ্য, আমাদের সম্পর্ক খুব ভালো ছিল। কী হইছে, কী বলব? আমি তো কোনও দোষ দেখি না। ঘটনার সময় ঢাকায় ছিলাম। ফোনে ভাই-ভাবির কাছে খবর পেয়ে ঢাকা থেকে চলে আসি।

বাড়ি ফিরে স্ত্রীকে কীভাবে পেয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, চিকিৎসা করানোর জন্য নামানো হয়েছিল। ডাক্তার ডাকা হয়েছিল। তাকে বাঁচানো যায় কি-না।

ঝুলন্ত অবস্থা থেকে নামানোর সময় স্ত্রী জীবিত ছিলেন কি-না প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, না জীবিত ছিলেন না। নামিয়ে দেখে উনি নেই। সুস্থভাবে সকালে (শনিবার) নাশতা-চা খাওয়ায় দিছে। আমি ঢাকায় গেছি।

বাড়ি থেকে ঢাকায় আসা-যাওয়া করে অফিস করেন কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার আসি। শুক্রবার থাকি, শনিবার চলে যাই।

এ বিষয়ে নবাবগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. মোস্তফা কামাল বলেন, আমরা গিয়ে মরদেহ ঝুলন্ত অবস্থায় পাইনি। মৃতের দেবর-ভাসুর ও প্রতিবেশীরা নামিয়েছে। গলায় ফাঁস নেওয়ার চিহ্ন ছিল। এ ছাড়া, কোনও চিহ্ন দেখিনি। আপাতত মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি। ময়না তদন্তের জন্য মরদেহ ঢাকার মিটফোর্ড হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করেছে।

সাব্বির/এনএইচ

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়